• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

স্বপ্ন পূরণের পথে তাবিব-রানা

  হাসান বিশ্বাস

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৫:১৬
গালি বয় রানা
তাবিব মাহমুদ ও রানা মৃধা (ছবি : সংগৃহীত)

ব্যস্ত ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের পূর্ব রসুলপুরের আট নম্বর গলিতে থাকেন ১০ বছর বয়সী ছোট্ট শিশু রানা মৃধা। ‘গালি বয় রানা’ হিসেবেই যাকে চেনেন সবাই। যার সুরে ফুটে উঠেছে শহর-বন্দরের গলি, ফুটপাতে বেড়ে ওঠা হাজারও পথ শিশুর জীবনকথা, চাওয়া, না পাওয়া, বঞ্চনার চিত্র।

এক বছর পূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির অপরিচিত ফুল-বিক্রেতা সেই রানা আজ সুপার স্টার ‘গালি বয় রানা’। কামরাঙ্গীরচরের গলি পেরিয়ে রানাকে নিয়ে আজ আলোচনা-সমালোচনায় মগ্ন দেশ-বিদেশের শত শত ইউটিউবার। পৃথিবীর কোটি মানুষের মুখে এখন রানার নাম।

এই গালিবয় রানার জীবনের গল্পটা বদলে দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের শিক্ষার্থী তাবিব মাহমুদ। যিনি বাংলাদেশে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ‘মিলিয়ন সাবস্ক্রাইব’ অর্জন করেছেন। ‘অধিকার-সাম্য-প্রতিবাদী’ গান গেয়ে জয় করেছেন লাখো শ্রোতার মন। আজ তাবিব হাঁটছেন মিলিয়ন ভক্তকে সাথে নিয়ে বিলিয়নের পথে।

মাত্র ৬ মাসে তাবিবের ইউটিউব সাবস্ক্রাইবার ১০ লাখ পূর্ণ হয়েছে। ৯৯ লাখ ৬০ হাজার ভিউ পেয়ে জনপ্রিয় তালিকায় সবার উপরে অবস্থান করছে তাবিবের গান ‘গালি বয়-পার্ট ২’। আর মাত্র ৪০ হাজার ভিউ পেলেই কোটিতে পা রাখবে তাবিব মাহমুদের সর্বোচ্চ জনপ্রিয় গানটি। তার মাত্র কয়েকদিন বাকি।

২০১৯ সালের মাঝামাঝি দিকে ‘রণবীর সিংহ’ অভিনীত বলিউড ছবি ‘গালি বয়’ দেখার পর থেকে তাবিবের ইচ্ছে জাগে সুবিধা-বঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর। এক বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের সামনে বাইকে বসে ছিলেন তাবিব মাহমুদ। হঠাত করে তাবিবের সঙ্গে রানার পরিচয়। রানা খুব মিশুক স্বভাবের শিশু। যে কাউকে নিজের ইচ্ছেগুলো হুটহাট করে বলে দিতে পারে।

তাবিবের বাইকের কাছে এসে রানা বললেন, ‘বাইকে ঘোরাবেন ভাই?’ তাবিব নাম জিজ্ঞাসা করলেন। রানা উত্তরে বললেন, ‘গালি বয় রানা’। পরিচয় জানার পর তাবিব আর অপেক্ষা করেনি। রানাকে বাইকে নিয়ে ঘুরতে শুরু করলেন পুরো ক্যাম্পাস। সে সময় কথোপকথনে তাবিব একটা গান শুনতে চাইলেন রানার কাছে।

রানা মৃধা নিজের আবিষ্কৃত ৫ লাইনের একটি গান শুনালেন তাবিবকে। ‘হেই আমি রানা, থাকি কামরাঙ্গীরচর, আট নাম্বার গলি, মনের কথা বলি, আমি রানা গালি বয়!’ এদিকে তাবিব ছোটবেলা থেকেই গান প্রিয় একজন মানুষ। কবিতা কিংবা রচনাকে সুর দিয়ে গানে রূপ দিতে বড্ড ভালোবাসেন তিনি। রানা মৃধার কণ্ঠ শুনে তাবিব সিদ্ধান্ত নিলেন, ‘রানাকে দিয়েই হবে স্বপ্ন পূরণ।’

সেই থেকে রানার সঙ্গে শুরু হলো তাবিবের বন্ধুত্ব। তার পর থেকে রানাকে সময় দিতে শুরু করেন তাবিব। নানা ভুল ঠিক করে দেন, সুর শেখান, লিরিক্স মুখস্থ করান। তার এক মাসের মধ্যে বের হয় তাবিব আর রানার প্রথম যৌথ গান ‘গালি বয় রানা’।

‘গালি বয় রানা’ গানে তাবিব ফুটিয়ে তোলেন ফুটপাতের সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের দৃশ্য। রাতারাতি কয়েক লাখ ভিউ পায় তাবিব-রানার যৌথ গানটি। পুরো দেশে, ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত প্রত্যেকে পছন্দ করেন গানটি। দেশ পেরিয়ে বিভিন্ন দেশের অনেকে তাদের ভাষায় ব্যাখ্যা করেন ‘গালি বয় রানা’ গানের কথাকে। এমন কি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও রানা-তাবিবের ‘গালি বয় রানা’ গানটি দেখেন। খবর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানতে পারেন তাবিবের ভালো ক্যামেরা নেই। তাই সাদা-কালো ভিডিও প্রচার করতে হয় তাকে। পরে তাবিবকে একটি ক্যামেরা ও যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র উপহার দেন এবং এমন আরও হাজারটা গান আবিষ্কারের অনুপ্রেরণা দেন।

তারপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি তাবিবকে। গালিবয় রানা পার্ট- ১,২,৩ তে যথাক্রমে পথশিশুদের সমস্যা, সমস্যার কারণ ও সমাধানের কথা তুলে ধরেন তাবিব। সেই সিরিজ শেষ হলে বের হয় তাবিবের গান ‘হিপহপ পুলিশ’। বাংলাদেশের একমাত্র শিল্পী তাবিব, যিনি রোহিঙ্গাদের শিক্ষা অধিকারের কথা গানে ফুটিয়ে তুলেছেন। এভাবে একের পর এক নতুন গান নিয়ে আসেন তিনি। যার প্রতিটি গানে ফুটে ওঠে সাম্যের কথা, সত্যের কথা, অধিকারের কথা। তাবিবের এমন প্রতিবাদী সুরে অনেক শ্রোতা তাকে আখ্যা দেন ১৯ এর বিদ্রোহী কবি, সাম্যের কবি, প্রতিবাদী কবি ইত্যাদি।

আরও পড়ুন : দেশি বরইয়ের দুর্দিন

তাবিব এই ১০ বছরের ছোট্ট শিশু রানাকে নিয়ে উঠেছেন কয়েকশ মঞ্চে। গান গেয়েছেন এক সঙ্গে। শুধু গানে সীমাবদ্ধ থাকেনি তাবিব। রানাকে স্কুলে ভর্তি করান তিনি। রানার নিয়মিত লেখাপড়ার তদারকিও করছেন তিনি। কিভাবে রানাদের সুপার স্টার বানানো যায়, তা বিশ্বকে তাবিব দেখিয়ে দিয়েছেন। বিভিন্ন কারণে এক সময় বাংলাদেশের অনেক মানুষ ‘র‍্যাপ সং’ অপছন্দ করতেন। তাদের ধারণা ছিলো, এগুলো অসামাজিক গান। তবে তাবিব এই ধারণাকে বদলে দিয়ে কবিতার ভাষাকে গানের সুরে ফুটিয়ে তুলেছেন। এভাবে মানুষের ভালোবাসায় এগিয়ে চলছেন তাবিব মাহমুদ। মিলিয়ন মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ছুটছেন বিলিয়নের পথে। রানাদের অধিকারের কথা বলতে, রানাদের সঙ্গে নিয়ে চলতে, রানাদের জীবন বদলাতে জন্ম হোক আরও হাজারটা তাবিবের।

লেখক : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ওডি/এমএ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড