• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বনজঙ্গল উজাড়ে সংক্রামক রোগের ঝুঁকিতে পড়ছে মানুষ

  মো. সাইফুল ইসলাম

০৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৩:১৪
বন
ছবি : প্রতীকী

আমাদের দেশসহ সারাবিশ্বে বনাঞ্চল ক্রমশ ধ্বংস হওয়া প্রাণ, পরিবেশ ও প্রকৃতির জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমান বিশ্বের আলোচিত বিষয় হচ্ছে অ্যামাজন বনে অগ্নিকাণ্ড ও তার ভয়াবহতা। অ্যামাজন বনের অগ্নিকাণ্ডের জন্য সেখানকার কৃষক ও সরকারকেই দায়ী করা হয়।

এইতো গত সপ্তাহে চট্টগ্রামের লোকালয়ে হাতি প্রবেশ করে কয়েকজন লোকের প্রাণ নিয়ে চলে যায়। এছাড়াও দেশের নানা স্থানে বন্যপ্রাণীর তাণ্ডব দেখে মানুষ। হাতির তাণ্ডবের জন্য বন্য পরিবেশ ধ্বংস ও খাদ্য সংকটকে দায়ী করা হয়।

আমরা হাতিকে স্বচোখে ক্ষতি করতে দেখি। তাই হয়তো তা নিয়ে আমাদের আলোচনা-সমালোচনার সীমা থাকে না। কিন্তু যা দেখি না অর্থাৎ বনাঞ্চল ধ্বংসের ফলে কী ধরনের হুমকিতে পড়ছি তা কি কখনো ভেবে দেখেছি?

১৯৯৭ সালে ইন্দোনেশিয়ার রেইনফরেস্ট আগুনের ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল। সে সময় ইন্দোনেশিয়া মারাত্মক কিছু বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছিল। আগুন লাগার কারণে সেখানে খরা হয়েছিল। আগুনের ফলে ৯ দশমিক ৭ থেকে ১১ দশমিক ৭ মিলিয়ন হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

এছাড়াও সে সময় আরেকটি মারাত্মক সমস্যা হয়েছিল। যা হয়তো কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। ফ্রুট ব্যাট বা ফলাহারি বাদুড় তাদের আবাস হারিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যায়। এমনকি বাদুড়গুলো মালয়েশিয়ার বাগানে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সেগুলো সেখানকার ফলমূল খেতে থাকে। অতঃপর তাদের খাওয়া ফল মাটিতে পড়লে শুকর সেগুলো খায়।

দেখা যায়, ফল খাওয়ার পর শুকরগুলো অসুস্থ হয়ে পড়ে। পাশাপাশি শুকর খামারিরাও অসুস্থ হয়। এভাবে ১৯৯৯ সালের মধ্যে ২৬৫জন ব্যক্তি আক্রান্ত হয়। যার মধ্যে মস্তিষ্কের প্রদাহজনিত কারণে ১০৫ জনই মারা যায়। এই মৃত্যুর কারণ ছিল নিপাহ ভাইরাস, যা বাদুড়ের মাধ্যমে ছড়িয়েছিল। নিপাহ ভাইরাস সম্পর্কে মানুষ তখনই প্রথম জানতে পারে।

বনজঙ্গল উজাড়ের ফলে শুধু নিপাহ ভাইরাসই নয়, লাসা ভাইরাস ও ম্যালেরিয়ার মতো মারাত্মক জীবাণুরও বিস্তার ঘটে। ২০০৩-২০১৫ সালের মধ্যে বাৎসরিক গড় বনাঞ্চল হ্রাসের পরিমাণ দাঁড়ায় শতকরা ১০ ভাগ।

সে সময় ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা শতকরা ৩ ভাগ বৃদ্ধি পায়। পরিবেশবিদ, মানব চিকিৎসক ও প্রাণী চিকিৎসকরা যারা নিয়মিত সংক্রামক রোগ ও জুনোটিক রোগ নিয়ে গবেষণা করছেন তারা এসব রোগ ছড়ানোর ক্ষেত্রে বনাঞ্চল ধ্বংসকে অনেক বড় নিয়ামক মনে করেন।

বনজঙ্গল উজাড় করার ফলে শুধু মশা ও মশাবাহিত রোগেরই বিস্তার ঘটছে এমন নয়। এইচআইভি (এইডস), ইবোলা, নিপাহ এর মতো মারাত্মক সব জীবাণুর উৎপত্তি হচ্ছে বন্যপ্রাণী থেকে। যেগুলো বৃহৎ পরিসরে অন্যান্য প্রাণী ও মানুষে রোগ ছড়িয়েছে।

নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক একটি অলাভজনক সংগঠন ‘ইকো হেলথ অ্যালায়েন্স’- এর গবেষকরা বিশ্বব্যাপী সংক্রামক রোগের গতিবিধির ওপর নজর রেখেছিল। তাদের গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায়, প্রতি তিনটি নতুন ও উদীয়মান রোগের প্রায় একটির জন্য দায়ী থাকে বনাঞ্চল ধ্বংস।

সাধারণত অনেক জীবাণুই প্রাণীদেহে বসবাস করে। যেগুলো প্রাণীদেহে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে না। কিন্তু মানবদেহে সেগুলো মারাত্মক রোগ সৃষ্টি করতে পারে। বনাঞ্চল ধ্বংস হয় হলে প্রাণীগুলো মানব বসতির আশপাশে চলে আসবে ও মারাত্মক জীবাণুর বিস্তার ঘটাবে।

লাইবেরিয়াতে পাম তেল বৃক্ষ চাষের জন্য বনাঞ্চল উজাড় করায় এক ধরনের ইঁদুর দলবল নিয়ে মানব বসতির আশপাশে চলে আসে। সেগুলো মানব বসতির আশপাশেই বসবাস করতে থাকে। এক সময় ইঁদুরের লালা, প্রস্রাব এবং রক্তের সংস্পর্শে এসে মানুষ লাসা ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হয়। এই জ্বর মানুষের জন্য খুবই মারাত্মক। পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোতে প্রতি বছর ৩ লক্ষের মতো লোক এই জ্বরে আক্রান্ত হয়। যাদের মধ্যে ৫-১০ হাজার লোকের মৃত্যু ঘটে। আর শুধু লাইবেরিয়াতে শতকরা ৩৬ ভাগ মৃত্যুর কারণ এই জ্বর।

বোরেলিয়া প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া লাইম রোগের জন্য দায়ী। এই ব্যাকটেরিয়া হরিণ ও এক ধরনের ইঁদুরের শরীরে থাকা আটুলিতে পাওয়া যায়। বনাঞ্চল ধ্বংস করে মানুষ যখন বনের ভেতর অথবা কাছাকাছি থাকতে যায় তখন এই ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়।

জানা রোগের পাশাপাশি বনাঞ্চলে থাকা প্রাণীদের মাঝে অনেক অজানা রোগের জীবাণুও আছে বলে অনেক বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছেন। বনের মাঝে লুকিয়ে থাকা জীবাণুগুলো হয়তো হঠাৎই বনখেকোদের কারণে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই বনজঙ্গল উজাড় করার পূর্বে সকলকে সচেতন হতে হবে। অন্যথায় মানব জীবন হুমকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তথ্যসূত্র : ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ফরেস্ট্রি রিসার্স

ওডি/এনএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড