চৌধুরী ফাহাদ
মুখ ও মুখোশ
ভালোবাসার শপথ নিয়ে তারা দমনে চলে একদল নির্বিকার, কিছুতেই কিছু নেই তার মুখাঞ্চলে মিছিলের ভাগ নিয়ে কেউ কেউ ভাঙছে জীবন প্রেম বুকে ফিরে ফিরে আসে শক্তির প্রহসন সবকিছু ছেড়েছুঁড়ে বোবার কিছু থাকুক শোক এসো কবিতা, দেশ নিয়ে কিছু প্রার্থনা হোক অর্ধেক তাঁর লিখে দাও জলের অতল চুমি অর্ধেক যাক সূর্য পেটে- শিরোনাম তাঁর মরুভূমি
আঁধার- ১
নিজের সাথে দেখা হয়না অনেকদিন দেহসালের গভীরে দৈবাৎ কথারা মুচড়ে উঠলেও শ্লেষ মিশ্রিত নি:শ্বাসের সাথে নিজেই গিলেছি অপরাজিতা আঁধার অনেকদিন ঘ্রাণ নেয়া হয়নি মাটির ডাক দিতে দিতে হাওয়াপাহাড় মিশে যেতে দেখেছি নগরভবনের মোড়ে সাড়া দেবার মত অসাড় সময় আমাকে তুলে দিতে পারেনি ডানায় আমাকে ডাকছে নীমলিত নদীর নাম আমাকে ডাকছে জলপাহাড়ের ভূগোল অনেকদিন নিজেকে লুকিয়ে রেখে নিজের গোপন অনেকদিন নিজের সাথে দেখা হয় না, কথা হয় না এইসব অয়োময় রাতে পান করে গেছি নীরবতার মতন কড়া লিকারের মদ নি:সঙ্গতা ছাড়া আমার আর কোন প্রেম ছিল না অনেকদিন এখানে ওখানে বিষণ্ণতার তুলিতে ভেসে-ভাসিয়ে জেনেছি কেবল রাত আঁকলেই জমে উঠে আঁধার।
আঁধার- ২
আঁধার আঁকবো না ভেবে প্রতিদিন মুছে যাচ্ছি রাত দুটো চোখ তীব্র অনীহার একটু ঘষা মুছে যাচ্ছি...
রাত মুছতে মুছতে রাতে এক চিলতে ছায়া এক নিকষ পর্দার ঘোর, ওম... একটু একটু করে প্রতিস্পন্দনে, আমাকে মুছে দিচ্ছে ঘুম; আঁধার আঁধার ঘুম!
যে হাতে তুলে দিয়েছিল দ্রাক্ষামগ সে বলেনি 'মৃত্যু অনিশ্চিত' মর্গে শুয়ে আছি-অনিশ্চিত সেই থেকে যাত্রায়- আমাকে নিয়ে লিখে যাচ্ছে হাসপাতালের ডায়েরি! দেখে- আমাকে মুছে দিচ্ছে ঘুম, আঁধার আঁকবো না ভেবে মুছে যাচ্ছি আঁধারে...
দৈনন্দিন
রবি বার আসলে ড্রয়িং নিয়ে বসি... পেন্সিল থেকে উঠে আসে রক্ত, কালিতে কালো মৌল প্রাণের অর্থ! এখানে ইরেজার বলে কিছু নেই- ছুটির রঙ নিয়ে আয়েশি শরীর দেবে যেতে থাকে ভেতরে আবার!
আতা ফল রঙা বিকেলের দিকে চেয়ে চেয়ে সোমবার কিছু কাজকর্ম হয়...
মঙ্গলে ভরসা রাখি না বলে জ্যোতিষী রেখে গেছে অভিসম্পাত, দূর-দূর দৃষ্টি অসুর, জানালা জুড়ে রাত... বুধবার প্রেমিকার।
বিগতের সমবেদনা নিয়ে উঠে ধুনট প্রহর তাই বৃহস্পতি তোলা থাকে পান পাত্রে...
হৃদমত্ত পথে ঐহিক যাত্রালাপের আগে শুক্রবার আমার ঘুম কিনে নিলেও- ঘুমের জন্য আরাধনা চলে সারারাত! পাশে বসে শনি গুনে বৃত্তাবর্ত ভ্রমণের অভিঘাত...
নিশ্চল আকাশের নিচে
তোমাকে ভেবে অনেকদূর যাওয়া যায়
জানি আকাশ বলে কিছু নাই, তবু যাওয়া যায়, তবুও যাই- কাছাকাছি কোথাও আকাশ অজানায়! তোমাকে ভেবে অনেকদূর এগিয়ে যাওয়া যায়
তোমাকে ভেবে দূরকে আরও দূরে সরিয়ে যাওয়া যায় আরও আরও বহুদুর তোমাকে ভেবে ফিরে আসা যায় না সে পথ পেছনে ফেরা পথ, সম্মুখ ধোঁয়ায়- যেখানে তুমি নাই!
ফিরতে গেলে পাথর সময়, থমকে থাকা শ্বাস ফিরতে গেলে পথের রেখায় রাত- গারদ লোহার, এক অদ্ভুত বাঁধ! বুকের ভেতর স্মৃতি বিবাদ, শেকল শেকল ছায়া অপার চোখে অন্ধ আলো, গুমোট গুমোট গহীন আঁধার ফেরা হয়না ফিরিয়ে নিলে ফেরা হয়না ফিরিয়ে দিলে তোমাকে ভেবে ফেরা যায় না ফিরে আসা পথ পায়ের সাথে পা হাঁটে না-হাতের সাথে হাত আঁটে না সব থেমে যায়, জড় হৃদয় এই হাঁটা পথ অবাক সুদূর দু'পাশ জুড়ে ঠাঠা দুপুর, ফিরতে গেলেই রাত নেমে যায়, রাত নেমে যায়
তোমাকে ভেবে তোমার সাথে এই হাঁটা পথ অবাক নিথর ফিরতে গেলেই অচিন আপন ফিরতে গেলেই ফেরা হারাই, যেখানে তুমি নাই! দাঁড়িয়ে থাকা পথের রেখায় সব থেমে যায় সব থেমে যায়
হৃদয় বুঝি এমনও থাকে- এমন ভাবে অসাড় বাড়ায় অচল জীবনের সমস্ত স্থবিরতাও তোমাকে চায়!
আরও পড়ুন- চিতার ঘাসগুলো কেন বড্ড সবুজ
ছবি : কবি চৌধুরী ফাহাদ
লেখক পরিচিতি : কবি চৌধুরী ফাহাদ। যার কবিতা, প্রকৃতির মাধ্যমে কথা বলে জীবন বোধের। তিনি ক্যানভাসে এঁকে চলেন বিষণ্ণ রং। খেলতে পছন্দ করেন উপমা। তিনি ৩০ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘চন্দ্রবিন্দু প্রকাশন’ এর সাথে সম্পৃক্ত আছেন।
এই পর্যন্ত চৌধুরী ফাহাদের প্রকাশিত হয়েছে ছয়টি কাবিতাগ্রন্থ : ‘চিলেঘুড়ি -২০১৩’, ‘কবি কোন চরিত্রে নাই-২০১৫’, ‘কবি তার কবিতার সংশয়- ২০১৬’, ‘এক খামে পোস্ট হয়ে আসে ঈশ্বরের দুই জীবন- ২০১৭’, ‘ঘর সব পালিয়ে যাচ্ছে বাড়ির ঠিকানায়- ২০১৮’, ‘দ্বি- ২০১৯’,
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড