টোকিও থেকে, মাজহারুল ইসলাম
জাপানের টোকিও শহর কমবেশি ঢাকার মতোই। সেখানেও প্রচুর ট্রাফিক জ্যাম আছে। মানুষ নিজেদের মতো ব্যস্ত, অফিসের সময় সড়কে প্রচণ্ড যানজট, মানুষের হুড়োহুড়ি বা তাড়াহুড়া সব কিছুই ঢাকার মতো বরং অনেকাংশে বেশি। এমনকি টোকিওতে ঢাকার চেয়ে বেশি মানুষ একসঙ্গে বের হয়। তবে ওরা কীভাবে এগুলো ম্যানেজ (মানিয়ে নেয়) করে এটাই মূল আকর্ষণ-
চমৎকার অভিজ্ঞতা- জাপানের শিনজুকু নামে একটি স্টেশন আছে, সেখানে ২০০৭ এর এক হিসাব অনুসারে প্রতিদিন ৩ দশমিক ৭ মিলিয়ন মানুষ (প্রায় ৩৭ লাখ) এই স্টেশন দিয়ে চলাচল করে। একবার চিন্তা করে দেখুন প্রতিদিন স্টেশনে কী পরিমাণ ভিড় হয়। যখন যাত্রীরা ট্রেনে ওঠে তখন তাদের জন্য খুব অল্প সময় বরাদ্দ থাকে। এ সময়ে একদম ঠাসাঠাসি করে ট্রেনে ওঠা এখানকার স্বাভাবিক ঘটনা। এমনকি মানুষের ভিড়ে দরজা যখন বন্ধ করা যায় না তখন যাত্রীদের নামিয়েও দেওয়া হয় না।
প্রতিটি স্টেশনে কিছু গার্ড থাকেন। যখন দরজা বন্ধ করার সময় হয় কিন্তু যাত্রীর চাপ দরজা আটকানো যায় না তখন যাত্রী কাকে নামতে বলবেন? তখন গার্ডরা কাউকে না নামিয়ে যাত্রীদের ভেতরে চাপিয়ে দরজা বন্ধ করতে সহায়তা করেন।
কিছু প্রশ্ন- কীভাবে সামলে নেয় এত মানুষ? এত মানুষের ভাড়া কীভাবে নেয়? এত মানুষ প্রতিদিন কত জনের মাথা ফাটায়? এক জনের আগে আরেক জন ঢুকে, ট্রেনে সিট নিয়ে হট্টগোল?
সুন্দর সমাধান- মোটামুটি সবাই ক্রেডিট কার্ডের মতো পাস কার্ড ব্যবহার করেন। কার্ডে টাকা রিচার্জ করা থাকে। অনেকটা ডিজিটাল ওয়ালেটের মতো। এই কার্ড দিয়ে কেনা কাটাও করা যায়। আপনি যখন এক স্টেশন থেকে কার্ড পাঞ্চ করবেন তখনই কাজ শেষ। উঠে যান ট্রেনে। আর কেউ ভাড়া চাইবে না। আবার যে গন্তব্যে যাবেন সেই স্টেশন থেকে বের হবার পথে একইভাবে কার্ড পাঞ্চ করে বের হয়ে যাবেন। অটোমেটিক আপনার প্রবেশের স্টেশন থেকে বের হবার স্টেশনের দূরত্ব অনুসারে কার্ড থেকে টাকা কেটে যাবে।
কিন্তু আপনার কার্ড না থাকলে? সে ক্ষেত্রেও প্রতিটা স্টেশনে রাখা আছে অটোমেটিক টিকিট কাউন্টার, কম্পিউটার স্ক্রিনে কোন স্টেশনে যাবেন ইনপুট দিলে টিকিট বের হয়ে আসবে, সেই টিকিটটি স্টেশনে প্রবেশের পথে রাখা পাঞ্চ করার যায়গাতে দিলেই হবে।
এত মানুষের ভিড় যেভাবে সামলায়- খুব সম্ভবত পৃথিবীর সেরা পাবলিক ট্রান্সপোর্টেশন সিস্টেম ট্রেন। শহরে মেট্রেরেল। যে যেখানে যেতে চায় বেশিরভাগই ট্রেনে যায়। এতে সড়কে প্রাইভেটকারও কম একই সঙ্গে ভিড়ও কম থাকে। সবাই সময়মতো পৌঁছায় তাই এটাই বেশি গ্রহণযোগ্য। আর যদি ট্রেন ২ থেকে ৩ মিনিট লেট করে তাহলে ডিলে সার্টিফিকেট দেয়। আর কোন ট্রেন লাইনে লেট হচ্ছে সেটা স্টেশনের নিউজ স্ক্রলে দেখায়, কারণসহ।
আর মানুষজন ট্রেনে ঠাসাঠাসি করে প্রবেশ করেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। সিটে বসে যাতায়াত করে যে কয়জন তার চেয়ে ২ থেকে ৩ গুণ যাত্রী দাঁড়িয়ে যাতায়াত করে। ট্রেনে চুপচাপ থাকার বিষয়টি সম্ভবত জাপানিদের জাতিগত বৈশিষ্ট্য। প্রথমে ভেবেছিলাম তারা কম সামাজিক, প্রথমে অবাক লাগলেও এখন লজিক্যাল (যুক্তিসঙ্গত) মনে হয়। এত মানুষ যদি নানা ইস্যুতে কথা বলা শুরু করত তাহলে কি যে হতো।
আর সিটে বসার ক্ষেত্রে এরা বৃদ্ধ, মহিলা, প্রতিবন্ধীদের প্রাধান্য দেয়। কিন্তু তবে নিজে বসার চেয়ে অন্যদের একটু সুবিধা দেয়। আমিও সে দিন একজনকে বসতে দিয়েছিলাম, অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে বসেছিল, কিন্তু আরেকদিন যখন একজনকে বসতে বলি সে তখন আমাকেই বসতে দেয়।
ঢাকার বুকে মেট্রোরেল- আমাদেরও আশার বিষয় হচ্ছে ঢাকাতেও মেট্রোরেলের কাজ চলছে। ওটা নিয়ে অনেকের মতো আমারও সন্দেহ ছিল ঢাকার মেট্রোরেলে শহরের যানজট কমাবে কি না। কিন্তু জাপানের মতো দেখলে আসলে ঢাকাতে মেট্রোরেল ছাড়া বিকল্প নেই।
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় ট্রেনই একমাত্র মুক্তি- অনেক দূরের পথ থেকেও অফিস করে বাসায় ফেরা যায়। চিন্তা করে দেখেন- কুমিল্লা, ময়মনসিং, গাজীপুর, টাঙ্গাইলের লোকজন ঢাকায় অফিস করে দিনেই বাসায় ফিরে যাচ্ছেন। তখন ঢাকায় বাসা ভাড়া কমে যাবে একই সঙ্গে কমবে ট্রাফিকের চাপ। জাপানিদের আবর্জনা ব্যবস্থাপনা কত সুন্দর সেটা আরেকদিন বলা যাবে। শুধু বলে রাখি- বায়ু দূষণ মাত্রায় AQI ইনডেক্স ১৫০ সহনীয় মাত্রা। সেখানে কিছুদিন আগে দিল্লিতে ৮০০ হয়েছিল আর ঢাকায় সচরাচর ৩৫০ এর মতো থাকে। সেখানে জাপানে ছিল ২০। এগুলোর সঙ্গে আবর্জনা, সুয়ারেজ, বাসা বাড়ির ময়লার খুব নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।
ওডি/এসএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড