অধিকার ডেস্ক
ভালোবাসার মানুষের জন্য কতকিছুই না করি আমরা। কেউ ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ হাতে লেখেন প্রিয়জনের নাম, কেউবা ভালোবাসার মানুষের জন্য ধরেন জীবন বাজি। তবে, কৃষক আব্দুল কাদির যা করলেন তা বেশ ভিন্নই বলা চলে। সৃষ্টিশীল মনের কৃষক কাদির ৩৫ শতক জমিতে শৈল্পিক বুননে ফসলের মাঠকে করে তুলেছেন দৃষ্টিনন্দন। যা দেখতে প্রতিদিন শত শত মানুষ ভিড় করছেন তার জমিতে।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের পাড়াখলাবলা গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আব্দুল কাদির। ৪০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি গ্রামের ‘বন্ধুমহল’ ডিজিটাল ক্লাবের উপদেষ্টা সদস্য। ক্লাবের সদস্যরা তাকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে কিছু করে দেখাতে বলেন। তখন তিনি বীজ বপন করে কিছু নতুনত্ব সৃষ্টি করার কথা ভাবেন।
নিজের পরিকল্পনা অনুযায়ী ৩৫শতক জমিতে হাল চাষ করে জমির বুকে চিত্রাঙ্কন করেন ক্লাবের সদস্যদের সাহায্যে। চিত্ররেখার মাঝে বারী-১৫ জাতের সরিষা বীজ বপন করেন। সেই বীজ গজানোর পরেই পুরো ক্ষেত হয়ে ওঠে জীবন্ত ছবি। ‘বন্ধুমহল’ ক্লাবের সদস্যরা নান্দনিক এই ক্ষেতের নাম দিয়েছেন ‘নকশী কাঁথার মাঠ’।
ফসলের মাধ্যমে ভিন্নধর্মী এই কারুকার্যময় ইতোমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। প্রতিদিন শত শত মানুষ ক্ষেতের আশেপাশে ভিড় ভিড় করছেন কাদিরের করা কাজ দেখতে।
ক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, দুই পাশে রয়েছে দুটি নৌকা, জাতীয় ফুল শাপলা। জমির চার কোণায় রয়েছে চারটি ভালোবাসা চিহ্ন আর মাঝ বরাবর একটি বড় ভালোবাসা চিহ্ন। যার ভেতরে রয়েছে কৃষক আব্দুল কাদিরের নাম,
জমিতে নান্দনিক এই শিল্পকর্ম করার কারণ জানতে চাইলে কাদির সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'নৌকা আমি ভালোবাসি। নৌকা হলো আমার প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা ও গণমানুষের প্রতীক। শাপলা হলো আমাদের জাতীয় ফুল। ফুলের প্রতি ভালোবাসা থেকেই শাপলা আঁকা।'
ক্ষেতের চার কোণা ও মধ্য ভাগে ভালোবাসা চিহ্ন আঁকার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, এর পেছনে একটি মজার গল্প রয়েছে। কিশোর বয়সে সোহাগী গ্রামের এক কিশোরীর প্রেমে পড়েছিলেন কাদির। প্রেমের সেতু বন্ধন রচিত হয়েছিল চিঠির মাধ্যমে। প্রেমিকা তাকে যে চিঠি লিখতেন তার চার কোণে চারটি ও মাঝখানে বড় একটি ভালোবাসার চিহ্ন এঁকে দিতেন। তার মধ্যে লেখা থাকত তার আর প্রেমিকার নাম।
কিশোর বয়সের সেই ভালোবাসার প্রতি সম্মান দেখিয়েই ফসলের জমিতে এই চিহ্ন তুলে ধরেছেন তিনি।
কাদিরের প্রেমিকার নাম মাকসুদা বেগম। তাকেই বিয়ে করে সুখে সংসার করছেন তিনি। রয়েছে এক মেয়ে ও দু ছেলে। কাদিরের কাছে স্ত্রী মাকসুদা মমতাজের মতো। কাদির বলেন, ‘সম্রাট শাহজাহান তার স্ত্রীর ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ পৃথিবী বিখ্যাত সুরম্য তাজমহল তৈরি করেছিলেন। আমি গরীব, আমার সামর্থ্য নেই, কিন্তু আমার স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার কমতি নেই। তাই তাজমহল বানাতে না পারলেও জমিতে সেই ভালোবাসা চিহ্নের নকশা এঁকে প্রেমের নিদর্শন হিসেবে প্রেয়সীকে লেখা চিঠির মতোই নিজের জমিতে প্রেমপত্র এঁকেছি।'
কৃষি জমিতে নান্দনিক এই শিল্পকর্মের প্রশংসা করেছেন সবাই।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড