• বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

স্বপ্ন থেকে সফল উদ্যোক্তা

  হাসান বিশ্বাস

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৬:২৫
ঢাবি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চকলেট বাজ এর এক উদ্যোক্তা (ছবি : সম্পাদিত)

একটা সময় মানুষ চাকরির পেছনে ছুটতেন। তবে দিন দিন মানুষের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এমনই দুই সফল উদ্যোক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ আজিমুল হক এবং মাহবুব হাবিব।

২০১৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন স্বপ্নবাজ মুহাম্মদ আজিমুল হক এবং মাহবুব হাবিব। ছোটবেলা থেকেই তাদের স্বপ্ন ছিলো উদ্যোক্তা হবেন। বন্ধুরা যখন টিউশনির জন্য ঘুরাঘুরি করতেন, তারা তখন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তায় নিমগ্ন ছিলেন। কিন্তু সে সময় তাদের বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় বিনিয়োগ। সার্বিক দিক বিবেচনায় তারা সিদ্ধান্ত নিলেন অনলাইন বিজনেস করবেন। কারণ, এখানে কোনো ধরনের দোকান ভাড়ার চাপ নিতে হয় না।

একদিন বিকেলে আড্ডার ফাঁকে আরও ৩ বন্ধুকে তাদের স্বপ্নের গল্পটা শোনায়। পরে তারাও এই স্বপ্নবাজ দুই তরুণের সঙ্গে যুক্ত হয়। গল্পে গল্পে তারা একদিন জানতে পারেন, বেনাপোল-পেট্রোপোল সীমান্ত বাজারে ভারতের মজাদার চকলেট খুব অল্প মূল্যে পাওয়া যায়। তারপর একদিন হাত খরচের টাকা বাঁচিয়ে পাঁচ বন্ধু মিলে মোট ৩০ হাজার টাকার চকলেট কিনে আনেন।

২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে তাদের হাত ধরে যাত্রা শুরু হয় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চকলেট বাজ’ ফেসবুক পেজের। বন্ধুদের হাসি-ঠাট্টা সহ্য করে অনলাইনে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন চকলেটের প্রচার করতে থাকেন। লক্ষ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে বিনা পরিবহন খরচে মজাদার চকলেট বিক্রি।

তবে অনলাইনে আশানুরূপ সাড়া না পাওয়ায় ২০১৯ সালের শুরুর দিকে হাল ছেড়ে দেয় বাকি ৩ বন্ধু। বন্ধ হয়ে যায় দুই তরুণের স্বপ্নের দোকান ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চকলেট বাজ’। তবে চুপ করে বসে থাকার মানুষ নন তারা।

চক্ষু লজ্জাকে পিছু ফেলে নিয়মিত অফলাইনে কাজ শুরু করেন ‘আজিম ও মাহবুব’। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের। বিভিন্ন বিশেষ দিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পয়েন্টে অস্থায়ী দোকান দিয়ে নিজেদের প্রচার-প্রচারণা চালাতে থাকেন এই দুই যুবক।

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চকলেট বাজ’ এক বছরে পা রাখে। একে একে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৮ হাজার শিক্ষার্থীর কাছে পরিচিত হয়ে ওঠে এই দুই উদ্যোক্তার স্বপ্নের দোকান। যেই বন্ধুরা হাসি-ঠাট্টা করতো এই স্বপ্নের দোকানকে নিয়ে, তারাই হয়ে ওঠে এই ছোট্ট দোকানের অনুপ্রেরণা।

২০২০ সাল। জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চকলেট বাজ’ বেনাপোল-পেট্রোপোল সীমান্ত বাজার থেকে নিয়ে আসে প্রায় দুই লাখ টাকার চকলেট। সরস্বতী পূজার এক দিনেই বিক্রি হয় তাদের ৩০ হাজার টাকার চকলেট। সেখান থেকে লাভ পায় প্রায় ১৫ হাজার টাকা।

তারপর স্বপ্নের ক্যাম্পাসে লাগে ভালোবাসার ছোঁয়া। ফেব্রুয়ারির ৭ থেকে ১৪ তারিখ, টানা ৭ দিনের ক্যাম্পেইনে বাকি সবগুলো চকলেট বিক্রি হয়ে যায়। অর্থাৎ সেই ছোট্ট স্বপ্নের দোকান মাত্র এক মাসে বিক্রি করে প্রায় দুই লাখ টাকার চকলেট। লাভের অংক এসে দাঁড়ায় লাখ টাকায়। হ্যাঁ, ‘স্বপ্ন থেকে সফল উদ্যোক্তা; এক মাসে ওরা লাখপতি’।

গল্পটা এত বড় হতো না; যদি না থাকতো একাগ্রতা। এতো কিছু থাকতে চকোলেট নিয়ে কেন ব্যবসার চিন্তা করলেন?

এমন প্রশ্নের জবাবে আজিমুল হাসি দিয়ে বলেন, ‘ছোট্ট বেলায় কেউ একটা চকলেট দিলে আমার থেকে বেশি খুশি কেউ হতো না। আমি শুধু একজন উদ্যোক্তা হতে চাইনি। চেয়েছি এক হাসির বিক্রেতা হতে। জন্মদিন কিংবা সারপ্রাইজ গিফট হিসেবে চকোলেট খুবই সমাদৃত। এই স্বপ্নের ক্যাম্পাসে বিভিন্ন উৎসব-পার্বণে আমরা প্রিয়জনদের চকলেট দিয়ে থাকি। কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাদের দেশের বাজারে অধিকাংশ চকলেটই ভেজালে ভরপুর। তাই ভালোবেসে যেন প্রিয়জনকে আপনারা ভালো মানের সেরা চকলেটটা দিতে পারেন, সে লক্ষ্যে আমাদের পথচলা। গোলাপের সাথে একটা চকলেট দিতে শিখুন। আপনাদের জন্য ভালোবেসে আমরা সেরা চকলেটটা এনে দিবো। সত্যি বলছি, আমাদের ভালোবাসা মিছে নয়।’

আরও পড়ুন : শীতের রুক্ষতায় রঙিন ফুলের সতেজতা

এই ছোট্ট হাসির দোকানের কো-ফাউন্ডার ও হেড অফ মার্কেটিং ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর মাহবুব হাবীবের দিকে তাকাতেই লাজুক হেসে বলেন, ‘প্রথম দিকে কিছু মানুষের কটু কথা শুনলেও যখন আমরা দৃঢ় সংকল্প ধরে রাখি ও সততার ক্ষেত্রে আপোষহীন থাকি, তখন মানুষ আস্তে আস্তে বুঝতে থাকে এবং আমরা তাঁদের মাঝে ভালো গ্রহণযোগ্যতা পাই।’

হ্যাঁ, এটা কোনো রূপকথার গল্প নয়। এটা দুই স্বপ্নবাজ তরুণের স্বপ্ন থেকে সফল উদ্যোক্তা হয়ে ওঠার গল্প।

ওডি/এমএ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড