• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

অভাব থাকুক, তবু দুজন সঙ্গী হয়ে চলি

  নিশীতা মিতু

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১১:৫৭
বর্ণা
বর্ণা ও রেজা দম্পতি (ছবি- সম্পাদিত)

প্রকাশিত গোছানো গল্পের আড়ালে লুকিয়ে থাকে অল্প অল্প করে জড়ো করা প্রেক্ষাপট। পাওয়া, না পাওয়া, অপেক্ষা, হতাশা সবকিছু সঙ্গী করেই একসময় সুন্দর একটি জীবন হয় দুজন মানুষের। ঠিক যেমন রেজা শাহজাহান আর ফৌজিয়া বর্ণার জুটি। ভালোবেসে দুজন মানুষ প্রণয়কে নিয়ে গেছেন পরিণতিতে। প্রেমিক-প্রেমিকা পরিচয়কে নিয়ে গেছেন স্বামী-স্ত্রী আর বাবা-মা পরিচয়ে।

বিবাহিত জীবনের ২০ বছর পার করছেন এই দম্পতি। এখনো মেঘলা সকালে কিংবা আবছা সন্ধ্যায় দুজনে ফিরে যান ২২ বছর আগের দিনগুলোতে। প্রতিনিয়ত নতুন করে প্রেমে পড়েন একে-অন্যের। বর্ণার সঙ্গে আড্ডায় জানা গেল সেই দিনগুলোর কথা। কীভাবে প্রেমে পড়া, কীভাবে দুজনের একসঙ্গে থাকা? ভালোবাসার অর্থ কী তাদের কাছে?

একই এলাকায় থাকতেন বর্ণা ও রেজা। প্রয়োজনে কিংবা অপ্রয়োজনে দুজনের দেখা হয়ে যেত প্রায়ই। তবে একসময় যেন প্রয়োজনের চেয়ে অপ্রয়োজনে দেখা হওয়াটাই মুখ্য হয়ে উঠল। রেজার বাসার সিঁড়ি থেকে কোণাকুণিভাবে বর্ণার বারান্দাটা চমৎকারভাবেই দেখা যেত। বারান্দায় আসলে তাই দুজনের চোখে চোখ পড়ে যেত। আর তাতেই লজ্জা এসে ভর করত বর্ণার চোখে মুখে। হয়তো চোখে চোখেই প্রথম প্রেম হয়েছিল দুজনের।

দুটো বাসার অবস্থানের দূরত্ব থাকলেও দেখার কোনো দূরত্ব ছিল না। বিনা কারণেই একজন অন্যজনের সামনে আসা, চোখে চোখে কথা বলা, অহেতুক দেখার অপেক্ষা। সবশেষে একদিন রেজা বলেই বসলেন, ‘ভালোবাসি’।

মন যেন এবার প্রজাপতি হয়ে উঠল। এই মন ভালো, এই খারাপ, অপেক্ষা, দুজনের দেখা, খুনসুটি, অভিমান— এভাবেই কেটে গেল একটি বছর। বর্ণা বলেন, ‘আমি তখন ইন্টারে পড়ি, রেজা পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম চাকরি করে। রেজা প্রায় প্রতিটা সন্ধ্যায় কোনো না কোনো কাজের অজুহাতে আমাদের বাসায় আসত। আমার আম্মাও ওকে অনেক আদর করত, রান্না করে খাওয়াত।’

এরই মধ্যে হঠাৎ বর্ণার মা ভীষণ অসুস্থ হয়ে গেলেন। ইন্টার শেষ করে আর্কিটেকচারে কেবল ভর্তি হয়েছিলেন বর্ণা। পরিবার থেকে শুরু হলো বিয়ের জন্য চাপ দেওয়া। দুর্ভাগ্য কিংবা সৌভাগ্যক্রমে একই সময় রেজার হাত ভেঙেছিল। তার বাবা তাকে দেখতে আসলেন। রেজা জানালেন যে তিনি একজনকে পছন্দ করেন, তাকে বিয়ে করতে চান। রেজার বাবা বর্ণাকে দেখতে চাইলেন।

বর্ণার বোন তার মাকে বুঝিয়ে রাজি করালেন তাকে দেখানোর জন্য। রেজার বাবা আসলেন, বর্ণাকে দেখে আংটি পরিয়ে দিলেন কাউকে কিছু না বলেই। পরিবারের সবাই যেন হতভম্ব হয়ে গেল। কিন্তু বর্ণার মা যেহেতু আগে থেকেই রেজাকে পছন্দ করতেন তাই রাজি হয়ে গেলেন।

খুব একটা ভেবেচিন্তে বিয়ে করার সময় ছিল না বর্ণা আর রেজার হাতে। খুব তাড়াহুড়ায় বাসার ছাদেই ডেকোরেশন করেই বিয়ে হয় দুজনের। চোখে চোখে কথা বলে ১৯ বছর বয়সী একটি মেয়ে আর ২৪ বছর বয়সী একটি ছেলের যে প্রণয় গড়ে উঠেছিল যা পরিণতি পেল দুই পরিবারের ইচ্ছাতেই।

বিয়ের পর দুজনে বর্ণার মায়ের বাসায় উঠেন। স্ত্রীর পড়াশোনা, টিউশনি, স্বামীর স্বল্প বেতন সবমিলিয়ে বেশ কঠিন সময় পার করেছিলেন দুজন। হানিমুন দূরে থাক, পার্কে ঘোরার কথাও কল্পনা করেননি খরচের ভয়ে। একসঙ্গে ঘর বেঁধে যেন খুব হিসেবি হয়ে গেলেন। অভাব থাকুক, তবু দুজন সঙ্গী হয়ে চলি— এই ছিল তাদের নীতি।

সংসার সবসময় এক গতিতে চলে না। দুজন একসঙ্গে চলার পথ পুরোটা মসৃণ হয় না। তাতে উঁচু নিচু কিছুটা পথ থাকেই। বর্ণা আর রেজার বেলাতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

রেজার উৎসাহেই বিয়ের পর পড়াশোনা চালিয়ে গেছিলেন বর্ণা। ৪ বছর পড়াশোনা করে চাকরি জীবনের শুরু। একই বিল্ডিংয়ের ২০তলায় বর্ণা অফিস, ৮ তলায় রেজার অফিস। দুপুরে দুজন একসঙ্গেই লাঞ্চ করতেন, সন্ধ্যায় দুজন একসঙ্গে ফিরতেন।

এর মধ্যেই কন্যা সন্তানের মা হলেন বর্ণা। সন্তানের দেখাশোনার কেউ না থাকায় চাকরি ছেড়ে দিলেন। সে সময় খুব মনমরা হয়ে থাকতেন বর্ণা। রেজা স্ত্রীর মনের অবস্থা বুঝতেন, তাকে বুঝাতেন, শান্ত করার চেষ্টা করতেন।

এক সময় সংসারী হয়ে উঠলেন বর্ণা। নিজেদের জমানো টাকায় একটা ফ্ল্যাট কিনলেন। বর্ণা বলেন, ‘আল্লাহ মুখ তুলে চাইলেন। আমাদের মনে হলো উনি আমাদের ঘরে একটা মেয়ে দিয়েছেন সঙ্গে বরকতও দিয়েছেন। আমরা একটু করে স্বাবলম্বী হচ্ছিলাম। বিয়ের পর হানিমুনে যেতে না পারলেও আল্লাহর রহমতে মেয়ে হওয়ার পর আমরা অনেক ঘুরেছি দেশে-বিদেশে।’

অনেকদিন পর আবারও সুখের বাতাস বইতে শুরু করল বর্ণা-রেজার ঘরে। জানতে পারলেন আবার মা হতে যাচ্ছেন বর্ণা। তবে এই সুখ যেন তাদের জীবনে কালবৈশাখী ঝড় হয়ে এলো। কোলে আসার আগেই ওপারে চলে গেল অনাগত সন্তান। ভীষণ বড় ধাক্কা খেলেন দুজনে।

আরও পড়ুন : পরিচয় থেকে ভালো লাগা, একসঙ্গে জীবন কাটানোর ৫ বছর

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে অনেকটা সময় লাগল। তবে এই সময়টাতে বর্ণা আর রেজা একে-অপরকে আরও ভালো করে চিনলেন, বুঝলেন। দুজন বন্ধু হয়ে উঠলেন। মাঝেমধ্যে দুঃখ সম্পর্ক দৃঢ় করে দেয়, তাদের বেলাতেও যেন তাই হলো। বর্ণা আর রেজা একে-অপরের পরিপূরক হয়ে উঠলেন। এরপর তাদের কোল জুড়ে ছেলে সন্তানের আগমন হলো। সংসার যেন পূর্ণতা পেল।

বিয়ের ২০ বছর পার হলেও এখন নিজেদের প্রেমিক-প্রেমিকা ভাবেন রেজা-বর্ণা। সব ব্যস্ততাকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের জন্য কিছুটা সময় বের করেন, সে সময়টা কেবলই নিজেদের। সন্তানরাও এই ব্যাপারটিতে এখন অভ্যস্ত। তারাও চায় বাবা মা ঘুরতে যাক।

বর্ণা বলেন, ‘দিন চলে গেলে সময় ফুরিয়ে যায়, কত দিনই বা পাব দুজন একসঙ্গে থাকতে, ঘুরতে। এই সময়ের কাটানো দুটো ভালো দিনের কথা যেন সারাটা জীবন ভাবতে পারি।’

ওডি/এনএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড