• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মুক্তিযুদ্ধে মজলুম জননেতার অবদান

  রফিকুল ইসলাম জসিম

১৭ নভেম্বর ২০১৯, ১৩:৩৯
ছবি
ছবি : মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী

মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭৬ সালের এই দিনে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসের দিকে যদি আমরা তাকাই তাহলে দেখতে পাই যে, বঙ্গবন্ধুর পাশাপাশি যিনি এক অনবদ্য অবদান রেখেছিলেন তিনি হলেন মওলানা ভাসানী। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য তিনি যে ভূমিকা রেখেছিলেন তা আলোচনা ও স্মরণ করার মত একটি উজ্জ্বল ভূমিকা।

মওলানা ভাসানী ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ বিরোধী অসহযোগ ও খেলাফত আন্দোলনে যোগদানের মধ্য দিয়ে তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়। কৃষক আন্দোলনের নেতা হিসেবে তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু। তিনি সবসময় রাজনীতি করেছেন অধিকার বঞ্চিত মানুষের জন্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পরে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তিনি ৯ মার্চ, ১৯৭১ সালে পল্টনে এই ভাষণ দেন। দুই প্রধান নেতার একই সিদ্ধান্তে চলে আসার একটি উদাহরণ স্থাপিত হয়। তবে এ উদাহরণটি ইতিহাসের পাতায় অনেকটাই অনুপস্থিতই বলা যায়।

১৯৭১ এর জানুয়ারি হতে ২৫ মার্চ পর্যন্ত মওলানা ভাসানী সারাদেশে জনসভা করে জনগণকে সশস্ত্র যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন । যে কোনো আন্দোলনের জন্য তৃণমূল গঠন কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা বোধহয় রাজনীতিতে সক্রিয় নেতাকর্মী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বোঝানোর জন্য আলাদা করে কোনো শব্দপ্রয়োগের প্রয়োজন হবে না ।

যুদ্ধ শুরু হবার পর ৪ এপ্রিল পাকসেনারা মওলানা ভাসানীকে হত্যা অথবা গ্রেফতাদের উদ্দেশ্যে সন্তোষে এসে তাকে খুঁজতে থাকে এবং জিজ্ঞেস করে, ‘কাফের ভাসানী কোথায়?’ তাকে না পেয়ে তার বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। পাকবাহিনীর দৃষ্টি এড়িয়ে নানা কৌশলে মওলানা ভাসানী পাড়ি জমান ভারতে ।

ভারতে প্রবেশের পরদিন আনন্দবাজার পত্রিকার কলাম জুড়ে ছাপা হয়,

‘সীমান্তের এপার ভাসানী – সজল চোখে সাহায্য প্রার্থনা’ সেখানে লেখা হয়...

যুদ্ধকালীন সময়ে ভারতে অবস্থান করে মওলানা ভাসানী মুক্তিযুদ্ধকে সুদৃঢ় এবং মুক্তিযুদ্ধের গতিবেগ সঞ্চার করার জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব, মুসলিম বিশ্বের কাছে, গণতান্ত্রিক সকল রাষ্ট্রসহ বিশ্ববাসীর কাছে এবং ’৭১ এ চীন ও আমেরিকা বাংলাদেশের বিরোধিতা ও পাকিস্তানকে সমর্থন করায় মওলানা ভাসানী তাদের কৃত অন্যায়ের প্রতিবাদ করে একের পর এক বিবৃতি প্রদান করে চিঠিপত্র ও টেলিগ্রাম পাঠান । মওলানা ভাসানী সাহসিকতা ও বিচক্ষণতার সাথে এ ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করে স্বাধীনতা সংগ্রামকে আরো শক্তিশালী ও গতিশীল করে বিজয়ের পথে নিয়ে যায় ।

১৯৭১ সালের ২৫ এপ্রিল মওলানা ভাসানী সোভিয়েত রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কাছে পাকিস্তান বাংলাদেশের জনগণের ওপর যে বর্বরোচিত অত্যাচার চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন। ৩১ মে মওলানা ভাসানী এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ দখলদার বাহিনীর সঙ্গে জীবনমরণ সংগ্রামে লিপ্ত। তারা মাতৃভূমি রক্ষার জন্য বদ্ধপরিকর। তারা এই সংগ্রামে জয়লাভ করবেই। ৭ জুন মওলানা ভাসানী এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের সব অঞ্চল আজ দশ লাখ বাঙালির রক্তে স্নাত এবং এই রক্তস্নানের মধ্য দিয়েই বাংলার স্বাধীনতা আসবে।

১৯৭১ সালের ৮ সেপ্টেম্বর কলকাতায় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ, ন্যাপ সহ ৫ রাজনৈতিক দলের নেতাদের বৈঠকে ‘জাতীয় উপদেষ্টা কমিটি’ গঠিত হয়, যা ‘সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদ’ নামে পরিচিতি লাভ করে। ৮ সদস্য বিশিষ্ট এ পরামর্শক কমিটির সভাপতি ছিলেন মওলানা ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ। আন্তর্জাতিক শক্তিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার অনুকূলে আনতে এ কমিটি সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যুদ্ধের পুরো সময় মওলানা ভাসানী ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে সহায়ক ভূমিকা রাখতে জাতিসংঘ, চীন, রাশিয়া সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে তারবার্তা প্রেরণের পাশাপাশি তাঁর আন্তর্জাতিক প্রভাবের সর্বাত্মক ব্যবহার করেছিলেন।

সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশের মহানায়ক যদি ভাসানী হন তবে স্বার্থহানী হবে ভারতের কারণ ভাসানী হক কথা বলতে দ্বিধা বোধ করতেন না এবং রাষ্ট্রীয় স্বার্থের সাথে ব্যাপারে তিনি ছিলেন আপোষহীন । সেজন্যই ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়া স্বত্বেও মওলানা ভাসানী স্বাধীন দেশে পা রাখেন পাকিস্তানে কারাবন্দী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেশে ফেরার ১২ দিন পর । ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি ঢাকায় ফিরে তিনি সর্বপ্রথম যে দাবিটি তোলেন তা হলো বাংলাদেশ ভূখণ্ড থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অপসারণ।

১৯৭৬ সালে মওলানা ভাসানী ১৭ নভেম্বর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই তাঁর সংগ্রামী জীবনের অবসান ঘটিয়ে চিরবিশ্রামে চলে যান পরোপারে। তাঁর মৃত্যুর সংবাদ প্রচারিত হলে প্রিয় নেতাকে শেষবারের মত দেখার জন্য অসংখ্য মানুষ ছুটে যান হাসপাতালে। তাঁর মৃত্যুতে সরকারীভাবে ৭ দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়। পরদিন ১৮ নভেম্বর অপরাহ্ণে পরিপূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় টাঙ্গাইলের সন্তোষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তাঁকে সমাহিত করা হয়।

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সেই মাপের একজন মানুষ ছিলেন। মওলানা ভাষানীর মুক্তিযুদ্ধে অবদান সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়ুক। শুধু মৃত্যুবার্ষিকী কেন্দ্রিক স্মরণ না করে তার চেতনাকে আমরা নিজেদের কাজের মধ্যে লালন করে সুখী সমৃদ্ধশালী দেশ গড়ি এই হোক প্রত্যয়।

তথ্য সূত্র:

১) বাংলা পিডিয়া ২) গ্রন্থ : মওলানা ভাসানী: রাজনৈতিক জীবন ও সংগ্রাম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড