• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

করোনা : অসুখী মানুষ, সুখী প্রকৃতি

  সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি

২৫ মার্চ ২০২০, ১৩:২৫
পরিবেশ
এক মাসে পরিবেশের উন্নতির চিত্র (ছবি- সংগৃহীত)

করোনা নামক চোখে না দেখা ভয়াবহ এক ভাইরাস কোণঠাসা করে ফেলেছে গোটা পৃথিবীকে। বহুকাল পর ছুটি নিয়েছে মানুষ। হাত-পা ছড়িয়ে আয়েশ করে ছুটি কাটাচ্ছে তারা, তা নয়। তবে ভীত মানুষকে ছুটিতে পাঠিয়ে খানিকটা নতুনত্বের স্বাদ নিচ্ছে পৃথিবী নামের এই ছোট্ট গোলোকটি।

প্রতিদিন হাজার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করছেন। ঘর থেকে বেরোতে ভয় পাচ্ছেন মানুষ। এতো গেল অসুখী মানুষের কথা। আর সুখী পৃথিবী? কেমন হয়েছে তার চেহারা এই সময়ে? চলুন, দেখে নেওয়া যাক-

চীন ও হং কং

চীনে করোনা উঁকি মারার পরই নিজেদের সমস্ত কারখানা আর মানুষের চলাচল বন্ধ করে দিয়ে ঘরে থাকার নির্দেশ দেয় দেশটির প্রশাসন। সোজা ভাষায় যাকে বলে 'লক ডাউন'। ফলাফল হিসেবে ফেব্রুয়ারিতেই চিনের ইকোলজি এন্ড এনভায়রোমেন্ট মিনিস্ট্রি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চীনের বাতাসের মান ২১ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার কথা জানায়। তবে চীন কিন্তু একা ছিল না এই গল্পে। একটু একটু করে এই হিসাবে যোগ দেয় বাকি পৃথিবীও।

সম্প্রতি নাসা এবং ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি উপগ্রহ থেকে তোলা পৃথিবীর এক অসম্ভব সুন্দর ছবি তুলে ধরেন। জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারির ভেতরে তুলনা করে দেখান তারা যে, যানবাহন, কারখানা আর অন্যান্য পাওয়ার হাউজের বিষাক্ত দূষণ এড়িয়ে একমাসের মধ্যেই চীনের আকাশের বিষাক্ত গ্যাসগুলো কেমন প্রায় উধাও হয়ে গিয়েছে। এর পেছনে অবশ্য বড় ভূমিকা রেখেছিল কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণের ভয়। চীন ছাড়াও গোটা পৃথিবীর ক্ষেত্রে ৩ ফেব্রুয়ারি- ১ মার্চের ভেতরে কার্বন ডাই-অক্সাইডের কারণে তৈরি হওয়া জীবাশ্ম জ্বালানীর পরিমাণ প্রায় ২৫ শতাংশ কমে এসেছে।

এটা বলতে দ্বিধা নেই যে, বিশ্বের দূষণে যে কয়টি দেশ সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে, তাদের মধ্যে চীন একাই ৩০ শতাংশ অংশ জুড়ে রয়েছে। তাই খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও তাদের এই থেমে যাওয়া পৃথিবীকে যেন একটু প্রাণভরে শ্বাস নিতে সাহায্য করেছে। প্রায় ২০০ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অক্সাইড থেকে নিস্তার পেয়েছে পৃথিবী। যেদিক দিয়ে দেখতে গেলে, এটি যুক্তরাজ্যের বাৎসরিক কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপাদনের প্রায় অর্ধেক।

শুধু তাই নয়। এই পুরো প্রক্রিয়ার সাথে যুক্ত রয়েছে কয়লা ব্যবহার, তেল এবং স্টিলের উৎপাদন প্রক্রিয়া ও প্রায় ৭০ শতাংশ বিমানের স্থগিত হওয়া। ২০১৮ সালে চীন সবচেয়ে বেশি কয়লা ব্যবহার করে। নিজেদের এনার্জির মোট ৫৯ শতাংশ তারা আহরণ করে কয়লা থেকে সেই বছর। এই সবগুলো কাজই পরিবেশকে দূষিত করে। যেটি বর্তমানে অনেকটাই কমে এসেছে ভাইরাসের আক্রমণের পরে।

চীন বাদেও হং কং তার সবগুলো শহর অধিকাংশই বন্ধ করে দেওয়ায় এই স্থানের দূষণও এক তৃতীয়াংশ কমে গিয়েছে। হং কং-এর বাতাসে নাইট্রোজেন অক্সাইডের পরিমাণ শতকরা ২২ শতাংশ কমে গিয়েছে। কমেছে অন্যান্য বিষাক্ত উপাদানের পরিমাণও। এই শহরটির বেশিরভাগ দূষণের উৎসই ছিল যানবাহন এবং পাওয়ার প্ল্যান্ট। সেগুলোর ব্যবহার কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কমেছে দূষণ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, গত এক যুগে হং কং-এর দূষণ দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। যার ফলাফল হিসেবে আর অনেক কিছুর সঙ্গে অকালজাত শিশুর পরিমাণ এবং শিশু মৃত্যুহারও বছর গড়ে ১,৫০০ জন বেড়ে গিয়েছে। এত এত নেতিবাচক ঘটনাকে এবার পৃথিবী একা হাতেই সামলে নিচ্ছে বোধ করি।

ভেনিস

করোনায় আক্রান্ত স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম ইতালি। সেখানে প্রতিদিন বর্তমানে ৬০০-৭০০ এর বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করছেন। তবে জনগণকে ভুগতে হলেও এই ফাঁকে ইতালির জনপ্রিয় পর্যটন স্থানগুলো এবং ঐতিহ্যবাহী খালগুলোর অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। সেখানে পলি সরে গিয়ে মাছ চলাচল করছে। পরিষ্কার হয়ে উঠেছে পানি।

অন্যান্য

করোনা শুধু ইতালি বা চীনে নয়, আক্রমণ করেছে পুরো পৃথিবীতেই। ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র ইত্যাদি দেশের পর করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বাংলাদেশেও। মানুষের চলাচল, যানবাহনের প্রকোপ, কাজের গতি- কমেছেসবকিছুতেই।

আর হ্যাঁ, এটা বুঝে নেওয়া খুব স্বাভাবিক যে, মানুষ যখন নিজের কাজ এবং উন্নয়ন শিথিল করেছে, প্রকৃতি তখন একটু হাফ ছাড়বেই। খুব বেশি সময় লাগেনি প্রকৃতির নিজের পরিবর্তনকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে। এই মহামারি একটা সময় হয়তো থাকবে না। মানুষ তখনো প্রকৃতির কথা মাথায় রাখবে, কিছুটা স্বস্তি দেবে পৃথিবীকে- এমনটা আশা করাই যায়।

সূত্র- সিএনএন

ওডি/এনএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড