সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দ্বারা আমরা সবাই কম-বেশি সংযুক্ত। একজন মানুষের হাজার হাজার বন্ধু। ভালো কাজে উৎসাহিত করার মতো চেহারা অনেক। কিন্তু এতো ভালোর মধ্যেও মানুষকে হতাশা চেপে বসে কীভাবে? মানুষ এই ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যুগে কি একটু বেশিই হতাশ হয়ে পড়ছে? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঙ্গে আমাদের হতাশার যোগাযোগটা কোথায়?
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও এর প্রভাব
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো আমাদের ওপরে কী প্রভাব ফেলছে তা নিয়ে গবেষণা চলছে অনেক আগে থেকেই। এর আগে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে মানুষের ঘুম কম হচ্ছে, এটি মানুষকে নেশার দিকে ঠেলে দিচ্ছে- এমন অনেক ব্যাপারে গবেষণা হলেও এবার একটি নতুন দিক উন্মোচন করেছেন বিজ্ঞানীরা। আর সেটি হলো হতাশা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার একজন মানুষকে হতাশার দিকেও ঠেলে দিচ্ছে বলে মনে করছেন তারা। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র গবেষণা নয়, বরং পুরো একটি গবেষণা চালানো হয় এ ব্যাপারে। এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মোট দুইভাগে ভাগ করা হয়। কানাডার অন্টোরিওতে পরিচালিত এই গবেষণার একদলে ছিল স্কুলপড়ুয়া ৫৯৪ জন শিক্ষার্থী। অন্যদলে রাখা হয় ১ হাজার ১৩২ জন স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীকে।
স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের প্রতি দুই বছরে একবার কিছু প্রশ্ন করা হয়। অন্যদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়ারা টানা ছয় বছর প্রশ্নের সম্মুখীন হন। এ ক্ষেত্রে তাদের তারা কতটা সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কাটান, কতটা সময় পরিবার, খেলা বা অন্যান্য দিকে কাটান সেটা জানতে চাওয়া হয়।
পাশাপাশি তারা ভিন্ন ভিন্নভাবে এই ব্যক্তিদের মানসিক সমস্যা, হতাশা ইত্যাদির দিকটাও পরীক্ষা করার চেষ্টা করেন। পরবর্তীকালে বয়স ও লিঙ্গভেদে পুরোটা তথ্যও বিশ্লেষণ করা হয়। আর এর ফলে বেরিয়ে আসে সত্যিকারের তথ্য।
সম্প্রতি ‘ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা যায় যে, নারীদের মধ্যে হতাশা থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের প্রবণতা বেশি দেখা যায়। মানসিকভাবে কোনো সমস্যা বোধ করলে একটু ভালো বোধ করার জন্য তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবেশ করে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভয় : কতটা সত্যি?
এই গবেষণায় পাওয়া তথ্যানুসারে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হতাশা বাড়ায়- এই তথ্যটি সঠিক নয়। মূলত, এই ব্যাপারে অনেকদিন ধরেই মানুষের মধ্যে ভয় কাজ করছে। এই যেমন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাবা-মা যখন দেখছেন যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হতাশা বাড়িয়ে দেয়, তখন তারা সন্তানকে প্রযুক্তির কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন।
ব্যাপারটি এমন নয় যে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা প্রযুক্তির কোনো নেতিবাচক প্রভাব নেই। যে কোনো কিছুই অতিরিক্ত ব্যবহার করলে তার একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ব্যবহারকারীর ওপরে। তা ভালো কিছুই হোক, কিংবা খারাপ কিছু হোক। প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও এই কথাটি একইভাবে সত্যি। আপনি প্রযুক্তি কীভাবে ব্যবহার করছেন সেটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন- সিজনাল ডিপ্রেশন : বারে বারে ফিরে আসে যে হতাশা!
অনেক সময়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন মানুষ অন্যদের ইতিবাচক প্রচার দেখে যেমন ভালো বোধ করতে পারেন, তেমনই খারাপ বোধ করতে পারেন। এই পুরোটা ব্যাপারই মূলত নির্ভর করে একজন মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে কীভাবে দেখছেন এবং কীভাবে ব্যবহার করছেন তার ওপরে।
তাই প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে আর ভয় নয়। পরিমিতভাবে এবং ইতিবাচকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও প্রযুক্তি ব্যবহার করুন। এতে করে আপনি ও আপনার সন্তান সবাই শুধু যে হতাশা থেকে দূরে থাকবেন তা নয়, মানসিক ও শারীরিক নানাবিধ সমস্যা থেকেও মুক্ত থাকবেন।
সূত্র- মাউন্ট এলিজাবেথ হসপিটাল
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড