• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

হাড় ভেঙে নখর গঠন করে যে ব্যাঙ

  মো. সাইফুল ইসলাম

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৫:৩৬
ব্যাঙ
লোমশ ব্যাঙ সাধারণত ৪ ইঞ্চি বা প্রায় ১১ সেন্টিমিটার লম্বা হয় (ছবি- ইন্টারনেট)

প্রাণিজগৎ বড়ই বিস্ময়কর ও বৈচিত্র্যময়। পাশাপাশি এই জগতে রয়েছে নানা রহস্যের সমারোহ। এছাড়াও এই জগৎ নানান রঙের, নানান অবয়বের প্রাণী দিয়ে সমৃদ্ধ। এই সকল প্রাণীর বৈশিষ্ট্যেও অনেক পার্থক্য রয়েছে।

এই যেমন আমাদের দেখা অতি পরিচিত একটি প্রাণী হচ্ছে ব্যাঙ। মেরুদণ্ডী ও উভচর এই প্রাণী সম্পর্কে আমরা অনেক কিছুই জানি। কিন্তু আজকে এমন একটি ব্যাঙের প্রজাতি সম্পর্কে বলব যা সম্পর্কে হয়তো পূর্বে আমরা তেমন কিছু জানতামই না।

বলছি একটি ভয়ংকর ব্যাঙের কথা। যে ব্যাঙটি পাওয়া যায় মধ্য আফ্রিকায়। এই প্রজাতির পুরুষ ব্যাঙের শরীরের পেছনের দিকে লোম থাকে। লোম থাকায় নামকরণ করা হয়েছে ‘লোমশ ব্যাঙ’ বা ‘হেয়রি ফ্রগ’। লোমশ ব্যাঙ বলা হলেও সেগুলো কিন্তু অন্যান্য প্রাণীর লোমের মতো নয়। লোমগুলো ত্বক থেকে বের হওয়া প্যাপিলা বা প্রলম্বিত অংশ। যার ভেতরে রক্তনালীও থাকে।

Trichobatrachus robustus হচ্ছে লোমশ ব্যাঙের বৈজ্ঞানিক নাম। লোমশ ব্যাঙের শুধু লোম থাকার বিষয়টিই বিস্ময়কর নয়। লোম ছাড়াও ব্যাঙটির বিড়ালের মতো নখর আছে। তবে বিড়ালের নখর থেকে এদের নখর অনেক ভিন্ন। বিড়ালের নখর তাদের পদতলে লুকায়িত থাকে। যখন প্রয়োজন অর্থাৎ আঁচড় দিতে, শিকার ধরতে, হাড় থেকে মাংস ছিঁড়তে, গাছে উঠতে নখ বের করে। প্রয়োজন শেষে নখর পুনরায় পদতলে লুকিয়ে রাখে।

লোমশ ব্যাঙের নখর তৈরি হয় হাড় দিয়ে। কিন্তু সেগুলো পদতল ও ত্বকের ভেতরে দেখা যায় না। যখন প্রয়োজন হয় তখন হাড় ভেঙে ত্বক ছিদ্র হয়ে বের হয়ে আসে। ধারণা করা হয় আত্মরক্ষার জন্য এই ব্যাঙ হাড় ভেঙে নখর বের করে শিকারিকে ভয় দেখায়। এভাবে ভয় দেখানোর কারণে এই ব্যাঙকে আবার ‘ভয়ংকর ব্যাঙ’ বা ‘হরর ফ্রগ’ নামেও ডাকা হয়।

ভয়ংকর লোমশ ব্যাঙের হাড়ের নখরগুলো দৃঢ় পেশি দ্বারা আটকানো থাকে। প্রয়োজন শেষে এই নখরগুলো পুনরায় ভেতরে চলে যায় কি না তা নিয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি। কারণ জীবিত ব্যাঙ নিয়ে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডেভিড ব্লাকবার্ন ও তার সহকর্মীদের তেমন বেশি গবেষণার সুযোগ হয়নি। তবে গবেষকরা ধারণা করেন ভাঙা হাড় ও ত্বক পুনরূৎপাদন হয়। ঠিক যেমন টিকটিকির লেজ একবার খসে পড়লে পুনরায় গজায়।

হাড় ভেঙে এবং ত্বক ছিদ্র করে নখর বের হওয়ার ঘটনাটি শুধু লোমশ ব্যাঙের ক্ষেত্রেই দেখা যায় না। গবেষকদের মতে, স্যালামান্ডার ত্বক ছিদ্র করে তাদের পাঁজর বের করে। এছাড়াও পরবর্তীতে আরও Astylosternus গণের ১১টি প্রজাতির ব্যাঙের মধ্যে ৯টি প্রজাতিই ত্বক ছিদ্র করে হাড়ের নখর বের করতে পারে। কিছু প্রজাতির ব্যাঙের কব্জিতে হাড়ের কাঁটা পাওয়া যায়। তবে হাড়গুলো ত্বক ছিদ্র করে বেরিয়ে না এসে কব্জিতেই গজায়।

অন্যান্য ব্যাঙের তুলনায় লোমশ ব্যাঙের ফুসফুস খুবই ছোট। যা ব্যাঙকে হয়তো প্রয়োজনীয় অক্সিজেন জোগান দিতে পারে। কিন্তু যৌন মিলনের সময় পুরুষ ব্যাঙের একটু বেশিই অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়ে। তাই প্রজনন মৌসুমে পুরুষ ব্যাঙের পিছনের পায়ে লোম হয়। ধারণা করা হয় লোমগুলো মিলনের সময় অক্সিজেন শোষণ করে। ফলে মিলনের সময় অক্সিজেনের ঘাটতি পড়ে না।

লোমশ ব্যাঙ সাধারণত ৪ ইঞ্চি বা প্রায় ১১ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। এদের পশ্চিম আফ্রিকা, নাইজেরিয়া ও কঙ্গোতে পাওয়া যায়। এরা সাধারণত নিচু জলজ ভূমি, নদীর আশপাশের জলাভূমি ও রেইন ফরেস্টে বাস করে। তবে এই ব্যাঙ সম্পর্কে ১৯০০ সালে বেলজিয়ামের প্রাণিবিদ জর্জ বোলেঞ্জার প্রথম আলোচনা করেছিলেন। তিনি এই লোমশ ব্যাঙ ফ্রান্স ও কঙ্গোতে পেয়েছিলেন।

লোমশ ব্যাঙ ও ব্যাঙাচি দিয়ে রসনা বিলাস হয়। তবে খাদ্য হিসেবে এই ব্যাঙের পিছনের পায়ের কিছু অংশ যেখান থেকে নখর বের হয় তা খাওয়া হয় না। কিন্তু মানুষের খাবারে পরিণত হওয়ার জন্য এই ব্যাঙের সংখ্যা তেমন কমছে না। দ্রুত কমছে পানি দূষণের ফলে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় হয়তো এই ব্যাঙ প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাবে।

সূত্র- এনিম্যালডটমমডটমি, নিউ সায়েন্টিস্ট, ডেইলি মেইল

ওডি/এনএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড