ভিন্ন খবর ডেস্ক
একদিন সকালে ফ্রাউ ত্রাফেয়া নামের এক নারী হঠাৎ শহরের রাস্তায় নেমে এলেন নাচতে নাচতে। আপাতদৃষ্টিতে এটিকে পাগলামিই বলে ধরে নিয়েছিলেন আশেপাশের মানুষ। তবে দৃশ্যপট বদলে গেল খানিক পরেই। একে একে নৃত্যরত ত্রাফোয়ার দল ভারী হতে লাগলো। তার সঙ্গে নাচে যোগ দিতে থাকলো শত শত মানুষ।
খুব দ্রুতই অবস্থা চলে গেল নিয়ন্ত্রণের বাইরে। থামার কোনো লক্ষণই নেই। হঠাৎ দেখে যে কেউ ভাববেন, তারা হয়তো কোনো উৎসব পালন করছেন। একে একে তার চারপাশের সবাই যোগ দিলো নাচে। কল্পকাহিনির মতো শোনালেও এ ঘটনা সম্পূর্ণ বাস্তব। সেই নাচ শুরু হলো ঠিকই, শেষ হওয়ার কোনো নাম নেই।
টানা ১ সপ্তাহ চলার পর, ভিন্ন জায়গা থেকে আসা আরও ৩৪ জন যোগ দিলো এ নাচে। একমাসে সংখ্যাটি দাঁড়ালো ৪০০ জনেরও বেশি! ৪০০ জন মানুষ একটানা একসঙ্গে শুধু নেচেই যাচ্ছেন, সম্পূর্ণ বিরতিহীনভাবে। কেন এরকম হচ্ছে কেউ জানেন না, কেউ বুঝতেও পারছেন না। কোনো এক অদৃশ্য শক্তি তাদের নাচিয়ে নিচ্ছে, শুধু নেচেই যাচ্ছেন তারা! অনেকে অশুভ কোনো কিছুর জন্য এমন হচ্ছে বলেই ভেবে নিলেন। চারদিকে ছড়িয়ে গেল এ খবর। এ মহামারির নাম দেওয়া হয় ডান্সিং প্লেগ।
নৃত্যের মিছিল ধীরে ধীরে মৃত্যুর মিছিলে পরিণত হয়। কয়েকদিনের মধ্যেই নাচতে নাচতে মারা যায় এক ডজনেরও বেশি মানুষ! এদের বেশিরভাগই মারা যায় একটানা নাচ, ডিহাইড্রেশন, স্ট্রোক এবং ক্লান্তিতে। তবে আশ্চর্যের বিষয়, সর্বপ্রথম নাচ শুরু করা নারী ফ্রাউ ত্রাফেয়া তখনো বেঁচে ছিলেন এবং নেচে চলেছিলেন! দীর্ঘ একমাস বিরামহীন নাচতে থাকেন তিনি। একমাস পর নৃত্যদলের শেষ মানুষ হিসেবে তিনিও মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেন।
তবে ঠিক কেন এমনটি হয়েছিল, সে বিষয়ে পরিষ্কার কোনো কারণ এখনো পাওয়া যায়নি। মৃত্যুর সঠিক কোনো কারণ ৫০০ বছরেও বের করতে পারেননি কেউ। শুধু রহস্যের মধ্যে উঁকি দিয়েছে কিছু ধারণা। একেক ইতিহাসবিদ একেক ভাবে এ সমস্যাকে ব্যাখ্যা করছেন।
ইতিহাসবিদ জন ওয়ালার বলেছিলেন, এমনটি হয়েছিল মূলত শহরের সব মানুষের মানসিক ভাঙনের জন্য। শহরটি এরই মধ্যে অনেক বেশি সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। শহরের বেশিরভাগ মানুষ ক্ষুধায় কাতর ছিল এবং রোগ-শোকে আক্রান্ত ছিল। কাজেই তারা ভেঙে পড়েছিলেন মানসিকভাবে। ফলে এক ধরনের মনোবৈকল্যের শিকার হয়ে তারা এমন নাচ শুরু করেছিলেন, নিজেদের অজান্তেই।
কিন্তু মানসিক ভাঙন থেকে মনোবৈকল্য একসঙ্গে সবার হবে কেন? এ প্রশ্ন থেকেই যায়। এ ব্যাপারে আরেকটি জনপ্রিয় ধারণা হচ্ছে, এরগট ফাঙ্গাস নামে এক প্রজাতির ফাঙ্গাস এ ঘটনার জন্য দায়ী। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এরগট ফাঙ্গাস বিষাক্ত একটি ফাঙ্গাস হওয়ার কারণে মানুষ নাচতে শুরু করার আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে। এ ফাঙ্গাসের আক্রমণ মানুষকে এতক্ষণ ধরে নাচের শক্তি দিতো না।
এ ধারণায়ও কিছুই পরিষ্কার হয় না। এ সমস্যার কিন্তু সমাধান হয়েছিল এমনিতেই। ৪০০ মানুষের প্রাণ নিয়ে ক্ষান্ত হয় এ মহামারি। যেভাবে হঠাৎ করেই এসেছিল এ মহামারি; তেমনই নীরবেই চলে গেছে। খুব অল্প সময় স্থায়ী হলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডান্সিং প্লেগকে মহামারি বলেই উল্লেখ করেছে।
তবে ঠিক কেন শুরু হয়েছিল এ নাচ এবং ঠিক কী কারণে একটানা নাচতে নাচতে মৃত্যু হলো এতগুলো মানুষের। এ রহস্য আজও অজানা। তবে কি এটি শুধুই একটি ছোঁয়াচে রোগ? নাকি এর পেছনে রয়েছে অন্য কোনো রহস্য? তা হয়তো জানা যাবে সুদূর ভবিষ্যতে অথবা থেকে যাবে ইতিহাসে এক অমিমাংসিত রহস্য হিসেবেই।
ওডি/জেআই
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড