শিক্ষা ডেস্ক
আন্তর্জাতিকভাবে সর্বত্র স্বীকৃত বর্ষপঞ্জি গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারের সাথে সমন্বয় করার জন্য বাংলা ক্যালেন্ডার পরিবর্তন করা হয়েছে। বাংলাদেশের সাথে জড়িত ঐতিহাসিক দিবসগুলোকে এই বর্ষপঞ্জি আলোকেই পালন করা হবে।
বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) বিবিসিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। তবে এই পরিবর্তন শুধু বাংলাদেশের জন্যই করা হয়েছে। এখন থেকে পয়লা বৈশাখসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো নির্দিষ্ট দিনে পালন হবে। বাংলা ভাষাভাষী হলেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে এই পরিবর্তন প্রযোজ্য নয়।
কি কি পরিবর্তন থাকছে ?
বাংলাদেশে নতুন বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী এখন থেকে বাংলা বছরের প্রথম ছয় মাস ৩১ দিনে হবে। এর আগে বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র---বছরের প্রথম এই পাঁচ মাস ৩১ দিন গণনা করা হত।
এখন ফাল্গুন মাস ছাড়া অন্য পাঁচ মাস ৩০ দিনে পালন করা হবে।
ফাল্গুন মাস হবে ২৯ দিনে, কেবল লিপইয়ারের বছর ফাল্গুন ৩০ দিনের মাস হবে।
বাংলা বর্ষপঞ্জি পরিবর্তনের কাজটি করেছে বাংলা একাডেমির গবেষণা, সংকলন এবং অভিধান ও বিশ্বকোষ বিভাগ।
বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মোবারক হোসেন জানান, ২১শে ফেব্রুয়ারি, ১৬ই ডিসেম্বর, ২৬শে মার্চের মতো গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় দিবসসমূহ বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী যে দিনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, সেই দিনে পালন করা হবে।
যেমন ২১শে ফেব্রুয়ারি, যা এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়, ১৯৫২ সালে ভাষার দাবিতে নামা মিছিলে গুলি চালানোর সেই ঘটনা ঘটেছিল বাংলা আটই ফাল্গুনে। কিন্তু বছর ঘুরে অধিকাংশ সময়ই এখন ২১শে ফেব্রুয়ারি গিয়ে পড়ে নয়ই ফাল্গুনে, যা নিয়ে বিভিন্ন সময় লেখক, কবি, সাহিত্যিকসহ অনেকে আপত্তি জানিয়েছিলেন।
তিনি আরও জানান, একইভাবে বাংলাদেশের বিজয় দিবস ১৬ই ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালের ঐ দিনটি ছিল পয়লা পৌষ, কিন্তু বাংলা পঞ্জিকায় দিনটি পড়ত দোসরা পৌষ।
"আবার রবীন্দ্রজয়ন্তী ও নজরুলজয়ন্তী এবং তাদের মৃত্যুদিনও বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী যে দিনে হয়েছিল, তার সঙ্গে গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির দিন মেলে না। কিন্তু নতুন নিয়মে দুই বর্ষপঞ্জির মধ্যে দিন গণনার সমন্বয় করা হয়েছে।"
কবে থেকে এই পরিবর্তন ?
বাংলা একাডেমীর গবেষণা, সংকলন এবং অভিধান ও বিশ্বকোষ বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, এই পরিবর্তন মূলত চলতি ১৪২৬ বঙ্গাব্দের প্রথম দিন থেকে চালু হয়েছে। কিন্তু আগের নিয়ম অনুযায়ী যেহেতু প্রথম পাঁচ মাস ৩১ দিনেই হয়ে থাকে, সে কারণে আশ্বিন মাস পর্যন্ত পরিবর্তন টের পাওয়া যায়নি।
নতুন ক্যালেন্ডার অনুযায়ী মঙ্গলবার প্রথমবারের মতো ৩১ দিনের আশ্বিন মাস পালন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ১৭ই অক্টোবর পয়লা কার্তিক গণনা শুরু হওয়ায়, আজই নতুন ক্যালেন্ডারের পরিবর্তন প্রথম দেখা যায়।
কবে সংস্কার শুরু ?
বাংলাদেশে এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মত বর্ষপঞ্জি সংস্কার করা হলো। নতুন করে পরিবর্তন আনার জন্য ২০১৫ সালে বাংলা একাডেমি সংস্থাটির তৎকালীন মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে। সেই কমিটিতে ড. অজয় রায়, জামিলুর রেজা চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ সদস্য ছিলেন।
বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী মেঘনাদ সাহা, যিনি বাংলাদেশেরই সন্তান, তাকে প্রধান করে ভারতের সরকার একটি পঞ্জিকা সংস্কার কমিটি করেছিল।
"তার আগে কেবল মাত্র চান্দ্র হিসাব ধরে বাংলা বর্ষপঞ্জি করা হত, যার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছিল না। মেঘনাদ সাহার ঐ কমিটি জ্যোতির্বিজ্ঞানের আলোকে বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কারের সুপারিশ করেন এবং তা গৃহীত হয়। পরে ১৯৫৬ সালে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বর্ষপঞ্জি সংস্কারের কিছু সুপারিশ সরকারের কাছে করেন। নতুন বর্ষপঞ্জি তারই আলোকে করা হয়েছে।"
বাংলা বর্ষপঞ্জির শুরু
ইতিহাসবিদদের হিসাব অনুযায়ী ১৫৫৬ সাল থেকে বাংলা সন প্রবর্তন করা হয়।
মুঘল সম্রাট জালালউদ্দিন মোহাম্মদ আকবর খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য তার সভার জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লা শিরাজীর সহযোগিতায় ১৫৮৪ খ্রিষ্টাব্দে 'তারিখ-এ-এলাহি' নামে নতুন একটি বছর গণনা পদ্ধতি চালু করেন। এটি কৃষকদের কাছে 'ফসলি সন' নামে পরিচিত হয়, যা পরে 'বাংলা সন' বা 'বঙ্গাব্দ' নামে প্রচলিত হয়ে ওঠে।
ঐ সময়ে প্রচলিত রাজকীয় সন ছিল 'হিজরি সন', যা চন্দ্র সন হওয়ার প্রতি বছর একই মাসে খাজনা আদায় সম্ভব হতো না। বাংলা সন শূন্য থেকে শুরু হয়নি, যে বছর বাংলা সন প্রবর্তন করা হয়, সে বছর হিজরি সন ছিল ৯২৩ হিজরি। সে অনুযায়ী সম্রাটের নির্দেশে প্রবর্তনের বছরই ৯২৩ বছর বয়স নিয়ে যাত্রা শুরু হয় বাংলা সনের। বাংলা বর্ষের মাসগুলোর নামকরণ হয়েছে বিভিন্ন নক্ষত্রের নামে।
ওডি/জেআই
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড