• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

একটি ব্যতিক্রমী ‘আন্দোলন’-এর গল্প

  ফিচার ডেস্ক

১৫ মে ২০২০, ২১:৫৪
একটি ব্যতিক্রমী ‘আন্দোলন’-এর গল্প
একটি ব্যতিক্রমী ‘আন্দোলন’-এর গল্প

‘সাল ২০১৫। কোনো এক কাজে একদিন কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে গিয়ে বেশ কিছু জায়গায় বানান ভুল আমার চোখে পড়লো। এমনকি কলেজের নামটাও একেক জায়গায় একেক রকম বানানে লেখা। ব্যাপারটা আমাকে ভীষণ পীড়া দিলো। ওই মুহূর্তেই সিদ্ধান্ত নিলাম যে বানান নিয়ে কিছু একটা করতে হবে।’

কথাগুলো বলছিলেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে সম্প্রতি তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠা শুদ্ধ ভাষা চর্চার প্ল্যাটফর্ম ‘বানান আন্দোলন’ এর উদ্যোক্তা ও প্রধান নির্বাহী কথাসাহিত্যিক ওয়াহেদ সবুজ।

বাংলা ভাষার সহস্র বছরের ইতিহাসে এ ভাষাকে গড়ে তোলার, সমৃদ্ধ করে তোলার অনেক প্রচেষ্টার গল্প আমাদের জানা। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ থেকে মুনীর চৌধুরী- বাংলা ভাষাকে ভালোবেসে এগিয়ে নিয়ে যেতে, বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে ভূমিকা রেখেছেন আমাদের দিকপাল সব লেখক-গবেষকেরা। কিন্তু এতকিছুর পরেও, বাংলা ভাষাকে ভালোবেসে আমাদের এত এত ত্যাগ, এত এত সংগ্রামের পরেও আমরা কি আমাদের এ ভাষাকে যথাযোগ্য মর্যাদা অধিষ্ঠিত করতে পারছি? অন্তত নিজেদের ব্যক্তিগত পর্যায় থেকেও কি ভাষার ব্যবহারে আমরা যথেষ্ট সচেতন হতে পেরেছি? উত্তরটি নিঃসন্দেহে- ‘না’।

বাংলাদেশ-ভারত মিলিয়ে অনেক পণ্ডিত ব্যক্তিই মনে করেন, বাংলা ভাষা হয়তো একসময় ভারত থেকে হারিয়ে যাবে এবং শেষমেশ বাংলাদেশেই বেঁচে থাকবে। যদি সেটাই হয়, তাহলে এ ভাষার গন্তব্য কোথায়? যদি এ দায়িত্ব আমাদের ওপরেই বর্তায়, তাহলে সেটা নিশ্চিতে আমাদের তৎপরতা কোথায়? দৈনন্দিন ভাষার ব্যবহারে বাংলা-ইংরেজি-হিন্দির মিশ্রণে এক অদ্ভুত ধরনের ভাষাচর্চার ব্যাপার তো আছেই, বাংলায় কিছু লিখতে গেলে শত শত বানান ভুলের অভ্যাসও আমাদের নিতান্ত কম নয়। এমন পরিস্থিতিতে ভাষার শুদ্ধ চর্চাকে এগিয়ে নেয়াটা অত্যন্ত জরুরি বৈ কি।

আমাদের দেশে বাংলা ভাষার পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে বাংলা একাডেমি। যদিও যথেষ্ট নয়, তবু ভাষার শুদ্ধ ব্যবহার ও বানানের শুদ্ধ চর্চার ব্যাপারে নানান সময়ে বাংলা একাডেমির নানবিধ প্রচেষ্টা প্রশংসার দাবি রাখে। কিন্তু অত্যন্ত বিস্ময়ের সাথে আমরা লক্ষ্য করছি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনেকে তাদের কথাও মানতে চান না। সুতরাং একদিকে ভাষা ব্যবহারে যেমন রয়েছে সাধারণ মানুষের অসচেতনতা, অপরদিকে শুদ্ধ ভাষাচর্চা নিশ্চিতে একক হাতে বাংলা একাডেমির পক্ষে ইতিবাচক ফলাফল আনয়নও বেশ কঠিন।

এই যখন অবস্থা, এমনই এক সময়ে, বছর পাঁচেক আগে বাংলা ভাষায় শুদ্ধতার চর্চা নিশ্চিতে কাজ শুরু করে ফেইসবুক গ্রুপ ‘বানান আন্দোলন’। তাদের শ্লোগান- ‘শুদ্ধ ভাষা চর্চার আন্দোলন’। সাম্প্রতিককালে বানান আন্দোলন এর কার্যক্রম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ এসে ভিড় জমাচ্ছে এখানে। সবার একটাই লক্ষ্য- বাংলা বানান ও ভাষার শুদ্ধ ব্যবহারের বিষয়গুলো ভালোভাবে ঝালিয়ে নেয়া।

বানান আন্দোলন-এ যুক্ত হওয়া বিষয়ে সাখাওয়াত হোসেন সনেট নামে একজন তার নিজস্ব ফেইসবুক প্রোফাইলে লিখেছেন, শুদ্ধ বাংলা বানান শেখার জন্য ‘বানান আন্দোলন’-এ যোগ দিয়েছি। অনেক বেশি উপকার হচ্ছে। প্রতিদিনই শুদ্ধ বাংলা বানান শিখতে পারছি এবং যেসব বানান নিয়ে সন্দেহ থাকে, পোস্টের মাধ্যমে জিজ্ঞেস করে জেনেও নিতে পারছি।

লেখক ফারজানা ববি ‘বানান আন্দোলন’ বিষয়ে এক স্থানে লিখেছেন, প্রথমবারের মতো কোনো ফেইসবুক গ্রুপে এতটা একটিভ আছি আমি। অনেক কিছু শিখতে পারছি।

পরপর ১৩ বার রেঞ্জ ডিআইজি রাজশাহী কর্তৃক শ্রেষ্ঠ অফিসার হিসেবে পুরস্কারপ্রাপ্ত বাংলাদেশ পুলিশের এএসপি লেখক মো: শহিদুল্লাহ লিখেছেন, বাংলা লিখতে গিয়ে আমাদের হরহামেশাই নানান ধরনের ভুল হয়ে থাকে। পড়াশোনার পাট চুকিয়ে আসার পর এখন এগুলো শুদ্ধ করে নেয়ার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ এতদিন আমাদের হাতে ছিল না। সে সুযোগটা করে দিয়েছে ‘বানান আন্দোলন’। তাদেরকে অনেক অনেক ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা ও শুভ কামনা জানাই।’

শুদ্ধ ভাষা চর্চার এ আন্দোলনকে কার্যকরি করে তুলতে ‘বানান আন্দোলন’ প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের নতুন নতুন উপায় খুঁজে বের করছে। এরই একটি দৃষ্টান্ত রচিত হলো বৃহস্পতিবার (১৪ মে)। আগের দিন বুধবার সন্ধ্যায় ঘোষণা দেয়া হয়, আগের চৌদ্দ দিনে গ্রুপে প্রকাশিত পোস্টগুলোর ওপর আয়োজন করা হবে শুদ্ধ বানানের প্রতিযোগিতা ‘আ মরি বাংলা ভাষা’। ফ্রি অনলাইন রেজিস্ট্রেশনের সময় বেঁধে দেয়া হয় পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত। ঘোষণার পর মাত্র ১৫ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১ হাজার ৫১৭ জন মানুষ এতে রেজিস্ট্রেশন করেন। রেজিস্ট্রেশন থেকে শুরু করে ফলাফল পর্যন্ত সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয় ডিজিটাল উপায়ে।পূর্বনির্ধারিত সময়ে অংশগ্রহণকরীদের যার যার ইমেইলে পাঠিয়ে দেয়া হয় প্রশ্নপত্রের ডিজিটাল ভার্শন। ৩০ মিনিট ধার্যকৃত সময়ের এ পরীক্ষাটি শেষ করার সাথে সাথেই অংশগ্রহণকারী সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় তার ফলাফল ও সঠিক উত্তরগুলো জানতে পারেন।

এ প্রক্রিয়াটির বিষয়ে বানান আন্দোলন এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও আইটি-প্রধান রেজবুল ইসলাম বলেন, এ কার্যক্রমে আমরা হাতে থাকা প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারটি নিশ্চিত করেছি। পরীক্ষার্থী চাইলেও ৩০ মিনিটের বেশি সময় নেয়ার সুযোগ ছিল না। পরীক্ষা শেষ করার সাথে সাথেই স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় সকল পরীক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর আমাদের ডাটাবেইজে এসে জমা হয়।’

বানান আন্দোলন এর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়াহেদ সবুজ বলেন, বানান আন্দোলন এর মাধ্যমে এ মুহূর্তে পৃথিবীর ৩৮ দেশের বাংলা ভাষাভাষী মানুষ সেবা পাচ্ছেন, বাংলা ভাষার শুদ্ধ ব্যবহার সম্পর্কে জানতে ও শিখতে পারছেন। সামনের দিনগুলোতে যাতে এ কার্যক্রমের মাধ্যমে সারা পৃথিবীর বাংলা ভাষাভাষী সকল মানুষ উপকৃত হতে পারেন, সেটি মাথায় রেখে অতিসত্বর বৃহত্তর একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড