• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মায়েরা যেন এমন না হয়

  মোশারফ হোসাইন

১০ মে ২০২০, ১৭:৩০
মা
প্রতীকী ছবি

প্রত্যেকটা সন্তানের জীবন শুরু হয় বিশ্বাস নিয়ে, যার মূল ভিত্তিই বিশ্বাস। একটা শিশু যখন প্রথম জন্মায় হাসপাতালে অনেক শিশুর মধ্যে নার্স যেই শিশুটাকে মায়ের কোলে তুলে দেয়, মা তাকে পরম বিশ্বাসে নিজের বলে মেনে নেন, মা কখনো ওই নার্সকে জিজ্ঞাসা করেনা এটা আমার সন্তান নয়!। শিশু যখন কোন সন্তান প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেয়, মা কখনো ফেলে দেয়না, অবহেলা করেনা বরং পরম আপন মনে বুকেই টেনে নেয়, প্রত্যেক সন্তান মায়ের কাছে যেমন রাজপুত্র ও রাজ কণ্যার অধিকারী হয়ে জন্মায়, তেমনি প্রতি মা-ই রাজরাণীর অধিকারী।

হাসপাতালেই মা যখন শিশু সন্তানকে বাবার কোলে তুলে দিয়ে বলে এটা আমাদের সন্তান বাবাও পরম বিশ্বাসের সাথে তাকে আঁকড়ে ধরে, আর বাড়ির অন্যরাও তাই করে। শিশু সন্তানটির বয়স বাড়ার সাথে সাথে যখন মা তাকে শেখায় এটা গাছ, এটা পাখি, এটা মাটি, এটা পানি, এটা নাক মুখ চোখ ইত্যাদি। শিশু সন্তানরাও নরম মনের সরল বিশ্বাসে সাথে তাই শিখে। শিশু সন্তান কখনো জিজ্ঞাসা করেনা, এটা গাছ কেন? এটা পাখি কেন? এটা পানি কেন? এটা মাটি বা অন্যকিছু কেন? কখনো কখনো মমতাময়ী মায়ের ভালোবাসা ও সরল বিশ্বাস সময়ের পরিক্রমায় সন্তানের মনে ভয়ঙ্কর অবিশ্বাস ধারণ করে বসে। আর ঝরে পরে শিশুর উজ্জল ভবিষৎও।

বছর খানেক আগের ঘটনা ৯বছর বয়সী সাকিব তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র, কিন্তু তার আর পড়াশোনা করা হবেনা, ঢাকায় গিয়ে কাজ করবে তাই ইউনিয়ন পরিষদের এসেছেল জন্ম নিবন্ধন নিতে, ঢাকায় গিয়ে কাজ করবে এখন তার নিজের পথ নিজে খুজে নিবে। জন্ম নিবন্ধনে মায়ের নামের শূণ্যস্থানে পূরণ করতে যখন মায়ের নাম কি! জিজ্ঞাসা করা হলো তখন সাকিব অঝড়ে কাদঁকে লাগলো, আর বলতে লাগলো ‘মা’ বলতে তার কেউ নেই। প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো তার ‘মা’ মারা গিয়েছেন সেজন্য কাদঁছে । তারপর সবাই মিলে ছেলেটির প্রতি মায়া দেখিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করলাম ‘মানুষ চিরদিন বাঁচে না’, ছেলেটির কান্না আরও বাড়তে থাকলো। আমরা তাকে সান্তনা দিয়েও কান্না থামাতে পারছিনা। ছেলেটিও কোন ভাবে তার মায়ের নাম বলতে রাজি নয়, ছেলেটির অদ্ভুত আচরণ দেখে আমরা অনেকটাই বিরক্ত, জানতে পারলাম তার খালু পাশের বাজারে মোদি দোকানদার । তাকে ডেকে আনতে লোক পাঠালাম, তার খালু আসলেন, তার কাছ থেকে জানতে পারলাম এক বছর আগে ৭ বছরের সাকিব আর ৮ বছরের সংসার ফেলে পাড়ার একটা ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়েছে সাকিবের মা, এমনটি বলছিলো ঝিনাইগাতী উপজেলার গৌরীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যেক্তা । সাকিবের জীবনটাও সবার মতো স্বাভাবিক হতে পারতো কিন্তু এখন তার জীবন শূণ্য মরুভূমি, তার পৃথীবিতে সবার মতো সবচেয়ে প্রিয় মানুষ ছিল ‘মা’ এখন সবচেয়ে ঘৃণ্য ব্যক্তি তার ‘মা’।

পথশিশু সুজন বয়স মাত্র ১০ বছর । তার বাবা ‘মা’ কে! জানে না সে। তার স্মৃতিশক্তি বলে সে রেললাইনের ধারেই বড় হচ্ছে তার বাবা-মা ভাইবোন খেলার সাথী বলতে আশেপাশের তার মতো বন্ধুরা। তাদের গল্পও একই সূত্রে গাথা। সুজন এর সাথে কথা হলে, সুজন বলে ; আমার ধারণা আমার বাবা ও মা হয়তো রাস্তারধারে ফেলে গিয়েছে, কারণ তার দেখা এমন অনেকে আছে যাদের রাস্তার ধারে ফেলে রেখে গিয়েছিল। সুজন আরও বলে; আমি তো সব সময় রাস্তার ধারেই ঘুমাই, একদিন খুব ভোরে কুকুরের ঘেউঘেউ ডাকে ঘুম ভাঙে, ঘুমের ঝাপসা চোখে খেয়াল করলাম একদম ছোট একটা শিশুকে (নবজাতক) ডাস্টবিনে ফেলে যাচ্ছে, আমার দেখে খুব কষ্ট লাগলো। মনে হলো হয়তো আমার বাবা মাও আমাকে এভাবেই রাস্তায় ফেলে গেছে, কিন্তু ফেলার যাওয়ার কারণটা কী! কারো কাছে সুজনের জানা হয়নি।

এদিকে শাহীনের মা ও বাবা প্রতিদিন ঝগড়া করতো, শাহীন বলে; প্রায় প্রতি রাতে বাবা মায়ের ঝগড়ার শব্দে আমার ঘুম ভাঙতো। আমি ছোট মানুষ বাবা মাকে কিছু বলতেও পারিনা, আমি তাদের ঝগড়া শুনছিনা ঘুমাচ্ছি সে অভিনয় করে থাকি, সত্যি বলতে সেসময়টা খুব কষ্টকর একটা সময়। যখন পড়তে বসি বাবা২ ‘মা’ কারণ অকারণে ঝগড়া করে। পড়তে বসলে পড়ার মধ্য আর মন থাকেনা, বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে ছিলাম আমি। তাদের ঝগড়ার জেড়ে একসময় বাবা মায়ের বিচ্ছেদ হয়, বিপদে পড়ে যায় আমি। আমি এখন কার কাছে থাকবো? বাবার কাছে? না মায়ের কাছে? তাদের মধ্যে এই নিয়ে বেশ প্রতিযোগিতা চলে, আমি তখন ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র ছিলাম। রাগ করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরি, না এখন বাবার কাছে থাকি, না মায়ের কাছে ; আমি এখন পথে ঘাটেই থাকি। প্রতিটা মায়ের মমতা বদলে যায় সন্তানের ভবিষ্যৎ, মায়েরা যেমন সন্তানদের জন্য সংগ্রাম করে জীবন পাড়ি দিতে পারে তেমন কিছু মায়েরা আবার নিজের স্বার্থের টানে সন্তান নামক পবিত্র ফুলের প্রতি অবিচারও করে থাকে, তবুও দিন শেষে তারা ‘মা’। মায়ের ভালোবাসা, উৎসাহ, অনুপ্রেরণা ও সচেতনতার সাথে পৃথিবী বদলে যাক।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড