নিশীতা মিতু
পবিত্র এক অনুভূতির নাম ভালোবাসা। দুজন মানুষ একে অপরকে ভালোবেসে একসঙ্গে কাটিয়ে দেয় সারাজীবন। মো. মেহদি হাসান ও জান্নাতুল ফেরদাউস তিথির বিবাহিত জীবনের বয়স ৫ বছর। এক সন্তান রয়েছে তাদের। আশেপাশের সবার কাছে মেহদি-তিথি দম্পতি কিছুটা হিংসার কারণও বটে। সুন্দর, গোছানো সাংসারিক জীবনের সূচনা হলো কী করে? কবে থেকে তারা একজন ভালোবাসলেন অন্যজনকে?
মায়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার কাজে অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফরম নিতে একদিন একটি বেসরকারি ব্যাংকে যান তিথি। সেখানে গিয়ে খুঁজে পান বড় বোনের প্রাক্তন সহকর্মীকে। তিনিই তিথির সব কাজ করে দেন আর দুপুরের খাবার খাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। হাতে কম সময় থাকায় সেদিন অবশ্যই চা পানিই খাওয়া হয় তিথির।
প্রায়ই প্রয়োজনে ব্যাংকে যেতেন তিথি। পরিচিত ভাইয়া সব কাজ করে দিতেন। তিথির ভাষায়, ‘প্রায়ই ব্যাংকের কাজে যেতাম, ভাইয়াই সব করে দিতেন। আমি বসে বসে সবার কাজ দেখতাম, গল্প করতাম। ব্রাঞ্চের সবাই খুব আন্তরিক ছিল আর ভাইয়াও সবার সঙ্গে আমাকে ছোট বোন বলে পরিচয় করিয়ে দিলেন। ভাইয়ার পাশের টেবিলের ভদ্রলোকের সঙ্গেও পরিচয় করিয়ে দিলেন। উনি আমাকে আপু বলে ডাকতেন।
একদিন ভাইয়া লাঞ্চের কথা বললেন। পাশের টেবিলের ভদ্রলোকও আমাদের সঙ্গে খেতে বসল। খাওয়ার সময় উনি উনার বক্স খুলে আমাকে কিছু একটা দিয়ে খেতে বললেন। আমি ভেবেছি কোনো ভাজি জাতীয় কিছু যেটা মাংস দিয়ে করা। পরে জানতে পারি ওটা বুটের ডাল দিয়ে রান্না করা কচু ভাজি ছিল। আমি কচু পছন্দ করি না কিন্তু এই খাবার এতই পছন্দ হলো যে আমি উনার কাছে রেসিপি চাইলাম।’
রেসিপি দেওয়ার কথা থাকলেও তা আর দিচ্ছিলেন না সেই ব্যক্তি। এরই মধ্যে একদিন জরুরি প্রয়োজনে ব্যাংকে গেলেন তিথি। পরিচিত ভাই না থাকায় পাশের সেই লোকটিই সাহায্য করল তাকে। এই ভদ্রলোকটিই হলেন মেহদি। এভাবে ব্যাংকে আসা-যাওয়া আর টুকটাক কথায় বন্ধুত্ব হলো তাদের।
একদিন মেহদি জানালেন তার এক বড় ভাইয়ের এনিভার্সারির জন্য আড়ং থেকে গিফট কিনবেন। সঙ্গে তিথিকে যাওয়ার অনুরোধ করলেন। ওদিকে কাজ থাকায় তিথি গেলেন। তিথি বলেন, ‘তার ভাইয়ের জন্য গিফট পছন্দ করে দেওয়ার পর সে বলল আমার এক মেয়ে কাজিনের জন্মদিন। আপনার মতো বয়স, কী দেওয়া যায়? কিছু পছন্দ করে দিন। আমি সুন্দর মতো মোমবাতি, পানি খাওয়ার মগ, প্লেটসহ টুকটাক জিনিস পছন্দ করে দিলাম।
এরপর আমরা একসঙ্গে লাঞ্চ করলাম। সে বিদায়বেলায় আমার হাতে প্যাকেট দিয়ে বলল আমার বাসায় একটু ঝামেলা আপনার কাছে গিফটগুলো রাখুন প্লিজ। আমার অফিসের কাছেই তো আপনার বাসা, আমি পরে সময় করে দেখা করে নিয়ে নিব। আমি ভাবলাম নিশ্চয়ই প্রেমিকার জন্য উপহার এজন্য বাসায় নিতে পারবে না। এটা ভেবে খুব মজা পেলাম।
তার তিন দিন পরেই ছিল তিথির জন্মদিন। রাত ১২টায় মেহদি কল দিয়ে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানায় এবং বলেন উপহারগুলো তিথির জন্যই কেনা। তাকে যেন রাতের প্রথম প্রহরেই উপহার দিতে পারেন তার জন্যই তার কাছে প্যাকেটটি রেখেছেন। সেসঙ্গে পরদিন লাঞ্চ করতে চাইলেন আর তিথিকে জামদানি শাড়ি পরতে অনুরোধ করলেন।
পরদিন তারা দেখা করলেন। সেদিন আবার একজোড়া নূপুর কিনে তিথিকে অবাক করে দেন মেহদি। টিএসসিতে দুজন মিলে চা খেলেন। তবে এই দিনে বিশেষ কিছুই কেউ কাউকে বলেননি।
বাসার সবার কাছেই তিথির গল্প করে মেহদি। ছোট বোনের জন্মদিন উপলক্ষে বাসায় দাওয়াত দেয় তিথিকে। পরিবারের সবার তিথিকে ভীষণ পছন্দ হয়। ফিরে আসার পর সেদিন রাতে মেহদি নিজের আর পরিবারের পছন্দের কথা তিথিকে জানায়। কিছুদিন পর নিজের পরিবারকে জানায় তিথি। এরপর দুই পরিবারের সম্মতিতে ধুমধাম করেই বিয়ে হয় তাদের।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড