• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

দৈনিক অধিকার ঈদ সংখ্যা-১৯

আবিরের ঈদ আনন্দ

  ফজলে এলাহী নাঈম

০২ জুন ২০১৯, ০৯:৪২
গল্প
ছবি : আবিরের ঈদ আনন্দ

শামীম মিয়া আর রেহানা বেগমের মোটামুটি সুখের সংসারই বলা যায়। আয়ের দিক দিয়ে নিম্নবিত্ত হলেও সুখের দিক দিয়ে উচ্চবিত্ত তাঁরা, অন্তত তারা তাই মনে করেন। শামীম মিয়ার অটো-রিক্সা চালানোর আয় দিয়ে ভালোভাবেই চলছে তাঁদের সংসার। সেই সংসারের সুখের দু’টি উৎস হলো আবির ও শীলা।

আবির ও শীলা শামীম আর রেহানা দম্পতি’র দুই আদরের সন্তান। আবির এবার পঞ্চম শ্রেণীতে উঠেছে। গ্রামের পাশের প্রাইমারী স্কুলেই পড়াশুনা করছে সে। বরাবরের মত চতুর্থ শ্রেণী থেকে প্রথম স্থান অধিকার করেই পঞ্চম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছে আবির। চাইলেও ভালো কিন্ডারগার্টেনে যে সে ভর্তি হতে পারবে না তার বাবার স্বল্প আয়ের টাকা দিয়ে সেটা আবির ভালোভাবেই বুঝে। এতে অবশ্য ছোট্ট আবিরের কোনও আফসোসও নেই। রেহানা বেগমের মাঝেমাঝে মনে হয়, বয়সের তুলনায় তার ছেলে যেন একটু বেশি বুদ্ধিমান হয়েছে। অন্য ছেলেদের মত অতিরিক্ত কোনও কিছু জন্য আবদার করে না, খেলাধুলার জন্যও খুব বেশি আগ্রহী হতে দেখা যায় না তাকে। সুযোগ পেলে কাজের ক্ষেত্রে রেহানা বেগমকে সাহায্যও করে। পাশাপাশি ছোট বোন শীলার সাথেও তার খুব ভালো সম্পর্ক।সময়ে সময়ে শীলাকে সে স্বরবর্ণ আর ব্যঞ্জনবর্ণও শিখিয়ে দিচ্ছে। যাতে আগামী বছর শীলা স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগেই অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন হতে পারে। সব কিছু মিলিয়ে অন্য ছেলেদের তুলনায় কিছুটা ব্যতিক্রমই বলা যায় আবিরকে। আর এই আবির আর শীলাকে নিয়ে শামীম আর রেহানা সুখেই আছেন।

ক্লাসে আবিরের সবচেয়ে ভালো বন্ধু হলো কবির। কবির আবিরের মতো পড়াশুনায় এতো ভালো ছাত্র না হলেও আচার আচরণ ভালো হওয়ায় আবিরের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়ে যায় সহজেই। দুই জনের বাড়ি পাশাপাশি হওয়ায় স্কুলে তারা একসাথেই যায়। স্কুল থেকে ফিরে বিকেলে মাঠে খেলতে গেলেও একসাথেই খেলে। এই তো এই রমজানেও তারা দুইজন একসাথেই রোজা রাখা শুরু করেছে। তবে দুই জনের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে এর মাঝে, কে কার থেকে বেশি রোজা রাখবে সেটি নিয়ে। কবিরের বাবা মানুষের বাড়িতে কাজ করে করে সংসার চালান।

টানাপড়েনের এই সংসারে কবিরের বাবাই একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। ‘দিনে আনে, দিনে খায়’ এই অবস্থায় চলছিল তাঁদের সংসার। কবির তার মা-বাবার ৩ সন্তানের মাঝে সবার ছোট। তার বড় এক ভাই আর এক বোনও আছে। কবিরের যমজ এই ভাই বোন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। ঈদের আর খুব বেশি দিন বাকি নেই।এই সময় হঠাৎ করে কবিরের বাবা জসিম মিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লেন।সবাই বলছে এটা নাকি ম্যালেরিয়া জ্বর। প্রয়োজনীয় টাকার অভাবে জসিম মিয়া ডাক্তারও দেখাতে পারছেন না।কবিরের মা ধার-দেনা করে কিছু টাকা দিয়ে ঔষধ নিয়ে এসেছেন।কিন্তু, রোগ কমার যেন কোনও লক্ষ্মণই নেই। এদিকে ঈদকে কেন্দ্র করে কবিররা নতুন জামার স্বপ্ন দেখছে। বাবা সুস্থ হয়ে তাদেরকে নতুন জামা কিনে দিবে। কিন্তু জসিম মিয়ার অসুখ যে কমছেই না, কিছুটা কমলেও সেটা মানুষের বাড়িতে গিয়ে কাজ করার মতো না। কবিরের মায়ের কপালে তাই চিন্তার ভাজ!

কয়েকদিন থেকে আবির দেখছে কবির কেমন জানি মনমরা হয়ে থাকে সবসময়। খুঁজ নিয়ে কবিরের বাবার অসুখের খবরটা জানল সে। আর এই ঈদে কবির নতুন জামা কিনতে পারবেনা শুনে আবির খুবই কষ্ট পেলো।

বাড়িতে ফিরে আবির মায়ের কাছে বায়না ধরল তাকে এবার ঈদে দুইটা জামা কিনে দিতে হবে। রেহানা বেগম দুইটা জামার কারণ জানতে চেয়েও জানতে পারলেন না।পরক্ষনে চিন্তা করলেন, ছেলেটা দুইটা জামা ই তো চেয়েছে। আজেবাজে কোনও জিনিস তো চায় নি সে। তাই রেহানা বেগম শামীম মিয়াকে বুঝিয়ে আবিরের জন্য দুইটি জামার ব্যবস্থা করলেন। পাশাপাশি শীলার জন্যও দুইটা, আবিরের দুইটা জামার কথা শুনে তারও যেন দুইটাই লাগবে!

ঈদের দুই দিন আগে আবিরের বাবা তার জন্য তার প্রত্যাশিত দুইটি জামা নিয়ে আসলেন, শীলার জন্য ও। জামা হাতে পাওয়ার পর আবির তার মা’কে কবিরের বাবার অসুস্থতার কথা বলে কবির যে ঈদে জামা কিনতে পারছেনা সেটা বলল।এবং তার দুইটি জামার একটি সে কবিরকে দেওয়ার কথা বলাতে রেহানা বেগম যারপরনাই খুশি হলেন। খুশিতে কখন যে চোখের কোনে পানি এসে জমেছে, টেরই পাননি রেহানা বেগম। আবির আলতো করে মায়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল, চলো মা আমরা কবিরকে জামাটা দিয়ে আসি, সে অনেক খুশি হবে।

আবির তার বন্ধু কবিরকে জামা দেওয়ার পর নিজের মাঝে অনেক আনন্দ অনুভব করল। ঈদ অর্থ যে ‘আনন্দ’ তার বাস্তব অনুভূতি আবিরের মাঝে অনুভূত হলো। রেহানা বেগম আর আবির যখন কবিরকে জামা দিয়ে চলে আসছিলো তখন কবিরের মা মনের অজান্তেই বলে উঠলেন, ‘জীবনে অনেক বড় হও বাবা।’

আরও পড়ুন- পালাবদল

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড