• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

নির্জীব প্রকৃতির বুকে সজীব ‘বসন্ত’

  নিশীতা মিতু

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ০৮:৩৪
বসন্ত
বসন্তের ফুল পলাশ (ছবি- ইন্টারনেট)

কোকিলের কুহুতান নাকি আমের মুকুল— কে নিয়ে আসে বসন্তের আগমনী বার্তা? উত্তর খুঁজতে গেলে কিছুটা দ্বিধায় পড়তে হবে বটে। প্রকৃতি যখন তার দখিন দুয়ার খুলে দেয় তখন মিষ্টি বাতাস বয়ে যায় নিজ ছন্দে আর বলে যায়, ‘বসন্ত এসে গেছে’। ঋতুর কালচক্রে আজ পহেলা ফাল্গুন, বসন্তের প্রথম দিন।

বসন্তকে বলা হয় ঋতুরাজ। অবশ্য নিষ্প্রাণ প্রকৃতির বুকে যে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার করে রাজ উপাধি তো তারই প্রাপ্য। শীতে যে গাছের পাতা ঝরে পড়ে, তাতে আবার নতুন পাতা গজায় এই ঋতুতে। চারদিক মুখরিত হয়ে ওঠে ফুল আর প্রজাপতির কলতানে। মানুষের জীবনে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ না হলেও পশু-পাখি সর্বোপরি প্রকৃতির জন্য বসন্ত বেশ গুরুত্ব রাখে। এই সময় অনেক পশুপাখি মিলন ঘটায় এবং বাচ্চার জন্ম দেয়। নতুন গাছের জন্ম হয় এই ঋতুতে।

ফুল

বসন্তে চারপাশ ভরে ওঠে নানা রঙা ফুলে (ছবি- ইন্টারনেট)

বসন্ত ফুলের ঋতু। এই ঋতুতে বাতাসের মাধ্যমে ফুলের রেণু ছড়িয়ে পড়ে। আর তাই এই ঋতুতে ফুল হয় বেশি। যে ফুল দিয়ে আপন সৌন্দর্যে সাজে প্রকৃতি। ফুলের সঙ্গে বসন্তের প্রেম বেশ গভীর। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের ভাষায় বসন্তের শাশ্বত রূপটি তাই এমন- ‘ফুল ফুটুক, আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত’।

বসন্তের ফুল বলতেই সবার আগে চলে আসে পলাশ, শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ার নাম। এছাড়াও এই ঋতুতে ফোটে অশোক, আকড়কাঁটা, হিমঝুরি, রক্তকাঞ্চন, দেবদারু, নাগেশ্বর, মহুয়া, মাদার, শাল, স্বর্ণশিমুল ইত্যাদি।

বসন্তে প্রকৃতি হয়ে ওঠে চঞ্চল। শীতের খোলস ছাড়িয়ে নবরূপে জাগ্রত হয় বৃক্ষরাজি। পলাশ, শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙে রঙিন হয়ে ওঠে গ্রাম-শহর, বন-বাদার। প্রকৃতিতে যেন রঙের আগুন লাগে। গাঁদা ফুলের বাসন্তি রঙও বসন্তের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেয়। এমনকি ঘাসের ওপরও এ সময় পা ফেলতে হয় সাবধানে। কারণ সেখানে ফুটে থাকে গুল্ম ফুল। পরিত্যক্ত জলাশয়ের বুকেও কলমি ফুল উঁকি দিয়ে জানান দেয়, প্রকৃতিকে সাজাতে পিছিয়ে নেই তারাও।

কোকিল

শীতে কোকিলের কুহুতানে ভরে ওঠে চারপাশ (ছবি- ইন্টারনেট)

বসন্ত ঋতুতে সবচেয়ে বেশি পাখির গান শোনা যায়। আর এই গানের দলের নেতৃত্ব দেয় সুরেলা কণ্ঠের কোকিল। উঁচু গাছের মগডালে বসে, নিজেকে আড়াল করে সারাদিন কুহু কুহু রবে গেয়ে যায় সে। কোকিলের সেই গানে বিমোহিত হয় মানুষের মন, বিরহী মন হয়ে ওঠে উতলা।

বসন্তের ফুলের রূপ আর পাখির গান যুগ যুগ ধরে বিমোহিত করে গেছে কবি সাহিত্যিকদের। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বসন্তের রূপে মুগ্ধ হয়েই লিখেছেন- ‘আহা আজি এই বসন্তে, এত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়।’ বাউল মনকে ছুঁয়ে গেছে বসন্তের বাতাস। তাইতো বাউল কবি গেয়ে ওঠে- ‘বসন্ত বাতাসে সই গো/ বসন্ত বাতাসে/ বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে।’

বসন্ত ভালোবাসার ঋতু, নতুন কবিতা লেখার ঋতু, প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হওয়ার ঋতু। এই ঋতু শূন্য হৃদয় ভরিয়ে দেয় নানা রঙে। প্রকৃতিকে যারা ভালোবাসেন তাদের পছন্দের ঋতুর তালিকায় তাই বসন্তের অবস্থান একটু আলাদা। ফুলপ্রেমিদের জন্য এই ঋতু বড্ড রঙিন।

ওডি/এনএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড