• মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩, ১৪ চৈত্র ১৪২৯  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ওয়েনের খুন এবং রুম নম্বর ১০৪৬

  নিশীতা মিতু

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১১:২৬
ওয়েন
সবমিলিয়ে হোটেলের ছোট্ট কক্ষটি যেন হয়ে উঠেছিল টর্চার চেম্বার

১৯৩৫ সালের জানুয়ারির দুই তারিখের ঘটনা। মিসৌরির কানসাস শহরে বিকালের দিকে একজন ভদ্রলোক হোটেল প্রেসিডেন্টে আসলেন এবং উপরের তলার দিকে একটি রুম ভাড়া নিতে চাইলেন। তার সঙ্গে কোনো লাগেজ ছিল না। রেজিস্ট্রার খাতায় তার নাম লিপিবদ্ধ করা হয় ‘রোলান্ড টি. ওয়েন’ নামে। লস এঞ্জেলস থেকে এসেছিলেন তিনি।

লোকটি দেখতে ছিল বেশ লম্বা গড়নের, তার কান ছিল থ্যাবড়ানো। মাথার পাশে বড় একটি দাগ ছিল। তিনি একদিনের রুম ভাড়া দিলেন এবং তাকে ১০৪৬ নম্বর রুম দেওয়া হলো থাকার জন্য। নিজের কক্ষে যেতে যেতে ওয়েন হোটেলবয় রেনডলফ প্রোপস্টকে বলছিলেন যে, তিনি আসলে মুহলেবাচ হোটেলে উঠতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তারা একরাতের জন্য ৫ ডলার চেয়েছিল, যা তার কাছে অতিরিক্ত মনে হয়েছে।

১০৪৬ নম্বর কক্ষে পৌঁছানোর পর ওয়েন তার কোটের পকেট থেকে একটি চিরুনি, ব্রাশ আর টুথপেস্ট বের করলেন এবং তা বাথরুমে রাখলেন। এরপর তারা আবার কক্ষের বাইরের হলে বেরিয়ে এলেন। হোটেলবয় কক্ষের দরজা আটকে দিল আর ওয়েনকে চাবি বুঝিয়ে দিয়ে তার দায়িত্ব শেষ করল।

পরদিন, একজন পরিচ্ছন্নকর্মী ১০৪৬ নম্বর কক্ষে গেলেন রুম পরিষ্কার করতে। ওয়েন তখন কক্ষের ভেতরেই ছিলেন। তিনি তাকে ভেতরে আসতে বললেন এবং দরজা খোলা রাখতে বললেন যেহেতু তিনি কোনো এক বন্ধুর অপেক্ষায় ছিলেন। পরিচ্ছন্নকর্মীটি খেয়াল করলেন কক্ষের ভেতর কেবল একটি ছোট বাতি রাখা। যার স্বল্প আলো পুরো ঘরে রহস্যের সৃষ্টি করেছিল। তিনি পরবর্তী সময়ে পুলিশকে জানিয়েছিলেন যে সে সময় ওয়েনকে ভীত ও চিন্তিত মনে হচ্ছিল। পরিচ্ছন্নকর্মীটি যখন কক্ষ পরিষ্কার করছিলেন তখন ওয়েন তার কোট পরে বেরিয়ে গেলেন আর তাকে বললেন যেন ঘরের দরজা না লাগায়।

বেলা চারটার দিকে পরিচ্ছন্নকর্মীটি পরিষ্কার তোয়ালে নিয়ে ফের ১০৪৬ নম্বর কক্ষে এলেন। ঘরের দরজা তখনো খোলা ছিল, আর তখনো ঘরটিতে নিভু নিভু আলো ছিল। ওয়েন পরিপাটি পোশাকে বিছানায় শুয়ে ছিলেন। এ সময় পরিচ্ছন্নকর্মীটি ডেস্কের ওপর একটি চিরকুট দেখতে পেলেন যাতে লেখা, ‘ডন, অপেক্ষা কর। আমি ১৫ মিনিটের মধ্যেই ফিরে আসছি।’

পরেরদিন সকাল সাড়ে দশটার দিকে পরিচ্ছন্নকর্মীটি আবার কক্ষ পরিষ্কারের কাজে সেখানে যান। ভেতর থেকে কেউ সাড়া না দেওয়ায় তিনি বিশেষ চাবির (কেবলমাত্র কোনো ঘরের দরজা বাইরে থেকে লাগানো থাকলে যা ব্যবহার করা যায়) সাহায্যে দরজা খুলেন এবং দেখেন একটি চেয়ারে ওয়েন চুপ করে বসে আছেন আর আলোর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। পরিচ্ছন্নকর্মীটি বেশ ভয় পেয়ে যান। অস্বস্তিকর মুহূর্ত দূর হয় যখন ফোন বেজে ওঠে এবং ওয়েন তার উত্তর দেয়। ওপাশ থেকে কিছু একটা শোনার পর তিনি বলেন, ‘না ডন, আমি খেতে চাই না। আমি খিদে নেই। আমি কেবল সকালের নাস্তা খেলাম।’

ফোন রাখার পর তিনি পরিচ্ছন্নকর্মীটিকে হোটেল প্রেসিডেন্ট ও তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। এ সময় তিনি আবারও হোটেল মুহলেবাচের বেশি অর্থ চাওয়ার ব্যাপারটি বলেন। পরিচ্ছন্নকর্মীটি পুরো কক্ষ গুছিয়ে দেন, ব্যবহৃত তোয়ালে নিয়ে বেরিয়ে আসেন। অদ্ভুত এই অতিথির ঘর থেকে বেরিয়ে যেন স্বস্তিই পান তিনি।

১০৪৬ নম্বর কক্ষে অদ্ভুত কিছু!

সেদিন বিকেলে পরিচ্ছন্নকর্মীটি পরিষ্কার তোয়ালে নিয়ে ১০৪৬ নম্বর কক্ষে যায়। বাইরে থেকে তিনি শুনতে পান দুজন লোক কথা বলছে ভেতরে। তিনি দরজায় কড়া নাড়েন আর কেন এসেছেন জানান। ভেতর থেকে একটি অচেনা কণ্ঠ বেশ কুরুচিপূর্ণভাবে বলে ওঠে যে তাদের তোয়ালে লাগবে না। এর পর তিনি আর কথা না বাড়িয়ে নিজের কাজে চলে যান।

কক্ষ নম্বর ১০৪৮

পরের দিন জিন ওয়েন (রোলান্ড ওয়েনের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই) নামের একজন নারী হোটেল প্রেসিডেন্টে আসেন। তাকে ১০৪৮ নম্বর কক্ষ দেওয়া হয়। কিন্তু রাতের বেলায় তিনি শান্তিমতো ঘুমাতে পারেননি। পাশের ঘরে একজন নারী ও পুরুষের হিংসাত্মক ঝগড়ার শব্দে তিনি ভীষণ বিরক্ত হচ্ছিলেন। এরপর তিনি হাঁসফাঁস করার শব্দ পান। যেন কেউ কাউকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করছে। তিনি ডেস্ক ক্লার্ককে কল করেন এবং বিষয়টি জানান। তবে তার কথাকে পাত্তা দেওয়া হয় না।

হোটেলের লিফট অপারেটর চার্লস ব্লোচারও সেদিন রাতে হোটেলে অস্বাভাবিক কার্যকলাপ খেয়াল করেছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন ১০৫৫ নম্বর কক্ষে যে পার্টি হচ্ছে তারই শব্দ হয়তো এমন লাগছে। মধ্যরাতের কিছু সময় পর তিনি ১০ তলায় একজন নারীকে তুলেছিলেন। তিনি ১০২৬ নম্বর রুমের খোঁজ করছিলেন। এই নারীটিকে তিনি এর আগেও বেশ কয়েকবার হোটেল প্রেসিডেন্টে দেখেছিলেন। তার মতে তিনি এমন একজন নারী যিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পুরুষের কক্ষে যান।

কয়েক মিনিট পর দশম তলা থেকে আবার ডাক আসলে ব্লোচার সেখানে যান। সেই মহিলাটি লিফট ডেকেছেন। এ সময় তাকে বেশ উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছিল, কারণ তিনি যেই পুরুষটির কাছে এসেছেন তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ব্লোচার তাকে সাহায্য করতে না পেরে নিচে চলে আসেন।

আধা ঘণ্টা পর সেই নারী আবার লিফটের তলব করে তাকে নিচের লবিতে আনার জন্য। ঘণ্টাখানেক পর তিনি আবার ফিরে আসেন একজন পুরুষকে সঙ্গে নিয়ে। ব্লোচার তাদের নয় তলায় পৌঁছে দেন। ভোর চারটার দিকে পুরুষটি বের হয়ে যাওয়ার পর, নারীটি হোটেল ছাড়েন। এই নারী ও পুরুষকে কখনোই শনাক্ত করা যায়নি। আজও জানা যায়নি তারা সেদিন রাতে হোটেলে কী করেছিলেন। তারা কী আদৌ ১০৪৬ নম্বর কক্ষে গিয়েছিলেন? কিংবা ওয়েনের সঙ্গে কিছু করেছিলেন?

একই রাতের ১১টার দিকে রবার্ট লেন নামের একজন নগরকর্মী শহরতলীর রাস্তায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন। এ সময় তিনি একজন ব্যক্তিকে ফুটপাত ধরে দৌড়াতে দেখেছিলেন। তিনি বেশ অবাক হয়েছিলেন কারণ এমন শীতের রাতে সেই ব্যক্তির পরনে ছিল একটি প্যান্ট আর একটি স্যান্ডো গেঞ্জি।

লোকটি হাত নেড়ে লেনকে ডেকেছিলেন। তিনি তাকে ট্যাক্সি ড্রাইভার ভেবেছিলেন। যখন তিনি দেখলেন যে তিনি ভুল করেছেন, তখন তিনি লেনকে জিজ্ঞেস করলেন তাকে এমন কোথায় নিয়ে যেতে পারবেন কি না যেখানে তিনি একটি ক্যাব পাবেন। লেন রাজি হলেন এবং বললেন, ‘আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো বিপদে পড়েছেন’। তিনি জোরে জোরে মাথা ঝাঁকিয়ে তার হাতে থাকা পত্রিকার একটি মোছা অংশ ইঙ্গিত করে বললেন, ‘আমি একে কাল খুন করব’। লেন খেয়াল করলেন লোকটির বাহুতে ক্ষত রয়েছে।

নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছানোর পর লোকটি লেনকে ধন্যবাদ দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেলেন এবং একটি ট্যাক্সি ক্যাবকে ডাকলেন। লেন আবার গাড়ি চালানো শুরু করলেন। শহরের একটি রহস্যজনক খুনে কি একটু হলেও সহায়তা করলেন?— এমন ভাবনা তাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছিল।

অদ্ভুত সেই দিনটি

পরের দিন সকাল সাতটায় হোটেল প্রেসিডেন্টের টেলিফোন অপারেটর খেয়াল করেন ১০৪৬ নম্বর কক্ষের ফোনটি বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। তিন ঘণ্টায়ও ফোনটি একইভাবে থাকার পর তিনি হোটেলবয় রেনডলফ প্রোপস্টকে পাঠান ফোনটিকে যথাস্থানে রাখতে বলার জন্য।

১০৪৬ নম্বর কক্ষের দরজাটি লাগানো ছিল আর তাতে ঝুলছিল ‘বিরক্ত করো না’ সাইন কার্ড। সে দরজায় কড়া নাড়ল এবং ভেতর থেকে কেউ একজন ভেতরে যেতে বলল। প্রোপস্ট ঢুকতে গেলেন কিন্তু কক্ষের দরজা তখনো বন্ধ ছিল। সে আবার কড়া নাড়ল এবং ভেতর থেকে কেউ একজন তাকে বাতি জ্বালাতে বলল। ক্রমাগত কড়া নেড়ে ব্যর্থ হয়ে প্রোপস্ট চিৎকার করে ফোনটি ক্র্যাডেলে রাখতে বলে চলে গেল। তিনি ধারণা করে নিলেন, ভেতরে থাকা মানুষটি মদ্যপ অবস্থায় রয়েছে।

দেড় ঘণ্টা পরে অপারেটর দেখলেন ফোনটি এখনো বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। তিনি হ্যারল্ড পিকে নামের আরেকজন হোটেলবয়কে পাঠালেন এবার। পিকেও কক্ষের দরজার বন্ধ পেলেন। তিনি বিশেষ চাবির সাহায্যে ঘরের দরজা খুললেন। অর্থাৎ ঘরের দরজা কেউ বাইরে থেকে লাগিয়েছিল।

ঘরের ভেতর মৃদু আলো ছিল। পিকে ওয়েনকে বিছানায় নগ্ন অবস্থায় শুয়ে থাকা অবস্থায় পেলেন। ফোনস্ট্যান্ডটি ঝুলছিল আর ফোনটি নিচে পড়েছিল। তিনি ফোনটিকে যথাস্থানে রাখলেন। প্রোপস্টের মতো তিনিও ধারণা করেছিলেন যে তাদের অতিথি নিছক মাতাল হয়েছিলেন। তাকে বিরক্ত না করে তিনি বেরিয়ে এলেন।

বেলা ১১টা নাগাদ অন্য একজন টেলিফোন অপারেটর দেখলেন আবারও ১০৪৬ নম্বর কক্ষের ফোনটি বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। আবারও প্রোপস্টকে সেখানে পাঠানো হলো। তিনি আবারও দরজা লাগানো পেলেন এবং ‘বিরক্ত করো না’ সাইনবোর্ড পেলেন। কড়া নেড়ে কোনো সাড়া না পেয়ে তিনি চাবির সাহায্যে ভেতরে গেলেন।

ঘরের ভেতর সে অদ্ভুত দৃশ্য দেখতে পেল। ওয়েন নগ্ন অবস্থায় মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে। তিনি তার রক্তাক্ত মাথা হাত দিয়ে ধরে রেখেছেন। ঘরের বাতি জ্বালানোর পর প্রোপোস্ট ঘরের দেয়াল ও বাথরুমে আরও রক্ত দেখতে পেলেন। সে ভয় পেয়ে দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো এবং অ্যাসিস্টেন্ট ম্যানেজারকে জানাল। তিনি পুলিশে খবর দিলেন।

ভয়ংকর সবকিছু

পুলিশি তদন্তে জানা গেল, ছয় থেকে সাত ঘণ্টা আগে কেউ একজন রোনাল্ড ওয়েনের সঙ্গে ভয়ংকর কিছু করেছে। তাকে কিছু দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল এবং বারবার ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল। তার মাথায় বেশ কয়েকটি বর্বর আঘাত ছিল এবং কয়েক জায়গায় ভাঙা ছিল। তার ঘাড়ে আঘাত করা হয়েছিল এবং গলা টিপে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। পুরো ঘরজুড়ে ছিল রক্ত।

সবমিলিয়ে হোটেলের ছোট্ট কক্ষটি যেন হয়ে উঠেছিল টর্চার চেম্বার। কী ঘটেছিল? এমন প্রশ্নের জবাবে অর্ধচেতন ওয়েন কেবল বলেছিল, ‘আমি বাথটাবের সঙ্গে পেরে উঠিনি’। পুরো কক্ষ সম্পর্কে অদ্ভুতুড়ে সব তথ্য বেরিয়ে আসতে লাগল। ১০৪৬ নম্বর কক্ষে এক টুকরোও কাপড় খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি বাথরুমের সাবান, শ্যাম্পু, তোয়ালেগুলো সব উধাও হয়ে গিয়েছিল।

পুরো ঘরটিতে পাওয়া গিয়েছিল একটি গলার টাইয়ের লেভেল, একটি না খাওয়া সিগারেট, টেবিল বাতিতে চারটি রক্তাক্ত আঙুলের ছাপ ও একটি চুলের ক্লিপ। এমনকি কোনো দড়ি বা ছুরি পাওয়া যায়নি যার সাহায্যে ওয়েনকে বেঁধে রাখা হয়েছিল এবং ছুরিকাঘাত করা হয়েছিল।

একজন হোটেল কর্মচারী জানান যে তিনি ঘণ্টা কয়েক আগে একজন পুরুষ ও একজন নারীকে তড়িঘড়ি করে হোটেল প্রেসিডেন্ট ত্যাগ করতে দেখেছিলেন। এদের ভিড়েই অন্য কেউ মিশে গেছে বলে ধারণা করা হয়। ওয়েনকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেই রাতের পরেই তিনি মারা যান।

তদন্তকারীরা দ্রুত বুঝতে পারলেন, এটি কোনো সাধারণ হত্যাকাণ্ড নয়। ওদিকে লস অ্যাঞ্জেলস পুলিশ রোলান্ড টি. ওয়েন নামের কোনো রেকর্ড খুঁজে পেল না। ধারণা করা হলো, খুন হওয়া ব্যক্তি ছদ্মনামে হোটেল প্রেসিডেন্টে রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। ওয়েনের মৃত্যুর রাতে একজন অজ্ঞাতনামা নারী পুলিশকে ফোন করে এবং জানায় যে তিনি ধারণা করছেন মৃত ব্যক্তিটি মিসৌরির ক্লিংটনে বাস করতেন।

ওয়েনের মৃতদেহ একটি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার বাড়িতে রাখা হয়। তার লাশটি জনসম্মুখে রাখা হয় এই প্রত্যাশায় যে কেউ হয়তো তাকে চিনবে। সেখানে আসা মানুষদের মধ্যে রবার্ট লেন ছিলেন। তিনি জানান, জানুয়ারির ৩ তারিখ রাতে এই অদ্ভুত লোকটিকে ফুটপাতে দৌড়াতে দেখেছিলেন।

কয়েকজন মদের দোকানে পরিবেশক জানান এমন দেখতে একজন ব্যক্তিকে দুজন মহিলার সঙ্গে দেখেছিলেন। পুলিশ আরও আবিষ্কার করেন প্রেসিডেন্ট হোটেলে রেজিস্ট্রার করার আগের রাতে তিনি হোটেল মুহলেবাচে অবস্থান করেছিলেন লস এঞ্জেলসের ‘এগিন কে. স্কট’ নামে।

বিস্ময়করভাবে এই নামেও কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ওয়েন কিংবা স্কট নামের ব্যক্তিটি সেন্ট রেগাস নামের কানসাসের আরেকটি হোটেলে অন্য একজন ব্যক্তিসহ ছিলেন। এই ব্যক্তিকেও কখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রেসিডেন্ট হোটেলে থাকাকালীন সময়ে ওয়েন যে তথাকথিত ডনের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেছিলেন, তাকেও খুঁজে বের করা যায়নি। তবে কি ডন সেই ব্যক্তি যিনি ঐ যৌনকর্মীর সঙ্গে ছিলেন? পরিচ্ছন্নকর্মী তোয়ালে আনতে গেলে ভেতর থেকে যে রহস্যময় কণ্ঠ শুনেছিলেন সেটি কি তবে ডনের ছিল? লেনকে কি তবে ওয়েন ডনকে হত্যার কথাই বলেছিল? সেন্ট রেগিসে কি ওয়েন ডনের সঙ্গে ছিলেন। এই প্রশ্নগুলোর জবাব কখনো জানা যায়নি।

নয় দিন পর

ওয়েনের মৃত্যুর নয়দিন পর টনি বেরনার্ডি নামের একজন কুস্তিগির প্রবর্তক জানান, তিনি মৃত ব্যক্তিকে সপ্তাহ কয়েক আগে দেখেছিলেন। তিনি তার সঙ্গে কুস্তির ম্যাচগুলোতে সাইন করার ব্যাপারে কথা বলেছিলেন। বেরনার্ডি জানান, তিনি তার নাম বলেছিলেন ‘সেসিল ওয়ার্নার’।

সবার সব ব্যাখ্যায় এটা জানা যাচ্ছিল যে ওয়েন একজন অদ্ভুত ব্যক্তি ছিলেন কিন্তু তার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে কেউ সামান্যতম সাহায্য করতে পারেনি। তার ঘরে পাওয়া নারীর চুলের ক্লিপ ও জিন অয়েনের শোনা পুরুষ ও নারীর ঝগড়ার কণ্ঠ থেকে ধারণা করা হয় এই মৃত্যুর পেছনে ছিল ‘ত্রিভুজ প্রেম’। তবে এই ধারণা কেবল ধারণাতে রয়ে গেল। সবশেষে পুলিশ ওয়েনের মৃত্যু রহস্যকে অমীমাংসিত ধরে নেয়।

যাইহোক, ওয়েনের দেহ নাম পরিচয়হীনদের জন্য ঠিক করা সমাধিস্থলে নেওয়ার পূর্বে ফানেরাল হোমের মালিকের কাছে একটি অজ্ঞাত কল আসে। কল করা ব্যক্তি জানান যে ঐ ব্যক্তির আসল নাম ‘রোলান্ড টি. ওয়েন’ এবং ওয়েন তার বোনের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলেন। তিনি আরও জানান যে ওয়েন একটি জ্যামে পড়েছে এবং পুলিশ ভুল পথে আগাচ্ছে।

১৯৩৬ সাল অব্দি ওয়েনের রহস্য ধোঁয়াশাতেই ছিল। সেই বছর ইলিয়েনর অগ্লেট্রি নামের একজন নারী ‘আমেরিকান উইকলি’ নামে একটি ম্যাগাজিনে খুনের তালিকা খুঁজে পান। তার মতে সেখানে থাকা ওয়েনের বর্ণনা তার হারিয়ে যাওয়া ভাই আর্টেমাসের সঙ্গে মিলে যায়। ১৯৩৪ সালে তার ভাই দেশ দেখার উদ্দেশে ঘর থেকে বের হয়েছিল এবং আর ফেরেনি।

তার মা ছেলের থেকে তিনটি চিঠি পেয়েছিলেন। প্রথম চিঠিটি পৌঁছেছিল ১৯৩৫ সালের বসন্তে অর্থাৎ ওয়েনের মৃত্যুর কয়েক মাস পর। শেষ চিঠিতে তিনি জানিয়েছিলেন যে তিনি ইউরোপের উদ্দেশে রওনা দিচ্ছেন। এই চিঠি পাওয়া কয়েক মাস পর তিনি একটি কল পান জর্ডান নামের এক ব্যক্তি থেকে। জর্ডান জানায় তার ছেলে মিশরে তার জীবন বাঁচিয়েছিল। এও জানান যে তার ছেলে কায়রোতে একজন ধনী মহিলাকে বিয়ে করেছেন। তাকে ওয়েনের একটি ছবি দেখানো হলে তিনি তাকে তার হারিয়ে যাওয়া ছেলে বলে স্বীকৃতি দেন। যে কি না ১৭ বছর বয়সে মারা গিয়েছিল।

অব্যক্ত রহস্য

এটি এমন একটি মৃত্যু ছিল যার রহস্য উদঘাটন করতে গিয়ে কেবল কিছু প্রশ্নই জমেছিল। আর্টেমাস অগ্লেট্রি তবে ওই ব্যক্তি ছিলেন? কেন তিনি এতগুলো ছদ্মনাম ব্যবহার করেছিল? কানসাস শহরে ইনি কী করতেন? কে তাকে মেরেছিল আর কেন? জর্ডান কে ছিল? তার মাকে চিঠিগুলো কে লিখেছিল? ১০৪৬ নম্বর রুমে আসলে কী হয়েছিল?

এই প্রশ্নগুলোর কোনো উত্তরই আজও জানা যায়নি।

ওডি/এনএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড