• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘আমি হাসি হাসি পরব ফাঁসি’

  নিশীতা মিতু

০৩ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:০৭
ক্ষুদিরাম বসু
ছবি : সংগৃহীত

এই পৃথিবীতে কিছু মানুষের আগমন ঘটে ক্ষণিকের তরে। ক্ষণজন্মা জীবন তাদের পুরোটাই থাকে ঘটনাবহুল। তারা করে যান এমন কিছু কাজ যা আমাদের বাধ্য করে তাদের সারাজীবন মনে রাখতে। এমনই একজন ক্ষুদিরাম। যার নাম থেকে শুরু করে কর্ম—পুরোটাই ঘটনায় মোড়া। মাত্র ১৮ বছর জীবনকালের এই তরুণ যুগের পর যুগ ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন।

ক্ষুদিরাম বসু জন্মগ্রহণ করেছিলেন ১৮৮৯ সালের ৩ ডিসেম্বর মেদিনীপুর জেলার কেশপুর থানর মৌবনী গ্রামে। মা লক্ষ্মীপ্রিয় দেবীর তিন কন্যার পর চতুর্থ সন্তান তিনি। বড় দুই ছেলেকে অকালে হারিয়েছেন বলে ছোট ছেলের মৃত্যুশঙ্কায় তখনকার সমাজের রীতি অনুযায়ী নিজের সন্তানকে বড় বোনের কাছে বিক্রি করে দেন তিন মুঠো খুদের (চালের ভাঙা অংশ) বিনিময়ে। খুদের বিনিময়ে কেনা বলেই তার নাম রাখা হয়েছিল ক্ষুদিরাম।

ছোট বেলা থেকেই দেশ আর রাজনীতির প্রতি আগ্রহ ছিল ক্ষুদিরামের। তাই একটু বড় হয়েই যোগ দেন বিপ্লবী রাজনৈতিক দল ‘যুগান্তরে’। ইংরেজ শাসনের হাত থেকে নিজের জন্মভূমিকে রক্ষা করার জন্য তিনি ছিলেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। দলের জন্য কাজ করতে গিয়ে ‘সোনার বাংলা’ শীর্ষক বিপ্লবাত্মক ইশতেহার বিলি করার সময় গ্রেফতার করা হয় তাকে।

অকুতোভয় এক কিশোর ক্ষুদিরাম। সত্যেন বসুর নেতৃত্বে শারীরিক শিক্ষার পাশাপাশি রাজনৈতিক শিক্ষা লাভ করেন তিনি। প্রশিক্ষণ নেন অস্ত্র চালনার ওপরও। গুপ্ত সংগঠনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে ইংল্যান্ডে উৎপাদিত কাপড় জ্বালিয়ে দেন এবং ইংল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত লবণ বোঝাই নৌকা ডুবিয়ে দেন। দেশমুক্তির জন্য এসব কাজ ছিল তার সততা, নিষ্ঠা আর সাহসিকতার বহিঃপ্রকাশ।

নিজ কর্মের কারণে ধীরে ধীরে গুপ্ত সংগঠনের ভেতরে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। আর তাই ইংরেজদের রোষানলে পরিণত হন ক্ষুদিরাম। যেভাবেই হোক তাকে সাজা দেওয়ার চিন্তা করেন কলকাতার চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড। এমনকি ক্ষুদিরামদের গুপ্ত দলের আরও বেশ কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ড দেন কিংসফোর্ড।

তাই সংগঠনের পক্ষ থেকে কিংসফোর্ডকে শায়েস্তা করার দায়িত্ব পড়ে ক্ষুদিরামের ওপর। তাকে মারার উদ্দেশ্যে মুজাফফরপুর যান এই সৈনিক। ১৯০৮ সালের ৩০ এপ্রিল ক্ষুদিরাম আর প্রফুল্ল চাকির এক সঙ্গে মিলে গাড়িতে ব্রিটিশ বিচারক, ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড আছে ভেবে তাকে গুপ্তহত্যার জন্যে শক্তিশালী বোমা ছুড়েছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত তিনি ছিলেন অন্য গাড়িতে। এই ঘটনায় সেই গাড়িতে থাকা দুই নারী মিসেস কেনেডি ও তার মেয়ের মৃত্যু হয়।

প্রফুল্ল চাকির অবশ্য গ্রেফতারের আগেই আত্মহত্যা করেন। কিন্তু ক্ষুদিরামকে ঠিকই গ্রেফতার করা হয়। দুজন মহিলাকে হত্যা করার জন্যে তার বিচার কাজ শুরু হয়। দীর্ঘ বিচার কাজ শেষে চূড়ান্তভাবে তার ফাঁসির আদেশ দেন ব্রিটিশ আদালত।

১৯০৮ সালের ২১ মে ক্ষুদিরামের বিচার শুরু হয়। ফাঁসির রায় শুনে কান্না নয় বরং মুচকি হাসেন তিনি। বয়স কম, দেওয়া হয়েছে ফাঁসির আদেশ। তবে কি না বুঝেই হাসছেন ক্ষুদিরাম? এমন ভাবনা থেকেই বিচারক কর্নডফ প্রশ্ন করেন, ‘তোমাকে যে ফাঁসিতে ঝুলে মরতে হবে সেটা কি তুমি বুঝেতে পেরেছ?’ জবাবে আবারও মুচকি হাসেন ক্ষুদিরাম। ফের প্রশ্ন করা হয় তাকে। অকুতোভয় কণ্ঠে এ বীর তখন বলে ওঠেন- ‘বন্দেমাতরম’।

দেশের চেয়ে নিজের জীবন হয়তো খুব নগণ্য ছিল এই কিশোরের কাছে। তাই মৃত্যুর রায় শুনেও বিন্দুমাত্র কষ্ট ছুঁয়ে যায়নি তাকে। মৃত্যুর শেষ সময় পর্যন্ত তার মনোবল ছিল দৃঢ়। ফাঁসিতে ঝোলানোর আগে কারা কর্তৃপক্ষ তার কাছে শেষ ইচ্ছা জানতে চান। ক্ষুদিরাম এক সেকেন্ড অপেক্ষা না করেই বলে উঠলেন, ‘আমি ভালো বোমা বানাতে পারি, মৃত্যুর আগে সারা ভারতবাসীকে সেটা শিখিয়ে দিয়ে যেতে চাই।’

উপস্থিত কারা কর্তৃপক্ষ সেদিন ক্ষুদিরামের এই মানসিক দৃঢ়তায় অবাক হয়েছিলেন। সে সঙ্গে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের প্রতি তীব্র ঘৃণাবোধ উপলব্ধি করেছিলেন। দেশের জন্য কাজ করে, হাসিমুখে ফাঁসির দড়ি গলায় পরেন ক্ষুদিরাম। এমন একজন দেশপ্রেমিকের নাম শত সহস্র বছর ইতিহাসের পাতার লেখা রবে স্বর্ণাক্ষরে।

ওডি/এনএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড