• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

টিকাদানের ব্যাপারে আমাদের কিছু ভুল ধারণা

  মো. সাইফুল ইসলাম

২০ মার্চ ২০২০, ০৯:৩৯
টিকা
ছবি : প্রতীকী

টিকা নিশ্চিতভাবেই রোগ বিস্তার প্রতিরোধ করে আমাদের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করছে। বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান টিকা যে নিরাপদ ও কার্যকর সে বিষয় একমত। এটি আমাদের শরীরে ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

বর্তমানে আমাদের দেশে হাম ও রুবেলার টিকাদান কর্মসূচি চলছে। আমাদের দেশে ১৯৭৯ সাল থেকে জাতীয় টিকাদান কর্মসূচি চালু হয়। টিকা অনেক মহামারি রোগ থেকে মুক্তিও দিয়েছে। আমাদের দেশ পোলিওমুক্ত হয়েছে টিকাদানের কারণেই। এছাড়াও সারা বিশ্বে গুটি বসন্ত নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে টিকার মাধ্যমেই।

বর্তমান সময়ে ছড়ানো করোনা ভাইরাস মোকাবিলায়ও খোঁজা হচ্ছে কার্যকর টিকা ও ওষুধ। হয়তো একসময় টিকা আবিষ্কৃত হবে। তখন করোনাও আর আমাদের আতঙ্কের কারণ হবে না।

টিকার এত উপকারিতা থাকার পরও প্রায় প্রতি বছরই টিকা দেওয়ার পর দেশের কোথাও কোথাও শিশুর মৃত্যু হয়েছে এমন সংবাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে পোলিও টিকা ও ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর পর এই কথা শোনা যায়। এছাড়াও টিকা দেওয়ার পর অসুস্থ হয়ে পড়া, টিকার প্রয়োজন নেই এমন কথাও লোকমুখে শোনা যায়। তবে সেসব কথার সত্যতা এখন জানব।

শিশুদের টিকা দিলে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে

শিশুদের টিকা দিলে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে কথাটি পুরোপুরি সত্য নয়। টিকা সাধারণত শিশুর রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা জন্মানোর পদ্ধতিকে সক্রিয় করে এবং অ্যান্টিবডি উৎপন্ন করে। যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে।

টিকা তৈরির সময় জীবাণু নিষ্ক্রিয় করা হয়। মিশ্রণও পাতলা করে ফেলা হয়। টিকার মাধ্যমে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমন পর্যায়ে বৃদ্ধি করা হয় যে পর্যায়ে পৌঁছালে আর রোগটি ছড়াতে পারবে না।

তবে টিকা প্রদানের পর হালকা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যা কখনই মারাত্মক পর্যায়ে যাবে না ও মৃত্যুর মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটাবে না। সাধারণত হালকা জ্বর আসতে পারে। যা নিজে থেকেই ভাল হয়ে যায়। আবার জল বসন্তের টিকা দিলে ত্বকে কিছু ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। তবে এগুলো ওঠা খারাপ নয়। বরং টিকা যে শরীরে কাজ করছে তা বোঝা যায়।

প্রাকৃতিক উপায়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পাবে

অনেক বাবা-মা শিশুকে টিকা দিতে চান না। যদিও এই সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। যারা টিকা দিতে চান না তাদের অনেকেই আবার মনে করেন প্রাকৃতিকভাবে শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মাবে। কিন্তু তাদের ধারণা সঠিক নয়। কারণ আপনি শিশুকে যে ফলমূল দিবেন সেই ফলমূলও ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের কারণ হতে পারে। তাই স্বাস্থ্যসম্মত খাবার, উন্নত জীবনশৈলী এবং উন্নত পরিবেশে আপনার শিশুকে রাখার পাশাপাশি টিকাও দিবেন। এতে মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগও প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে।

রোগ হলে শিশুই রোগের বিরুদ্ধে লড়বে

টিকাদানের মাধ্যমে জীবাণুর বিরুদ্ধে ঢাল তৈরি করা হয়। যার ফলে রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। তাই রোগ না হলে রোগ কষ্টে ভুগতেও হয় না। যেমন– কোনো শিশুকে যদি জল বসন্তের টিকা দেওয়া হয় তবে তার এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। আবার যাদের টিকা দেওয়া হয়নি তাদের চেয়ে এই শিশুরা বেশি নিরাপদ থাকে।

আরও পড়ুন : এর আগে পৃথিবীর বুকে বিপর্যয় এনেছিল যেসব মহামারি

রোগ নির্মূল হলে আর টিকার দরকার নাই

এটি খুবই সাধারণ একটা ভুল ধারণা। টিকা দেওয়া বন্ধ করে ফেললে হঠাৎ করেই রোগের প্রাদুর্ভাব হতে পারে। তবে বিশ্বব্যাপী নির্মূল হওয়া রোগের ক্ষেত্রে টিকা বন্ধ রাখার কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। তথাপি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মাঝে যাতে রোগটি প্রকাশ না পায় সেজন্যই টিকাদান অব্যাহত রাখা উচিত।

বয়স্কদের টিকার প্রয়োজন নাই

অনেক বয়স্ক ব্যক্তিই টিকার বিষয়ে উদাসীন থাকেন। তারা মনে করেন তাদের টিকার প্রয়োজন নেই। তবে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে থাকা উচিত। এছাড়াও বুস্টার শট নেওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা তা যাচাই করা উচিত। বিশেষ করে টিটেনাস, ডিপথেরিয়া, হেপাটাইটিস, মেনিজাইটিস ইত্যাদির ক্ষেত্রে বুস্টার শট নেওয়া উচিত। এগুলা আবার বিভিন্ন অবস্থা, বয়স এবং স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় দিতে হবে কিনা জানতে হবে। যেমন– কেউ যদি আফ্রিকায় ভ্রমণে যায় তবে তার পীতজ্বর, যক্ষ্মা ইত্যাদি রোগের টিকা নেওয়া উচিত।

এখনো অনেক লোকই টিকার উপকারিতা সম্পর্কে অবগত নন। তাছাড়াও টিকাদানকে নিরুৎসাহিত করতে বিভিন্ন স্থান থেকে টিকা প্রদানের পর মৃত্যুর গুজব ছড়ানো হয়। কিন্তু বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই টিকা আপনার শিশুর শরীরে প্রয়োগ করা হয়। তাই টিকার ব্যাপারে ভয় পাওয়ার কোনোই কারণ নেই।

সূত্র- অনলি মাই হেলথ ডট কম

ওডি/এনএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড