• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

দৈনিক অধিকার ঈদ সংখ্যা-১৯

রাখালের রাঙা বউ কানে সোনা দুল

  রুদ্রাক্ষ রায়হান

০৮ জুন ২০১৯, ০৮:৪৯
কবিতা
ছবি : রাখালের রাঙা বউ কানে সোনা দুল

জল জীবন

নদীর পানির বুকে নৌকারা পিঠ দিয়া চলে আহারে কালা নাও, নদীও নিজের কথা বলে টল টল বুকে তুমি ছোঁয়াইলা কঠিনের পিঠ ও মাঝি! নৌকারা দিক তাল চিনবে সঠিক?

এই যে গাঙ্গের পানি কতজন সাঁতরায় জলে কত লোক নাই হয়, কত বউ ডুব ডুব খেলে তোমার কি সাধ নদী কও শুনি মনে যদি থাকে মাঝি! দুই কূল ভাঙ্গা নদী স্রোত আর কতদিন রাখে?

আইসো রাইতে মাঝি, পূবের বান্ধা নয়া খালে বইসো নদীর পাড়ে বাঁকা সেই হিজলের ডালে আর তো কয়েকদিন তারপর এই সুখও যাবে মাঝি! নিজেরে খায় না নদী তোমারে সে ঠিকঠাক খাবে।

মীণ গন্ধ

আহারে ইলিশের জাল তোমার রুপালি রং কই? কই গেল উনুনের তেজ? টগবগ মাছের কড়ই? সন্ধ্যায় খালি নায়ে ঘাটে আসে আধমরা মুখ মাছের অসুখ, আহা মাস কাটা নদীর অসুখ।

আহারে মনের সুখ পুরাতন দিন আর নাই বাড়িতে আইতো ঈদ কুটুম আর নতুন জামাই বড়ে মিয়া হাটে যাবে পানে দিয়া জর্দা সুবাস কত দুধে কত ঘি তাই নিয়া তুমুল বাহাস আমাদের ছোট গ্রাম সবাই সবাইরে চিনি।

এহন গ্রামের সবে বাবু সাব শহরের লোক কি সব ভাঁজা ভাত, রেজালা, মাসালা চমক আমাগো আগের কঁই, টাকি, শোল, ভেটকির ঘ্রাণ নাই নাই আর নাই কাঁচা পান কসকো সাবান।

চর মহিষা

নদীতে ডুবাইয়া নিলে সেই জমি সহজে কি জাগে?

আহারে ইলিশিয়া নদী, তুমি তো নিয়াই গেলা ঘর কথা ছিলো কার্তিকে ময়নার বিয়া হইবো নতুন বাঁচারি ঘরে তুলব বাসর ময়নার সেই বিয়া হইলো না।

ময়নার সেই জামাই ঢাকায় থাকে পোলাপানও আছে সেই ঘরে ময়নাও ভালো আছে, নতুন এক বিয়া দিছে তার বাপ সাহেব আলী তারে কত লোকে কতকিছু কইলো এক একর যায়গা কতটুকু ভুঁইয়া বাড়ির জমির-জমার কাছে?

ময়নারও তিন পোলা ক্ষেতে যায় চাষ দেয় ধানী জমি অর্ধা অর্ধী ভাগে

হায়রে পোড়া কপাল এখন মহিষা চর জাগে? পয়স্তি জমি-জমা খাস খতিয়ান হইয়া যায় কই আর ভুঁইয়া বাড়ি, সব জমি রাম বাবু খায়।

তুমি আর জাইগো না মহিষা তুমি আর দেখাইয়ো না ক্ষাব

তুমি আর জাইগো না মহিষা তুমি আর দেখাইয়ো না ক্ষাব।

বন্ধা খালের পাড়ে

একদিন তাল গাছের মাথায় বিশাল এক জাতি সাপের কথা! জাতি সাপ তাল গাছে বাসা বাইন্ধা থাকে বান্ধা খালের পাড়ে তালগাছ মাথা তুইলা রাখে।

খালপাড়ে নৌকাদের পাশাপাশি বাইন্ধা রাখা খালের মধ্য দিয়া ইলিশিয়ার ঘোলা পানি আইতো নৌকায় মানুষেরা ভরা নদীর অন্যপাড়ে যাইতো।

মাঠের ভেতরে তিল তিষিক্ষেত শর্ষের ফুল ভাত নিয়া বউ আসে দুপুরের কালে রাখালের রাঙা বউ কানে সোনা দুল ভাত খাওয়ার আগে মরদ নায় বান্ধা খালে।

খালের পানিতে মাঠের ফসল নাইয়া ওঠে খালের পানিতে মাঠ ভরা যৌবন পায় বিকালে মাইয়ালোক খালপাড় যায়

কথা কয়, গান গায়, খিল খিল হাসে মরদেরা গান গায়, বাজায় বাঁশি সন্ধ্যায় খালপাড়ে ভালোবাসাবাসি।

বান্ধা খাল! তুমিও নদীতে গেলা? লগে নীলা সাদেকপুর গ্রাম

বান্ধা খাল! তুমিও নদীতে গেলা? নদীতে তোমার কি কাম?

রাত্রিকালীন

তুমুল সঙ্গম কিংবা জাতীয় নির্বাচনে রাত্রিকাল ভালো রাত্রিকাল ভালো গ্রামগঞ্জের সালিশ বৈঠকে এখনো মানুষেরা রাত এলে বিছানায় শরীর মেলাতে যায়।

পুষ্পেরা রাতে ফোটে ঘরে আসে শেফালীর ঘ্রাণ বিপুল বৈভবে রানার চিঠি নিয়ে যায় যদিও সমস্ত সত্য এখন প্রাগৈতিহাসিক রাত্তিরে মানুষেরা নিরিবিলি কুসুম কুসুম খেলে।

নিশঙ্ক চিত্তেরা পথ ভুলে ব্যাকরণে থামে আমাদের নির্বাণ মানুষের রক্তে ও ঘামে যতটুকু সূর্যকে মানুষেরা করছে প্রণাম তারা জানে সূর্যও রাত জাগা মানুষের ঘাম।

রাত এলে শহর জেগে ওঠে বার ও ব্রথেলে পৃথিবীর সুখ জমা হয় রাত এলে মানুষেরা মিররে মুখ দেখে...

আরও পড়ুন- লালঝুঁটি মোরগফুল-ভুল-ভুল ভোরবল

ছবি

ছবি : রুদ্রাক্ষ রায়হান

লেখক পরিচিতি:

রুদ্রাক্ষ রায়হান। যিনি কবিতা পড়তে পড়তে বুঝেছিলেন, কবিতা লেখা যায়। সে আত্মবিশ্বাস থেকেই কাব্য চর্চায় মনোনিবেশ করেন। তার কবিতার মাঝে তিনি যেমন প্রেম ও বিরহের কথা ফুটিয়ে তুলেছেন উপমার মাধ্যমে। তেমনি তির্যক শব্দের মাধ্যমে বিদ্রোহ করেছেন সমাজবৈষম্য ও শাসক শ্রেণীদের বিরুদ্ধে। তিনি ১০ মে বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার সাদেকপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৯-এ ‘পরিবার পাবলিকেশন’ থেকে রুদ্রাক্ষ রায়হানের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘বহুগামী ঘোড়া’ প্রকাশিত হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড