• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ক্ষেপণাস্ত্র যেভাবে ধ্বংসাত্মক কাজ করে

  মো. সাইফুল ইসলাম

২২ জানুয়ারি ২০২০, ১৩:২৯
ক্ষেপণাস্ত্র
বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে (ছবি- ইন্টারনেট)

নতুন বছরের শুরুতেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপক আলোচনায় উঠে এসেছে। ইরানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল কাসেম সোলায়মানিকে যুক্তরাষ্ট্র যখন বিমান হামলায় হত্যা করে তখন ইরানও কয়েকদিনের মধ্যেই পাল্টা জবাব দেয়।

জবাব দিতে গিয়ে ইরাকে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে মিসাইল বা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। হামলায় ইরানের অন্তত ২২টি ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে নির্ভুলভাবে আঘাত হানে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নতুন কিছু নয়। মাঝে মাঝেই বিভিন্ন দেশ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। তাই এই ক্ষেপণাস্ত্র সম্পর্কে কিছু ইতিহাস ও তার ধ্বংসাত্মক কাজের কৌশল দৈনিক অধিকারের পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।

মিসাইল কী?

মিসাইল বা ক্ষেপণাস্ত্র হচ্ছে রকেট চালিত দ্রুত গতির একধরনের অস্ত্র, যা বিস্ফোরক দ্রব্যসহ টরপেডো নিয়ে খুবই নির্ভুলতার সঙ্গে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সাধারণত ছোট থেকে বৃহৎ আকৃতিরও হতে পারে। এগুলো কয়েকশত ফুট থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।

দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার জন্য ক্ষেপণাস্ত্রে সাধারণত বেশকিছু প্রযুক্তি ও ক্রিয়াকৌশল ব্যবহার করা হয়। এই প্রযুক্তি হয়তো সকল ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রে হুবহু একই না হলেও মোটামুটি একই ধরনের হয়। সাধারণত ক্ষেপণাস্ত্রে যে প্রযুক্তি ও কৌশল প্রয়োগ করে লক্ষ্য হাসিল করা হয় সেগুলো হচ্ছে–

প্রোপালসন সিস্টেম (Propulsion system) বা সম্মুখদিকে পরিচালনা পদ্ধতি

এই পদ্ধতি হচ্ছে ভারী ও তরল জ্বালানি চালিত রকেট, তরল জ্বালানি চালিত র‌্যামজেট, ভারী জ্বালানি চালিত র‌্যামরকেট এবং স্ক্যামজেট ব্যবহার করা। লক্ষ্যবস্তুতে পৌঁছানোর জন্য পর্যাপ্ত গতি প্রদান ও টরপেডোকে বহন করার সক্ষমতা থাকে এই পদ্ধতিতে।

গাইডেন্স সিস্টেম (Guidance system) বা পথনির্দেশক পদ্ধতি

এই পদ্ধতিতে উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ কৌশলের মাধ্যমে ক্ষেপণাস্ত্রের চলার পথ ঠিক রাখা হয়। এই পদ্ধতি স্বনিয়ন্ত্রিত পাইলটের কাজ করে। এছাড়াও নিচে ভূমিতে পড়ার জন্য গতিপথ ক্রমান্বয়ে নিম্নদিকে হওয়ার কাজও করা হয় এই পদ্ধতি দিয়ে।

কিছু কিছু ক্ষেপণাস্ত্রে অভ্যন্তরীণ কম্পিউটারের মাধ্যমে নির্দেশনা নিয়ন্ত্রিত হয়। আবার কিছু কিছু ক্ষেপণাস্ত্রে বাইরের উৎস যেমন রাডার থেকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়।

অ্যারোডাইনামিক (Aerodynamic) নকশা বা বায়ুসংস্থানিক পদ্ধতি

এই পদ্ধতিকে ক্ষেপণাস্ত্রের নিয়ন্ত্রণ পৃষ্ঠতলও বলা হয়। এখানে ক্ষেপণাস্ত্রের পাখনা, পাখা ও লেজ ব্যবহার করা হয়। মাছের পাখা, পাখনা ও লেজ যেমন মাছের চলার পথে হালের কাজ করে, তেমনি এই বায়ুসংস্থানিক পদ্ধতিও ক্ষেপণাস্ত্রের হালের কাজ করে।

নির্ভুল লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ (Precision guided weapons) যন্ত্র ও পদ্ধতি

নির্ভুল লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণে শেষবারের মতো পুনরায় পথনির্দেশক পদ্ধতিকে কাজে লাগানো হয়। ক্ষেপণাস্ত্র যখন লক্ষ্যবস্তু সনাক্ত করতে পারে তখন এই পদ্ধতি সচল হয়। এছাড়াও এখানেই টরপেডোর সক্রিয়করণের সময় নির্ধারিত হয়। লক্ষ্যবস্তু খুঁজে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টরপেডোকে সক্রিয় হওয়ার সংকেত প্রদান করার ক্রিয়াকৌশলও এখানেই কাজ করে।

এই লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ কাজের জন্য লেজার নির্দেশক, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন রাডার ও বর্তমানে অতি আধুনিক খোঁজকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। লক্ষ্যবস্তু নির্ভুল হলে পারিপার্শ্বিক অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষয়ক্ষতিও কম হয়।

টরপেডো (Warhead or Torpedo)

টরপেডো ক্ষেপণাস্ত্রের সামনে রাখা হয়। এটি বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক ও বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য বহন করে। প্রজ্বলন ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্যও প্রয়োজনীয় উপকরণ এখানেই থাকে।

আরও পড়ুন : কৃত্রিম মাংসপেশি তৈরি করছেন বিজ্ঞানীরা!

লক্ষ্যবস্তু ও উদ্দেশ্যের ওপর ভিত্তি করে এই টরপেডো বিভিন্ন ধরনের হয়। টরপেডোর দ্বারাই ক্ষেপণাস্ত্রটি কতটা প্রাণঘাতী তা নির্ধারিত হয়। যদি লক্ষ্যবস্তুকে ঘিরে স্বল্প পরিসরে বিস্ফোরণ ঘটাতে হয় তবে ছোট আকারের টরপেডো ব্যবহার করা হয়। অপরদিকে বৃহৎ পরিসরে বিস্ফোরণ ঘটাতে হলে বৃহৎ আকারের টরপেডো ব্যবহার করতে হয়। এছাড়াও দৃঢ় কোনো লক্ষ্যবস্তুকে আঘাত করতে চাইলে টরপেডোতে ভেদন ক্ষমতা সম্পন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার হয়। এই প্রযুক্তির ফলে টরপেডো লক্ষ্যবস্তুর গভীরে প্রবেশ না করে বিস্ফোরিত হয় না।

বিশ্বের প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র ভি-২ রকেট তৈরি করেছিল নাৎসি জার্মানি। ভি-২ রকেট দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪৪ সালে তারা প্রথম লন্ডনে আঘাত হেনেছিল। এটি উদ্ভাবন করেছিলেন ওয়াল্টার ডনবার্গার ও ওয়ার্নার ভন ব্রাউন। ক্ষেপণাস্ত্রের সূচনাই হয়েছিল ধ্বংস দিয়ে। আজও মানুষ এটি ধ্বংসাত্মক কাজেই ব্যবহার করছে। শান্তিপ্রিয় মানুষ যুদ্ধ চায় না, রক্তক্ষয় চায় না। তাই এটি ব্যবহারে চায় সচেতনতা।

সূত্র- ব্রাহমোস অ্যারোস্পেস, স্পেস ডট কম

ওডি/এনএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড