• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

উচ্চশিক্ষায় বিখ্যাত কয়েকটি স্কলারশিপ ও আবেদনের সময়

  আরিফুল ইসলাম আরিফ

২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:৪৪
উচ্চশিক্ষা
ছবি : প্রতীকী

অনেকেই উচ্চশিক্ষার জন্য এশিয়া কিংবা ইউরোপে পড়তে যেতে চায়। কেউ যায় সম্পূর্ণ নিজ খরচে আর কেউ কেউ ফুল-ফান্ডেড স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যায়। তবে বেশিরভাগ মানুষ ফুল-ফান্ড স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যেতে চায়। আপনার যদি বিদেশে গ্র্যাজুয়েশন, পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন কিংবা পিএইচডি করার ইচ্ছে থাকে তাহলে কিছু নামকরা স্কলারশিপের ব্যাপারে ধারণা রাখতে পারেন যেগুলো ভবিষ্যতে আপনার উপকারে আসতে পারে।

মনবুকাশো বা মেক্সট বৃত্তি (জাপান) :

উচ্চশিক্ষায় জাপান সবসময়ই এশিয়ার সেরা পছন্দের একটি। সেই জাপানের সব থেকে জনপ্রিয় বৃত্তিটি হচ্ছে মনবুকাগাকুশো বা সংক্ষেপে মনবুশো স্কলারশিপ। এর আরেক নাম মেক্সট বৃত্তি। বিশাল অঙ্কের ভাতার জন্যে এ বৃত্তি বিখ্যাত, কিন্তু এই বৃত্তির আওতায় স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও পিএইচডি মিলিয়ে মাত্র ২০০ জন বাংলাদেশী সুযোগ পায়। তার ওপর স্নাতক পর্যায়ে বৃত্তি দেওয়া হয় সবচেয়ে কম।

সাধারণত মার্চের শেষে বা এপ্রিলের মাঝামাঝির দিকে এর সার্কুলার প্রকাশিত হয়।

সিএসসি বৃত্তি (চীন) :

চাইনিজ স্কলারশিপ সেন্টার বা সিএসসির বৃত্তিটিই মূলত চীন সরকারের বৃত্তি, যেটি বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও চীন দূতাবাস যৌথভাবে প্রক্রিয়াকরণ করে। এর আওতায় আছে প্রায় আড়াইশ’ এর অধিক চীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান, প্রকৌশল, কৃষি, অর্থনীতি, আইন, ব্যবস্থাপনা বিষয়। শিক্ষা, ইতিহাস, সাহিত্য, দর্শন ও চারুকলার বিষয়গুলোতে ফুল ফান্ডসহ বৃত্তিপ্রদান করা হয়। আপনার চীনা ভাষায় দক্ষতার প্রাতিষ্ঠানিক সনদ না থাকলে বৃত্তির পর আপনাকে চীনে বাধ্যতামূলক চীনা ভাষা শিখতে হবে এক বছর। কেননা পড়াশোনাও হবে সে ভাষাতেই।

ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে সার্কুলার প্রকাশিত হয় এবং আবেদন প্রক্রিয়া চালু থাকে।

রাশিয়ান সরকারি বৃত্তি :

এ বৃত্তির অধীনে শতভাগ ফান্ডিং পেতে হলে আপনাকে পড়তে হবে রাশিয়ান ভাষায়। চিন্তা নেই, বৃত্তি পেয়ে গেলে তাদের খরচেই মূল কোর্সের পূর্বে ৭ মাস রাশিয়ান ভাষা ও ২ মাস রাশিয়ান সংস্কৃতির ওপর কোর্স করে নেবেন। টিউশন, বাসস্থান, ভিসা চার্জসহ সব কিছু এ বৃত্তির অন্তর্ভুক্ত। তবে বিমান যাতায়াত ও খাবার খরচ নিজের। দেড়শ থেকে আড়াইশ ডলারের মতো পড়বে মাসিক খাবার খরচ। আর রাশিয়া পৌঁছে ১০০-১৫০ ডলার দিয়ে স্বাস্থ্য বীমা করাতে হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে সার্কুলার আসে মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন রাশিয়ান সেন্টার অব সায়েন্স অ্যান্ড কালচার, ধানমন্ডিতে।

আইসিসিআর (ভারত) :

বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী সরকারি বৃত্তি নিয়ে ভারতে পড়তে যায়। বৃত্তিটি দেয় মূলত ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর কালচারাল রিলেশন্স। স্নাতক পর্যায়ে চিকিৎসাবিজ্ঞান ব্যতীত মোটামুটি সব বিষয়েই আবেদন করতে পারবেন। টিউশন খরচ সম্পূর্ণ ফ্রি। থাকা-খাওয়া বাবদ আপনাকে প্রতি মাসে সাড়ে দশ হাজার রুপী দেওয়া হবে।

ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে সার্কুলার প্রকাশিত হয়।

কেজিএসপি (কোরিয়ান সরকারি বৃত্তি) :

আপনি যে মাধ্যমেই পড়াশোনা করুন না কেন, এই বৃত্তিটিতে আপনাকে বাধ্যতামূলক কোরিয়ান ভাষা শিখতে হবে প্রায় ১ বছর। সেটির পুরো খরচ অবশ্য কর্তৃপক্ষই বহন করবে। এই বৃত্তিটিতে আবেদন করতে আইইএলটিএস স্কোরের কোনো প্রয়োজন নেই। চিকিৎসাবিজ্ঞান ছাড়া প্রায় সকল জেনারেল বিষয়ে আবেদন করতে পারেন। তবে শর্ত হচ্ছে হাইস্কুল গ্র্যাজুয়েশন, তথা এইচএসসিতে গড়ে পেতে হবে অন্তত ৮০% নম্বর। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারির ভেতর যে কোনো সময় সার্কুলার হবে, চোখ রাখুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে। টিউশন, থাকা-খাওয়া, ভিসা চার্জ, মেডিকেল ইনস্যুরেন্স সব কিছু বাবদ পাবেন বেশ ভালো অঙ্কের ভাতা। এমনকি বছরে একবার যাতায়াতের জন্য আপনি পাচ্ছেন রাউন্ড ট্রিপ বিমানের ইকোনমি ক্লাস টিকিট।

এর বাইরে ফুল ফান্ড নিয়ে কোরিয়ায় পড়ার জন্য আরেকটি সরকারি বৃত্তি রয়েছে, যা কেবল মানবিকের শিক্ষার্থীদের জন্য। কোরিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব আর্টসের নিজস্ব এ বৃত্তির অধীনে আপনি ‘সঙ্গীত’, ‘নাট্যকলা’, ‘চলচ্চিত্র, টেলিভিশন ও মাল্টিমিডিয়া’, ‘নৃত্য’ ও ‘ভিজুয়াল আর্ট’ বিষয়ে স্নাতক করতে পারেন।

সাধারণত মার্চ থেকে জুন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এর সার্কুলার আসে।

তুর্কি বুরস্লারি বৃত্তি (তুরস্ক) :

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আপনার আবেদনপত্র তুরস্কের দূতাবাস আপনার পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পাঠাবে। তাদের পছন্দের সঙ্গে আপনার আবেদনের প্রোফাইল ব্যাটে-বলে মিলে গেলে আপনি হয়ে যাবেন ‘শর্টলিস্টেড’। এই শর্টলিস্ট থেকে আপনাকে ডাকা হবে তুরস্কের দূতাবাসে সাক্ষাৎকারের জন্য। দ্বিতীয় পরখের সে যাত্রাতেও আপনি উতরে গেলে এক-দেড় মাস পর বৃত্তির অফার লেটারটাও হাতে পেয়ে যাবেন। টিউশন তো সম্পূর্ণই ফ্রি, পাশাপাশি মাসিক ভাতা পাবেন ৭০০ টার্কিশ লিরা।

সাধারণত এপ্রিল মাস থেকে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়, অর্থাৎ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে সার্কুলার আসে।

কমনওয়েলথ স্কলারশিপ (যুক্তরাজ্য) :

ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করার পাশাপাশি মাসে প্রায় ২ লাখ টাকা পাওয়া যায়। কমনওয়েলথ স্কলারশিপ কমিশন ইন ইউনাইটেড কিংডম (সিএসসি) স্কলারশিপে এই সুযোগ রয়েছে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য এ স্কলারশিপ দেওয়া হয়। সাধারণত মাস্টার্স কোর্সে ১ বছরের জন্য এ বৃত্তি পাবেন সিএসসির সঙ্গে যুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীরা।

প্রতি বছর সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এর সার্কুলার আসে।

ডাড স্কলারশিপ (জার্মানি) :

জার্মানিতে আর্ন্তজাতিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুযোগ তৈরি করে দিতে ডাড প্রতি বছর দিয়ে থাকে স্কলারশিপ। এই স্কলারশিপ একদিকে যেমন সম্মানের, অন্যদিকে আর্ন্তজাতিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের ব্লক অ্যাকাউন্টের ঝামেলা থেকেও রেহাই দিয়ে থাকে। তাই ডাড স্কলারশিপের প্রতি রয়েছে শিক্ষার্থীদের বিশেষ দূর্বলতা।

প্রতি বছর সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এর সার্কুলার আসে।

ভিএলআইআর-ওইউএস স্কলারশিপ (বেলজিয়াম) :

ভিএলআইআর-ওইউএস মূলত বেলজিয়াম সরকার প্রদত্ত বৃত্তি। এই বৃত্তির জন্য আবেদন করতে পারবে এমন ১০টি এশিয়ান দেশের মধ্যে বাংলাদেশের নাম অন্তর্ভুক্ত আছে। আবেদনকারীকে বাংলাদেশের স্থায়ী নাগরিক হতে হবে এবং আবেদন করার সময় বাংলাদেশে অবস্থান করতে হবে। এই বৃত্তির অধীনে হেলথ ইনস্যুরেন্স (অ্যাক্সিডেন্টাল যাতায়াতের সব খরচ ইনস্যুরেন্স থেকেই আসবে), টিউশন ফি, ঢাকা থেকে বেলজিয়াম থেকে ঢাকা যাতায়াতের সব খরচ বেলজিয়াম সরকার বহন করবে। ট্রেনিং প্রোগ্রাম ও মাস্টাস প্রোগ্রাম এর বৃত্তির টাকার পরিমাণ ভিন্ন। তবে কমবেশি ১২০০ ইউরো পাবেন প্রতি মাসে। এ থেকে স্টুডেন্ট ডরমিটরি এর ভাড়া আপনাকে পরিশোধ করতে হবে (২৪০ – ৩২০ ইউরো)। মাস্টাস প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে বিবাহিত হলে প্রতিমাসে এর জন্য অতিরিক্ত ভাতা পাবেন। এছাড়া, প্রাথমিকভাবে প্রায় ৮০০-১২০০ ইউরো পাবেন বই কেনা ও অ্যাডজাস্ট করার জন্য।

প্রতি বছর সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এর সার্কুলার আসে।

ইরাসমাস মুন্ডুস স্কলারশিপ (ইউরোপিয়ান কান্ট্রি) :

বর্তমান বিশ্বে যে সকল স্কলারশিপ/বৃত্তিগুলো অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও সম্মানজনক বলে বিবেচনা করা হয় তার মাঝে অন্যতম হচ্ছে ‘ইরাসমাস মুন্ডুস স্কলারশিপ/বৃত্তি’। প্রতিবছর ইউরোপিয়ান কমিশন হতে সারাবিশ্বের শিক্ষার্থীদের জন্য এই শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হয়ে থাকে। এই শিক্ষাবৃত্তির অধীনে ইউরোপের প্রায় সবগুলো দেশে নিজের পছন্দের বিষয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে। এই ‘ইরাসমাস মুন্ডুস স্কলারশিপ/বৃত্তি’দেওয়ার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো শিক্ষাবৃত্তির পাশাপাশি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে সংস্কৃতির আদান-প্রদান, পড়াশোনার পাশাপাশি ভাষা, মানুষ ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারা।

প্রতিবছর সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে এর সার্কুলার আসে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড