সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
অ্যান্টিস্যোশাল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার মানসিক ব্যাধির একটি শাখা। শুনতে হয়তো মনে হচ্ছে যে, এই ব্যাধির ভুক্তভোগীরা মানুষের সঙ্গে মিশতে পছন্দ করেন না বা সামাজিক মেলামেশা এড়িয়ে চলেন। তবে অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের ব্যাপারটা ঠিক এতটা সহজ নয়। আর তাই এটি সারিয়ে তোলাটাও খুব কঠিন।
এই ডিজঅর্ডারের ভুক্তভোগীরা নিজেরাই মানতে চান না যে, তাদের কোনো সমস্যা রয়েছে। আর যদি মানতেও চান, সেক্ষেত্রে কোনো ওষুধ বা এমন কোনো প্রক্রিয়া নেই যেটি তাদের লক্ষণ, মানসিক চিন্তাধারাকে বদলে দিতে পারে। তারপরেও কোনো ব্যক্তি এবং তার চারপাশের মানুষের জন্য এই ডিজঅর্ডার থেকে মুক্ত থাকা অনেক বেশি প্রয়োজন। তাই চলুন, আজ এই অ্যান্টিসোশ্যাল ডিজঅর্ডার এবং এর থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাব্য উপায়গুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক-
অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার কী?
এটি এমন একটি মানসিক রোগ, যেক্ষেত্রে একজন আক্রান্ত ব্যক্তি চারপাশের আইন, নিয়ম এগুলো না মেনে, নিজের মতো করে অপরাধ করতে বা কোনো মিথ্যাকে সত্যের মতো করে সাজাতে ভালোবাসেন। নৈতিকতার খুব একটা বালাই তাদের ভেতরে থাকে না। রোগীরা এক্ষেত্রে খুব ঠান্ডা মাথায় কোনো একটি অপরাধ করতে পারেন। আর সেই অপরাধের সমস্ত খুঁটিনাটি পরিকল্পনাও করতে পারেন। তাদের ভেতরে এই বোধটাই থাকে না যে, এটি খারাপ কাজ। বরং, নিজেদের এই কাজটি নিয়ে তারা বেশ গর্ব অনুভব করেন। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস এবং নিজেদের অসম্ভব বুদ্ধিমান মনে করার প্রবণতা দেখা যায় এদের মধ্যে।
সাধারণত, খুব ছোটবেলা থেকেই অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার প্রকাশ পায়। এই ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত শিশু অবলীলায় মিথ্যে বলতে পারে বা কোনো খারাপ কাজ করতে পারে। পশুপাখিকে মেরে ফেলাও এই ডিজঅর্ডারেরই একটি অংশ। শিশুদের ভেতরে থাকার এই ডিজঅর্ডারকে 'কন্ডাক্ট ডিজঅর্ডার' বলা হয়।
লক্ষণগুলো কী?
অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের লক্ষণগুলো হলো-
১। মিথ্যা ও সত্যির পার্থক্য না করা ২। সহজেই অন্যদের ধোঁকা দেওয়া বা মিথ্যা বলা ৩। অন্যদের ব্যাপারে শ্রদ্ধা না থাকা, উদাসীন হওয়া ৪। ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য অন্যদের ব্যবহার করা ৫। নেতিবাচক সম্পর্ক রাখা ৬। কোনো কারণ ছাড়াই ঝুঁকি নেওয়া, সন্ত্রাসী কার্যক্রম করা ও আইন না মানা ৭। ব্যর্থতা নিয়ে রেগে যাওয়া
এছাড়াও, ১৫ বছর বয়সের আগে-
১। পশুপাখির প্রতি হিংসা ২। কোনোকিছু নষ্ট করার ব্যাপারে উৎসাহ ৩। মিথ্যা কথা বলা ৪। আইন অমান্য করা ৫। চুরি করা ইত্যাদি লক্ষণগুলোও তাদের মধ্যে দেখা যায়।
কেন এমনটা হয়?
অ্যান্টিসোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারে ভুগছেন এমন একজন মানুষের চিন্তার প্রক্রিয়াই ভিন্ন হয়। মানুষ যেভাবে সবকিছুকে দেখছে তারা সেভাবে দেখতে পায় না। পরিবেশ, জীবনের কোনো একটি ঘটনা বা মস্তিষ্ক গড়ে ওঠার সময় কোন ভিন্নতা এই সমস্যাটি একজন মানুষের মধ্যে তৈরি করতে পারে। বংশগত এবং পরিবেশের দ্বারা তৈরি- দুই রকমের রোগীই এক্ষেত্রে পাওয়া যায়।
এই সমস্যার সমাধান কী?
এখন পর্যন্ত মানসিক এই ব্যাধির কোনো নিশ্চিত সমাধান পাওয়া যায়নি। ছোটবেলায় এমন সমস্যা দেখা দিলে সঠিক শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে কিছুটা হলেও এই ডিজঅর্ডার দূর করা সম্ভব। অন্যভাবে বলতে গেলে, ওষুধ যদিও এই সমস্যার সমাধান আনতে পারে না, তবে কথার মাধ্যমে বা সাইকোথেরাপির মাধ্যমে মানসিক এই সমস্যাকে কিছুটা হলেও কমানো সম্ভব। চিকিৎসকেরা এমন রোগীকে সারিয়ে তোলার জন্য অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টও ব্যবহার করেন।
তবে হ্যাঁ, একজন অ্যান্টিস্যোশাল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডারের ভুক্তভোগী কিন্তু শুধু নির্দিষ্ট একটি কারণেই এমন হয়ে পড়েন না। এর সাথে জুড়ে থাকে আরও অনেক ঘটনা। এই ব্যাধিকে সারিয়ে তোলা সম্পূর্ণভাবে সম্ভব না হলেও রোগীর ট্রিগার পয়েন্ট এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে অ্যান্টিস্যোশাল ডিজঅর্ডার সারিয়ে তোলার চেষ্টা করেন চিকিৎসকেরা। সাধারণত, এই সমস্যার ভুক্তভোগীদের ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবন অসম্ভব কষ্টকর হয়।
তাই, আপনার কাছের মানুষটি যদি মানসিক এই সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে তাকে সাহায্য করুন। তার পাশে থাকুন। হয়তো আপনার জন্যই সে নিজ থেকেই বদলে যেতে পারে। হয়ে উঠতে পারে সুস্থ ও স্বাভাবিক একজন মানুষ।
সূত্র- এভরিডেহেলথ
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড