• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

দৈনিক অধিকার ঈদ সংখ্যা-১৯

মায়েদের কাছে আমরা পোষাপাখি

  রেদওয়ান আহমদ

০৩ জুন ২০১৯, ১৪:০৮
ছবি
ছবি : মায়েদের কাছে আমরা পোষাপাখি

জীবনপাঠ (ক)

আমার স্বপ্নের ভিতর যে জোনাকি আলো জ্বেলে দিতো আমি তার অসুস্থতা টের পাচ্ছি তার সুস্থতা কোনদিন আমাকে ঘুম ভাঙিয়ে দেয় নি কিন্তু তার অসুস্থতা প্রত্যহই আমাকে জাগিয়ে তোলে; অন্ধকারে মৃতদের সাথে কথা বলাতে নিয়ে যায় শ্মশানঘাট কিংবা কবরস্থানে—যেন আমিই মৃতদের প্রতিনিধি হয়ে বাস করি আমি হাফঝাপ দিয়ে উঠি, জেগে উঠতে চাই ভেসে উঠতে গিয়ে দেখি গহ্বর-অন্ধকার আর আমার সামনে বসে আছেন সাঁইজি-এটা তার বারামখানা। তিনি একতারা পাঠের তালিম দিতে বসে আছেন তার হাতে একমাত্র অলিখিত বই—জীবনপাঠ

কিন্তু আমি তো কয়েকযুগ পার করেছি তাকে নিরক্ষর ভেবে।

জীবনপাঠ (খ)

ছোটবেলায় আমি সমান্তরাল শব্দের অর্থ শিখিনি

প্রায় কুড়ি বছর পেরিয়ে যেদিন আমি প্রথম সমান্তরাল শব্দের অর্থ শিখি সেদিনই আমার স্কুল শিক্ষক আমাকে স্বপ্নে এসে বললেন— ‘মানুষ বাড়তে বাড়তে শিখে, তুমি আজ যা শিখলে কোনদিন তা ভুলবার নয় অথচ- যারা শৈশবে শিখেছে তারা আজ সব ভুলতে বসেছে কেননা তারা ভাবে সব জানা হয়ে গেলে বেড়ে যায় গোঁফ।’

তারপর, ঠিক যখনি উনি চলে যেতে উদ্যত হলেন আমি উনাকে দাড় করিয়ে বললাম ‘মানুষ যেমন বাড়তে বাড়তে শিখে, তেমনি শিখতে শিখতে মরে যায়।’

জীবনপাঠ (গ)

মানুষ কিভাবে মানুষ হয়ে উঠে? এইসবের উত্তর আমার বাবা জানতেন উনি পানামা খালে ঝাঁপ দিয়ে এসবের উত্তর খুঁজতে যেতেন, আমরা তিন ভাইবোন পবিত্র গ্রন্থের মতো উনার কথা শুনতে শুনতে ঘুমোতে যেতাম আর - ঘুম থেকে জেগে দেখতাম — সর্ষের ফুলে ভরে গেছে আমাদের মন ও নয়ন।

আমাদের মা অজপাড়া গাঁয়ের মেয়ে; জীবনপুকুরে ডুব দিয়ে সাগরে চলে যেতেন তারপর উঠে এসে বলতেন সন্ধ্যার গল্প, সন্ধ্যা এলে শেষরাত এবং শেষরাতে বলতেন সকালের গল্প।

মূলত মায়েদের কাছে আমরা পোষাপাখি উড়িয়ে দিতে চান কিন্তু তার আগে শিখিয়ে দিতে চান ‘ডানা ওড়ানোর কৌশল।’

জীবনপাঠ (ঘ)

আমার সাথে যাদের দেখা হয় কিংবা বলা যেতে পারে আমি যাদের সাথে দেখা করি; তাদের আমি কাউকেই চিনিনা এই জলভাঙা ঘাটে জল চেনা যে খুব দায় সেটা বুঝতে পারে না কতিপয় মানুষ অথবা, বলা যেতে পারে মানুষ নিজেকে মানুষ ভেবে যে অম্লসত্তায় পতিত হয়েছে—যার নতুন নাম আমার জানা নেই বলে কবিতায় বলে যেতে পারছি না, এবং এই ভেবে পুড়িয়ে দিয়েছি নিজের শখানেক জীবন তাও জনে জনে বলে বেড়ানোর চেয়ে আরো কয়েক দিস্তা জীবন পুড়িয়ে দেয়া শ্রেয় ভেবে, আমি নির্দিষ্ট ভোর ঠিক করে রাখি কেননা ভোর এলেই — আমি দেখা করতে যাই যাদের সাথে আমার দেখা হয়।

জীবনপাঠ (ঙ)

মান্ধাতার আমলে কোন এক সময় নগরীর প্রধান সড়ক ভিজে যাওয়ার দৃশ্যে যখন আমার ঘুম ভাঙে তখন আমার—বুড়ো বয়সী পিতা ঘুমিয়ে পড়েছেন আমি উনার শতবর্ষ ঘুম ফাঁকি দিয়ে উনার জন্মের সময় উনার কান্না শুনতে গিয়ে দেখি— উনি ঠিক আমার পুত্রের মত আমার দিকে তাক হয়ে আছেন উনার চোখে বিস্ময়ের পর্যাপ্ত ছাপ নেই আমি তখন আমার মেয়ের জন্মের দৃশ্য স্মরণ করতে থাকি আমার মেয়ে ঠিক যেন আমার মায়ের মত রাতের বেলা আমার মেয়ে যখন ঘুমায় আমি ওর মুখ দেখে বিস্মিত হই, তারপর ‘মা’ বলে আদর করতে থাকি আমি আদর করতে থাকি-নাকি আদর পেতে চাই ঠিক বুঝে উঠার আগেই, আমার মেয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে আমি দেখি ওর চোখেও বিস্ময়ের পর্যাপ্ত ছাপ নেই যেন ছেলে বাড়ি ফিরবেই এই চোখে তাকিয়ে থাকা কোন মায়ের চোখ, আমি বিস্মিত হই আমার চোখে পর্যাপ্ত বিস্ময় আমার ঘুম পায় আমি ঘুমাতে চাই

আমি ঘুমাতে চাই আমার পুত্র অথবা পিতার কোলে আমি ঘুমাতে চাই আমার মেয়ে অথবা মায়ের কোলে।

আরও পড়ুন- জানি আকাশ বলে কিছু নাই

ছবি

কবি রেদওয়ান আহমদ

লেখক পরিচিতি : প্রবাস জীবনে থেকেও কিছুটা সময় কবিতার অলংকারে আবদ্ধ করছে নিজেকে। কবিতার ভিতর নিজস্বতা আছে যেমন তেমনি পাবেন বিরহ-যাতনার কথা। কবি রেদওয়ান আহমদ।

তিনি ১৯৯৬ সালের ১৮ জানুয়ারি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখায় জন্মগ্রহণ করেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড