অধিকার ডেস্ক
ভাবুন তো, মাত্র ২০ বছর বয়সেই আপনি আর হাঁটতে পারছেন না, গাড়ি চালাতে পারছেন না অথবা খেলতেও পারছেন না! চিকিৎসক জানিয়ে দিয়েছেন এভাবেই চলবে যতদিন বাঁচবেন। আর সেই বাঁচাটাও কিন্তু দীর্ঘ নয়! মাত্র ৪০ বছর! বাকি ২০ বছর তো অনেক দূর, সামনের দিনগুলোতেও হয়তো সুন্দর এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার ইচ্ছেটা আপনার মরে যাবে। কিন্তু এই ভয়াবহ সত্যিটা মেনে নিয়ে এখন পর্যন্ত বেঁচে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরির ২৩ বছর বয়সী চার্লি হেনরোট।
তার শরীরে এমন কিছু অসুখ দানা বেঁধেছে যা তাকে ধীরে ধীরে পাথর বানিয়ে দিচ্ছে। আর এই অসুখের কারণে সে মাথার উপর হাত তুলতে পারে না। এই অবস্থায় চার্লির সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় তার চোয়াল খুলতে। কারণ সে মাত্র ২ মিমি পর্যন্ত মুখ খুলতে পারে। যা তার কথা বলায় বিশেষ করে খাওয়াদাওয়ায় খুব কষ্ট দেয়।
চার্লির ফাইব্রোডিসপ্লেসিয়া অসিফিকান্স প্রগরেসিভ (এফওপি) নামে একটি বিরল রোগ রয়েছে। এ অসুখে হাড় গঠনে পেশি আর যোজক টিস্যুর খুব ধীর পরিবর্তন হয় যা মূলত অস্থিসমূহের গঠনে বাধা দেয়। এই অসুখে আক্রান্ত বিশ্বের মাত্র ৮০০ মানুষ। আর এদের সবার জীবন সায়াহ্নের সময়ই ধরা হয়েছে ৪০ বছর পর্যন্ত!
চার্লি বলে, 'আমার গলা আর ঘাড় ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে যাচ্ছে। চুল বাঁধতে অথবা গাড়ি চালাতে খুব কষ্ট হয় আমার। আমার কোমড়ও শক্ত হয়ে যাচ্ছে। আর এ কারণে আমি নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছি ধীরে ধীরে। হাঁটার সময় কিছু একটা সাথে নিয়ে হাঁটতে হয় আমাকে কারণ বেশিদূর পর্যন্ত হাঁটতে পারি না আমি। এফওপির কারণে খুব কষ্ট হয়। আমাকে যদি আপনি জিজ্ঞেস এই ব্যথাকে এক থেকে দশের মাঝে মার্কিং করতে আমি বোধহয় বলতে পারব না। কারণ এই ব্যথা নিয়ে আমাকে প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে বাঁচতে হচ্ছে। এত কষ্ট সহ্য করেও যে আমি বেঁচে আছি এটার জন্য আমি নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করি।'
চার্লির এই সমস্যা শুরু হয়েছে ২০০১ সাল থেকে। এর আগে সে একদম সুস্থ ছিল। অন্যান্য বাচ্চাদের মতই সে ফুটবল খেলত, সাঁতার কাটত। কিন্তু সে বছর দড়ি খেলতে গিয়ে পড়ে গিয়ে তার সব বদলে যায়।
ছোটবেলায় স্বাভাবিকভাবেই বড় হচ্ছিল চার্লি (ছবি: দ্য সান)
২০০১ সালে দড়ি খেলার সময় পড়ে গিয়ে গুরুতর ব্যথা পায় চার্লি। ব্যথার জায়গায় ভয়াবহভাবে ফুলে যাওয়া থেকে প্রচণ্ড ব্যথায় ভুগতে হয় তাকে। চিকিৎসা করানোর সময় জানা যায় চার্লি আরও দুই বছর আগে থেকেই এফওপিতে ভুগছিল। সাড়ে পাঁচ বছর বয়সী চার্লির জীবন সে সময় থেকেই বদলে যাওয়া শুরু হয়।
চার্লি বলে, আমি ভাগ্যবতী কারণ আমি আমার ছোটবেলাটা স্বাভাবিকভাবেই উপভোগ করতে পেরেছি। যদিও আমি আমার বর্তমানের জীবন এফওপি ছাড়া কল্পনা করতে পারি না। তাই আমার সমস্ত ভালো স্মৃতিগুলো সেই ছোটবেলাকে ঘিরেই। যদি আরও আগে এই অসুখ সম্পর্কে আমি জানতাম তাহলে হয়তো সেই ভালো সময়গুলোও আমি পেতাম না।
চার্লির এই অসুখ জানতে পারার পরে তার বাবা মা চেষ্টা করেছেন তাকে তার স্বাভাবিক জীবনে রাখার।
কষ্টকর এই রোগে আক্রান্ত হয়েও চার্লি সফলতার সাথেই শেষ করেছে তার কলেজের পড়াশোনা। সসার খেলতে গেলে সে হালকাভাবে পা দিয়ে খেলে, তার বন্ধুরা তাকে খুব সহায়তা করে। জিমে গেলে হয়তো সে মিলে দৌড়ায় না কিন্তু বন্ধুর সাহায্য নিয়ে দড়ি টেনে ব্যায়াম করতে পারে সে।
হাঁটা, খেলাধুলা, ব্যায়াম, সাঁতার, গাড়ি চালানো- যে কোনো কিছু করতে গেলেই তাকে অনেক ব্যথা সহ্য করতে হয়। তবু চার্লি তার জীবন নিয়ে খুশি। সবকিছুকে পজিটিভভাবে নিয়ে চলাকেই সফলতা মানে চার্লি।
চার্লির শরীর ধীরে ধীরে আরও শক্ত হয়ে যাচ্ছে। এখন চুল আঁচড়াতে হলে অথবা জুতা পরিষ্কার করতে হলে অন্যের সাহায্য লাগে তার। অপারেশন করে চার্লির মুখের পিছনের দাঁত ফেলে দেওয়া হয়েছে যেন মুখে খাবার নিলে সেই খাবার সরাসরি তার গলা দিয়ে নেমে যায়।
এত বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েও জীবনের প্রতি আশা ছাড়েনি চার্লি। অসুস্থ হলেই সেই মানুষটিকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে না দিয়ে যেন একটা স্বাভাবিক জীবন দিয়ে তাকে ভালোবাসা হয় এমনটিই সবার কাছে অনুরোধ চার্লির।
চার্লি হেনরোটকে নিয়ে করা একটি প্রতিবেদনের ভিডিও দেখুন এই লিংকে।
তথ্যসূত্র: দ্য সান
ওডি/এএন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড