• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

তিনবার তাজমহল বিক্রি করেছিল যে প্রতারক!

  ফিচার ডেস্ক

১৯ জানুয়ারি ২০২০, ১৩:২৮
নটবরলাল
ইতিহাসের সেরা প্রতারক নটবরলাল; (ছবি- সংগৃহীত)

ইতিহাসে মানুষের নাম লেখা থাকে তার করা কাজের কারণে। কারও কথা, কারও বুদ্ধি, কারওবা সৃষ্টিতে মুগ্ধ হন মানুষ যুগের পর যুগ। তবে নটবরলালের নাম শুনলে সবাই যেন কিছুটা চমকে উঠেন। দেখতে সাধারণ এই ব্যক্তিকে ভারতের সর্বকালের সেরা প্রতারক বলা হয়। নিজের বুদ্ধি দিয়ে অগণিত মানুষকে ঘোল খাইয়েছে। সবমিলিয়ে যেন ঠগবাজের ওস্তাদ ছিলেন নটবরলাল।

ঠগের সেরা

প্রতারক হিসেবে নটবরলালের বুদ্ধি আকাশচুম্বী। সংসদের মতো ভবনকে বিক্রি করে দিয়েছিল প্রতারণা করা। বিখ্যাত লাল কেল্লা? সেটিও দুবার বিক্রি করেছে। আর সর্বকালের সেরা তাজমহলকে বিক্রি করে দিয়েছিল তিনবার। অদ্ভুত এক বিস্ময় নটবরলাল। বড় বড় গোয়েন্দা, অপরাধ বিশেষজ্ঞ তাকে নিয়ে ভেবেছেন, পুলিশরা তাকে পাকড়াও করেছেন। কিন্তু জেল ভেঙে পালিয়েছে নটবরলাল।

প্রতিবারই চ্যালেঞ্জ করে একের পর এক জাতীয় স্মারক বিক্রি করেছে তিনি। এও সম্ভব? হ্যাঁ, নটবরের পক্ষে সবই সম্ভব। খদ্দেরের মাথা চিবিয়ে তাই বিক্রি করে দেয় খোদ রাষ্ট্রপতি ভবন। পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের তাজমহলকে বিক্রি করে দেন তিনবার! কারা তার এই প্রতারণার শিকার হয়েছে? তাদের নাম আড়ালে রাখা হয়েছে। তবে প্রতিবারই মোটা অঙ্কের অর্থ নিজের পকেটে পুরেছে নটবরলাল।

নটবরের শুরুর দিক

নটবরলালের আসল নাম মিথিলেশ শ্রীবাস্তব। ১৯১২ সালে বিহারের সিওয়ান জেলার জিরাদাইয়ের বাঙ্গরায় জন্ম হয় তার। বাবা রঘুনাথ প্রসাদ ছিলেন রেল কর্মচারী। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন মিথিলেশ। আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। পেশায় আইনজীবী হলেও মানুষ ঠকানোতে নিজের দক্ষতা টের পেয়ে ছেড়ে দেয় সেই পেশা।

মিথিলেশ প্রথম প্রতারণা করে গ্রামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি মিথিলেশকে শহরের ব্যাংকে ড্রাফট জমা করে দিয়েছিলেন। জমা করার সঙ্গে ড্রাফট থেকে ওই ব্যক্তির সই নকল করে নেয় মিথিলেশ।

তারপর প্রায় ১০০০ টাকা তুলে নেয় অ্যাকাউন্ট থেকে। ১৯৩০ সালে কিন্তু এই পরিমাণ টাকা বেশ বড় অঙ্কের বলা যায়। একদিন ধরা পড়ে যায় মিথিলেশ। বাবা পেটালে, ঘর ছেড়ে পালিয়ে আসে কলকাতায়।

মিথিলেশের ছদ্মনাম ছিল ৫০ এর ওপর। তবে সবচেয়ে বেশি প্রিয় হয়ে ওঠে নটবরলাল নামটি। এই নামের জনপ্রিয়তা এতই বেশি যে এখনো ভারতে প্রতারক শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে এটি ব্যবহার করা হয়।

কলকাতায় গিয়ে এক ব্যবসায়ীর ছেলেকে টিউশন পড়ানো শুরু করেন নটবরলাল। সেখানে তুলোর ব্যবসায়ী শেঠকে ঠকিয়ে সাড়ে চার লাখ টাকা হাতিয়ে নেন তিনি। সেই শুরু, এরপর ৬৬ বছর ধরে ভারতের আটটি রাজ্যের প্রায় ৪০০ লোককে ঠকিয়ে কোটি টাকা উপার্জন করেন তিনি।

জেল পালানোর মন্ত্র

অন্তত ১০০টি প্রতারণা ও জোচ্চুরির মামলা ছিল নটবরের বিরুদ্ধে। ৮ রাজ্যের পুলিশ বাহিনী তার পেছনে লেগেছিল আঠার মতো। বিভিন্ন মামলায় তার সম্মিলিত সাজার মেয়াদ হয় ১১৩ বছর। তাতে নটবরের কী? ৯ বার পালিয়েছে জেল ভেঙে। চলে গিয়েছে পুলিশের নাগালের বাইরে। আবার পালিয়েছে। জেল ভাঙার মন্ত্র যেন জানা ছিল তার। মোট ২০ বছর জেলে ছিলেন নটবর। বয়স বাড়লেও কমেনি অপরাধের মানসিকতা।

১৯৯৬ সালে ৮৪ বছর বয়সে সর্বশেষ ধরা পড়েছিল নটবর। সেবার অসুস্থতার ভান করে হাসপাতালে থাকার অনুমতি জোগাড় করে তিনি। জেল থেকে হুইল চেয়ারে হাসপাতালে যাওয়ার মাঝেই হাওয়ায় মিলিয়ে যায় ঠগের শিরোমণি নটবরলাল। এরপর আর তার দেখা মেলেনি। পরিবারের দাবি তার মৃত্যু হয়েছে। যদিও এ কথা বিশ্বাস করতে পারেননি পুলিশকর্তারা।

আরও পড়ুন : কার্ল স্মিট : মৃত্যুর পূর্বে নিজের অনুভূতি লিখেছিলেন যিনি

কানপুর আদালতে জজসাহেব একবার নটবরলালকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘কীভাবে লোকদের ঠকাও?’। জজের কাছে এক টাকা চেয়েছিল তিনি। টাকা নিয়ে পকেটে পুরে নটবরলাল উত্তর দিয়েছিল, ‘আমি লোকেদের কাছে চাই, এভাবেই লোক আমাকে দিয়ে দেয়।

আমি কাউকে বন্দুক দেখিয়ে বা মারধর করে লুট করিনি। দেড়শটি মামলার মধ্যে একটিতেও আমার বিরুদ্ধে আক্রমণ বা আঘাত করার অভিযোগ নেই। আমি চেয়েছি ওরা দিয়েছে। ভারত সরকার চাইলে আমার বুদ্ধি ধার নিতে পারে। বিদেশিদের কাছে ভারতের ধার মিটিয়ে দেব আমি।’ বলাবাহুল্য, এক টাকা সে আর জজসাহেবকে ফেরত দেয়নি।

পুরো বিশ্ববাসী নটবরলাল প্রতারক হিসেবে পরিচিত হলেও বাঙ্গরা গ্রামের অধিবাসীরা তাকে ভগবান মানে। তবে তাকে শুধু ‘নটবরলাল’ বলা যাবে না। সেখানে গেলে বলতে হবে ‘মিস্টার নটবরলাল’ বা ‘মিথিলেশ বাবু’। গ্রামের লোকেরা আজও বলেন, গরিবদের লুটে যারা বড়লোক হয়েছিল, তাদের লুটে মিথিলেশ বাবু সেই টাকা আবার গরিবদের ফিরিয়ে দিত।

ওডি/এনএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড