সাইফ সিফাত খান
বর্তমানে বাংলাদেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই বিদেশে উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে আগ্রহী। নিজের ক্যারিয়ার মজবুত করতে বিদেশে উচ্চশিক্ষা লাভের কোনো বিকল্প নেই। তবে এই সুযোগটি সবাই পায় না। তাই বিদেশে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য, আগ্রহ থাকার পাশাপাশি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবশ্যই মনে রাখা জরুরি। সেই বিষয়গুলো নিয়েই আমার এই লেখা।
চোখ রাখুন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে: একসময় উচ্চবিত্তের সন্তানেরাই কেবল বিদেশে উচ্চশিক্ষার বিষয় নিয়ে ভাবত। বিদেশে পড়ালেখার জন্যে অর্থনৈতিক সচ্ছলতাই ছিলও মুখ্য বিষয়। কিন্তু বর্তমানে কেবল অর্থ থাকলেই সঠিক লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়। কারণ, প্রতিনিয়তই বিভিন্ন দেশের শিক্ষার মান, সুযোগ সুবিধা, চাহিদা, ভবিষ্যৎ প্রাপ্তি ইত্যাদি বিষয় পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই এই পরিবর্তিত বিষয়গুলোর সম্পর্কে সর্বদায় অবগত থাকা জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, আপনি হয়তো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে গত বছরের চাহিদা অনুযায়ী একটা আবেদন করলেন, কিন্তু এ বছর তা পরিবর্তিত হয়ে গেল। ফলে আপনি সুযোগ হারাতে পারেন। কিংবা গত বছর আপনার কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে স্কলারশিপ ছিল না, কিন্তু এ বছর আছে। অথচ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত না থাকার কারণে আপনি সুযোগটি হারাতে পারেন। তাই নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন অনলাইনে, চোখ রাখুন বিভিন্ন ওয়েবসাইটে।
নিজেকে গড়ে তুলুন: বাইরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোর নির্ধারিত কিছু চাহিদা থাকার পাশাপাশি তুলনামূলক ভাবে কিছু মৌলিক চাহিদাও থাকে। যেমন-ইংরেজি ভাষাজ্ঞান, জিম্যাট, স্যাট, জিআরই ইত্যাদি। আপনি যদি নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে চান, তাহলে এই গুরুত্বপূর্ণ কোর্স গুলো করে রাখতে পারেন, যা ভবিষ্যতে আপনার কাজে আসবে। মনে রাখবেন, অর্জিত জ্ঞান কখনো বৃথা যায় না। অনেকেই মনে করে, পড়ালেখার জন্যে বিদেশে না গেলে IELTS অথবা TOEFL করে কি লাভ! অথচ এসব থেকে অর্জিত জ্ঞান আপনার দেশেও চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে এবং ব্যক্তিগত জীবনেও উপকারে আসবে। তাই নিজেকে যতটুকু সম্ভব জ্ঞানী হিসেবে গড়ে রাখুন । আরেকটা বিষয় হলো, কোন বিশ্ববিদ্যালয় যদি আপনার অর্জিত কোনো কোর্স না চেয়েও থাকে, তথাপি আপনি CV-তে উল্লেখ করলে প্রতিযোগিতায় প্রায়োরিটি পাবেন।
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন এবং অটল থাকুন: বিদেশে উচ্চশিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে একটা বিষয় আমরা প্রায়ই লক্ষ্য করি, আমাদের ছোটবেলার বায়নার মতো করেই অনেকেই বলেন আমি বিদেশ আসতে চাই বা ইউরোপ আসতে চাই। কিন্তু তারা কোন দেশে আসতে চায়, এটাও জানে না। আর কোন বিষয়ে পড়বে সেটা তো দূরের কথা। মানে বিষয়টা অনেকটাই এমন যে, ওর আছে আমারও লাগবে; ও গেছে আমিও যাব। কিন্তু বিদেশে উচ্চশিক্ষা মোটেও এরকম কোনো বায়না নয়। এটা মেধা দিয়ে আপনাকে অর্জন করে নিতে হবে। তাই প্রথমেই লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। আপনার বয়স, উদ্দেশ্য বা লাভ ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করুন। উদাহরণ হিসেবে মেধা বা অর্থ থাকার পরও আপনার পারিবারিক অবস্থানের কারণে আপনার বাইরে আসা হয়তো যুক্তিসংগত নাও হতে পারে। তাই সকল দিকে বিবেচনা করে, আদা জল খেয়ে নামুন। তবেই সফল হবেন।
সময়ানুবর্তী হোন: বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি ও স্কলারশিপের সময়সীমা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। যা মেনে চলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সবসময় কিছু জিনিস প্রস্তুত করে নিজের কাছেই সংরক্ষিত রাখুন। যেমন সিভি, মোটিভেশন লেটার, রিকমেন্ডেশন লেটার ইত্যাদি। অনেক সময় আবেদন করতে করতেই সময় ফুরিয়ে যায়। আর তা ছাড়া পোস্টে কাগজপত্র পাঠাতেও সময় ও অর্থের প্রয়োজন। তাই সময়ের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখুন।
অর্থনৈতিক বিষয় বা বাজেট: যদি আপনি প্রকৃতপক্ষেই আগ্রহী হয়ে থাকেন, তাহলে বাস্তবসম্মত বাজেট প্রস্তুত করুন। আপনার পক্ষে কতটুকু ব্যয় করা সম্ভব, তা পরিবারের সাঙ্গে পরামর্শ করে জেনে নিন। সে অনুযায়ী আবেদন করুন। কারণ, এসব বিষয় না ভেবে আবেদন করলে পরে আর্থিক সমস্যার কারণে তা ভেস্তে যেতে পারে। ফলে আপনার আবেদন বা এ সংক্রান্ত অন্যান্য খরচগুলো অপচয়ে পরিণত হবে। আবার দেখা যায়, অনেকে বড় বড় বাজেট তৈরি করেন। কিন্তু আবেদন করতে পোস্ট খরচ দেখে ঘাবড়ে যায়। তাই বলি, বাস্তব সম্মত বাজেট করুন এবং সে অনুযায়ী সামনে অগ্রসর হন। বলাই বাহুল্য, এলোমেলো প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবেই। তাই প্রতিটি বিষয়েই গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
তথ্যবহুল বিষয় পড়ার অভ্যাস করুন: অনেকেই আছে যারা শুধু প্রশ্নই করে যায়। কিন্তু তথ্য পাওয়ার জন্যে অনলাইন নিউজ, পত্রিকা বা এ সংক্রান্ত কোনো ফেসবুক পোস্ট তারা না পড়েই এড়িয়ে যায়। অনেকেই প্রশ্ন করে যে, ভাই বিদেশে কীভাবে যাব? কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব? সুযোগ সুবিধা কেমন? ভবিষ্যৎ কেমন? ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু তাদের যখন কোনো তথ্য দেওয়া হয়, তারা তখন পড়ে না। আমরা পেজে অনেক লিংক পোস্ট করি, যাতে কমবেশি সকল তথ্যই পাওয়া যায়। অথচ লিংকগুলো অনেকে না পড়েই এক প্রশ্ন বারবার করে। তাই পড়ার অভ্যাস করুন। যতটুকু সময় অনলাইনে থাকেন, তার কিছু সময় বিভিন্ন দেশের শিক্ষা সাইটগুলো ভিজিট করুন। আমাদের পেজের বিভিন্ন সময় পোস্ট করা লিংকগুলো পড়ুন। এতে আপনি তো জ্ঞাত হবেনই, আবার অন্যকেও পরামর্শ দিতে পারবেন।
বিভ্রান্ত হবেন না: আপনি যদি আত্মবিশ্বাসী হয়ে থাকেন, তাহলে কেউ আপনাকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না। তাই আত্মবিশ্বাস খুবই জরুরি একটি বিষয়। একটা বিষয় মনে রাখবেন, টাকা দিয়ে কখনো ভিসা কেনা যায় না। আপনার যোগ্যতা থাকলেই কেবল আপনি অ্যাডমিশন এবং ভিসা পাবেন। তাই প্ররোচনায় বিভ্রান্ত হয়ে দালালের খপ্পরে পড়বেন না। অনেকে অ্যাডমিটেড হওয়ার পরও আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভিসা পেতে ব্যর্থ হয়। একটা সাধারণ জ্ঞান হলো, একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি আপনাকে ছাত্র হিসাবে গ্রহণ করে, তবে দূতাবাস ভিসা দিতে বাধ্য; যদি না বড় কোনো ত্রুটি থাকে। তাই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে অগ্রসর হোন।
মনে রাখবেন, জীবন আপনার এবং এর লক্ষ্য আপনাকেই নির্ধারণ করতে হবে। তাই সর্বোপরি চেষ্টা করুন, সফলতা আসবেই। আপনাদের সকলের সফলতা কামনা করছি।
ওডি/এসএসকে
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড