ভাষান্তর: অজিত দাশ
আমরা
কেবল আমরাই নই পেছনে ফেলে আসার মধ্যে, সেই ডুমুর গাছটিও ছিলো আমাদের সঙ্গে।
কেবল আমরাই নই পেছনে ফেলে আসার মধ্যে, আরও একজন ছিলো যতক্ষণ পর্যন্ত আকাশ আমাদের ভিসা দিচ্ছিলো না।
শুভ রাত্রি, প্রিয়! আমরা আবারও অপেক্ষা করব আরেকটি নতুন ফুল ফোটার আগ পর্যন্ত।
স্বৈরাচারের প্রতি
(এক পাকিস্তানী কবির স্মরণে। যাকে নির্বাসিত করা হয়েছিলো)
তোমার ক্ষমতায়... ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে দিয়েছ আমাদের স্বাধীনতার ফুলগুলোকে।
তোমার ক্ষমতায়... তোমার পতন ঠেকিয়ে রেখেছিল দুর্বলেরাই, আর পৃথিবী বিলাপ করছিল দিনরাত।
চাঁদও যেনো জ্যোৎস্নার আলো ছেড়ে অন্ধকার ডুব দিয়েছিলো তোমার ক্ষমতায়...
অস্বীকার করো
পুলিশ যদি এসেই পড়ে আর লাঠিপেটা শুরু করে দেয় তবুও মাথা নুয়াবে না
বিচ্ছু যদি এসেই পড়ে আর তোমার চোখ-মুখে কামড়ে দেয় তবুও বশ মানবে না
পৃথিবী যখন যাতনার কেন্দ্র বরাবর ঘুরে বেড়াবে দিনরাত দুঃখ পেতে অস্বীকার করো
শিশুদের কথা শুনো দৃষ্টি খুলে দেখোÑআমাদের সঙ্গীতের যত রূপ! গেয়ে ওঠো, নৃত্য কর সমর্পণের মৃত্যুতে!
যতক্ষণ ক্ষমতাবান মুকুট ছিনিয়ে নেবে, লুঠ করে নেবে গরীবের শেষ সম্বলটুকুও বঞ্চনার পাদদেশে নতজানু হতে অস্বীকার করো। কৃতজ্ঞতা
আমার হৃদয়ের অস্থিমজ্জায় গেঁথে আছে দেখো- নিমেষেই স্রোতের মতো গড়িয়ে পড়া চোখের জল, জীবনের পরিছায়া।
আমি বৃষ্টিতে ভিজে অপেক্ষা করছি একা এই শুষ্ক মৌসুমে-ক্ষুধার্ত এক পৃথিবীর জন্য।
কেউ জাগবে না আর দূরদেশে না আলোর ঝলকানি হবে কোনো শহরে এ এক নাস্তিকের যাত্রা! যার পথে ছড়িয়ে আছে কেবল কাটা আর ধৈর্যহীন সময়ের প্রতিকূল নৃত্য! আমি বলবো না
সে বলে, মুখ গুহার মতো যেখানে প্রতিবাদের শব্দগুলো গুজে রাখা যায়। সে বলে, আমার শব্দগুলো ছেঁড়া-পুরানো কাপড়ের মতো আর সেজন্য পুলিশ পাঠিয়েছে শব্দগুলোকে খুন করার জন্য
আজ, এই মুহূর্ত থেকে আমি আর কিছুই বলবো না কিন্তু যখন তাকাই চারপাশে-নির্বাক এক অদম্য বেদনায় চোখের পাতা নুইয়ে পড়ে
আর যখন চারপাশে নির্মম শব্দগুলো ভেসে বেড়ায় তখনো আমি নিশ্চুপ! যখন রাষ্ট্রপতির ভাষণ থেকে গড়িয়ে পড়া রক্ত রাস্তা ভাসিয়ে দেয় সেই রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আমি কিছুই বলবো না।
নিজের সন্তানের রক্ত দেখে যখন কোনো মা
কান্নায় বুক ভাসিয়ে ফেলবে সেই দৃশ্যে জর্জরিত হয়ে আমি কিছুই বলবো না।
মন্ত্রীর এক শব্দে ঘরছাড়া হয় কোনো স্তন্যপায়ী মা মন্ত্রীর এক শব্দে ঘোষণা করা হয় কারো মৃত্যুদণ্ড শাসকের শব্দগুলো গণতন্ত্রকে পঙ্গু বানিয়ে দেয় আর পুলিশের হাতকরা জেলের দরজা খুঁজে বেড়ায়।
আরও পড়ুন- অশ্রু ভেজা চোখে খুঁজো না আমায়
ছবি : চেনজেরাই হোভ
কবি পরিচিতি :
পুরস্কারপ্রাপ্ত জিম্বাবুইয়ান কবি-উপন্যাসিক-প্রাবন্ধিক চেনজেরাই হোভ (৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৬- ১২ জুলাই ২০১৫) দক্ষিণ আফ্রিকার বন্টু ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত প্রধান আদিবাসী ‘শোনাদের’ নিজস্ব ভাষার প্রথম লেখক। আফ্রিকান সাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তাঁকে আফ্রিকার নোমা পুরস্কার, জিমবাবুই সাহিত্য পুরস্কার এবং জার্মান-আফ্রিকা সাহিত্য পুরস্কার সহ ইউএসএ-ইউকে থেকে আরো বেশ কয়েকটি সম্মাননায় প্রদান করা হয়েছে। আদিবাসী ভাষা শোনায় লেখালেখির পাশাপাশি চেনজেরাই ইংরেজি ভাষাতেও বেশ কয়েকটি বই রচনা করেছেন। তাঁর প্রকাশিত বইগুলো হলো- আপ ইন আর্মস (কবিতা-১৯৮২), রেড হিলস অব হোম (কবিতা-১৯৮৫), বোনস (উপন্যাস-১৯৮৮), শেডোস (উপন্যাস-১৯৯১), রেইনবোউস ইন দ্য ডাস্ট (কবিতা-১৯৯৭), অ্যানসেস্টোরস্ (উপন্যাস-১৯৯৭), ডেসপারেটলি সিকিং ইউরোপ (প্রবন্ধ-২০০৩), ব্লাইন্ড মুন (কবিতা-২০০৪)।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড