মোঃ সাইফুল ইসলাম
ব্যাঙ আমাদের অতি পরিচিতি একটি উভচর মেরুদণ্ডী প্রাণী। বিজ্ঞানীদের মতে, ৪০০ মিলিয়ন বছর আগে এই প্রাণীটির উৎপত্তি হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে ৬৪৩৩ প্রজাতির ব্যাঙের অস্তিত্ব রয়েছে বলে জানা যায়।
সাধারণত আমাদের দেশে আমরা সোনাব্যাঙ, কুনোব্যাঙ, গেছো ব্যাঙ ইত্যাদি ব্যাঙের সাথে পরিচিত। এদের দৈহিক অবয়ব, বৈশিষ্ট্য ও বৈচিত্রও আমরা কম-বেশি জানি। আমাদের পরিচিত ব্যাঙগুলো জল-স্থলে সমভাবে চলাফেরা করে। আবার বিরূপ পরিবেশে শীতনিদ্রায় যায়। এ সময় এরা মাটির নিচে কিংবা ভিন্ন কোনো আরামদায়ক পরিবেশে লুকিয়ে থাকে। কিন্তু পরিবেশ ভালো হলে এরা আবার মাটির ওপরে চলে আসে। তবে আজীবন মাটির নিচেই কাটিয়ে দেওয়া ও সেখান থেকেই আহার যোগানো ব্যাঙের কথা শুনলে অবাক হতেই হয়।
এইতো! কয়েক বছর আগে আবিষ্কার হওয়া একটি ব্যাঙের কথা জানা যায় যেটি জল-স্থলে নয়, বরং মাটির নিচেই আবাস গড়ে ও সেখানেই সারাজীবন কাটায়। তবে ব্যাঙটি আমাদের দেশে পাওয়া যায়নি। পাওয়া যায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ‘ওয়েস্টার্ন ঘাট পর্বতে’।
ব্যাঙটির নাম হচ্ছে ‘পার্পল পিগ নোজ ফ্রগ (Puple Pig Nose Frog)’ বা ‘শুকর নাকের ব্যাঙ’। Nasikabatrachus bhupathi হচ্ছে ব্যাঙটির বৈজ্ঞানিক নাম। প্রাণীবিদ ড. ভূপতি সুব্রামানিয়ামের সন্মানে ব্যাঙটির নামকরণ করা হয়। ড. ভূপতি ছিলেন প্রখ্যাত সরীসৃপ প্রাণীবিদ। যিনি ২০১৪ সালে ওয়েস্টার্ন ঘাট পর্বত এলাকার কোনো একটি পর্বত থেকে পড়ে গিয়ে চোখে আঘাত প্রাপ্ত হন ও মারা যান। তার মৃত্যুটা ছিল খুবই মর্মান্তিক।
ঘরকুনো স্বভাব আছে বলে আমাদের অতি পরিচিত একটি ব্যাঙকে বলা হয় কুনোব্যাঙ। তাহলে শুকর নাকের ব্যাঙের নাক শুকরের নাকের মতোই হওয়ার কথা। বাস্তবেও শুকর নাকের ব্যাঙের নাকটা দেখতে শুকরের নাকের মতোই।
এই ব্যাঙের আরও কিছু অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। দেখতে উজ্জ্বল, বেগুনি বর্ণের ত্বক বিশিষ্ট ব্যাঙটির চোখের চারপাশে হালকা নীল রঙের রিং রয়েছে। যা অন্যান্য ব্যাঙে দেখা যায় না।
এই ব্যাঙের ছোট চোখ, লম্বা নাক, শক্ত ছোট পা রয়েছে। শারীরিক গঠনের কারণেই এরা মাটি খনন করতে পারে। আর মাটি খনন করে তার নিচে আজীবন লুকিয়ে থাকে। মাটির নিচে লুকিয়ে থেকেই এরা খাবার সংগ্রহ করে। মাটির নিচ থেকেই এরা বিশেষ ধরনের লম্বা জিহ্বার সাহায্যে মাটির ওপরে থাকা পিঁপড়া, উইপোকা ইত্যাদি খায়। এ কারণে খাদ্য সংগ্রহের জন্যও এরা মাটির উপরে আসে না।
খাদ্য সংগ্রহের জন্য মাটির উপরে না আসলেও প্রজননের জন্য কিন্তু এরা ঠিকই মাটির ওপর চলে আসে। এ সময় মাত্র দুসপ্তাহের মতো মাটির উপরে থাকে। প্রজনন শেষে আবারও মাটির নিচেই চলে যায়। বর্ষার সময় ঝুম বৃষ্টিতে পুরুষ ব্যাঙ মিলনের জন্য স্ত্রী ব্যাঙকে কাছে ডাকে। আবার এই ডাকার সময়েও এরা পর্বতের জলস্রোতে বালির নিচে থাকে। ব্যাঙটির ডাকের শব্দও অদ্ভুত। এরা মুরগির মতো শব্দ করে ডাকে।
পুরুষের ডাকে সাড়া দিয়ে স্ত্রী ব্যাঙ কাছে আসলে জলস্রোতেই মিলন হয়। মিলনের ১-২ দিন পর ডিম ফুটে ট্যাডপোল বা ব্যাঙাচির জন্ম হয়। এই ব্যাঙাচিও আবার অন্যান্য ব্যাঙের প্রজাতির থেকে আলাদা। এরা অন্যান্য ব্যাঙাচির মতো পুকুর ও ডোবায় সাঁতরে বেড়ায় না। এদের সাকারফিশের মতো মুখ থাকায় ঝরনার শিলায় ঝুলে থাকে। সেখানেই ছোট ছোট দাঁতের মাধ্যমে শৈবাল খায়। জলস্রোতে এরা ১২০ দিন অতিবাহিত করে।
এই ১২০ দিনই হচ্ছে এদের জীবনের সর্বাধিক সময় ভূমির বাইরে থাকা। এরপর ব্যাঙাচি দশা শেষ হলে ভূমির উপরিভাগের মায়া ত্যাগ করে সারাজীবনের জন্য মাটির নিচে চলে যায়।
বিজ্ঞানীদের মতে, সারাবিশ্বে যত ব্যাঙের প্রজাতি রয়েছে তার সবগুলোই শুষ্ক মৌসুমে মাটির নিচে চলে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। তবে শুকর নাকের ব্যাঙের মতো স্থায়ীভাবে কোনো ব্যাঙই মাটির নিচে থাকে না।
প্রতি বছর শতাধিক নতুন নতুন ব্যাঙের প্রজাতি আবিষ্কারের কথা বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্রে প্রকাশিত হয়। তবে এই অদ্ভুত গঠন ও বৈশিষ্ট্যের ব্যাঙটি আগামী প্রজন্মের তরুণ জীববিজ্ঞানীদের সরীসৃপ প্রাণী সম্পর্কে জানার আগ্রহ বৃদ্ধি করবে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।
তথ্যসূত্র : ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, ন্যাচার’স স্ট্যাডি সোসাইটি ডট কম।
ওডি/এনএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড