• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

রাজশাহীতে ইউনাইটেড ইনস্টিটিউটে ‘প্রতারণা’; বিপাকে শিক্ষার্থীরা

  রাজশাহী প্রতিনিধি

১৪ জুলাই ২০১৯, ০৮:৫৩
রাজশাহী
ইউনাইটেড টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট (ছবি : দৈনিক অধিকার)

রাজশাহীর পবা উপজেলার ইউনাইটেড টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে বিএসসি (ইঞ্জিনিয়ারিং) কোর্সে ভর্তি হয়ে এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ৩০ শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন। তারা ১২ লাখ টাকা পরিশোধ করেও পরীক্ষায় বসতে পারেনি।

গত ২৭ জুন থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ অন্য ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোর একই শিক্ষাবর্ষের (২০১৮-১৯) শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরু হলেও তাদের পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা করেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ দিকে এই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিপুল অর্থ নিয়ে শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত করে এখন কলেজটির ব্যবস্থাপকের হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, বিষয়টি নিয়ে তারা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে, তারা কিছু জানেন না উল্লেখ করে ইনস্টিটিউটের ব্যবস্থাপক মেহেদী হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। শিক্ষার্থীরা ব্যবস্থাপকের সঙ্গে দেখা করতে না পেরে এক পর্যায়ে মোবাইলে যোগাযোগ করলেও তাদের কল রিসিভ করেননি তিনি।

ফলে বাধ্য হয়ে গত ২ জুলাই ভুক্তভোগীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শকের দপ্তরে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, ইনস্টিটিউট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের রেজিস্ট্রেশন করেনি। ফলে তারা ইনস্টিটিউটে নির্ধারিত ফিস জমা দিয়ে ভর্তি হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়। ফলে তাদের পরীক্ষা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

পবা উপজেলা পরিষদের দক্ষিণে অবস্থিত ইউনাইটেড বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও ইউনাইটেড টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট কলেজ এই দুইটা নামে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে দুইটি আবাসিক ভবনে।

কলেজ সূত্র জানায়, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগে ৮ জন, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) ৭ জন ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ১৫ জন ভর্তি হয়েছিল। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ভর্তি বাবদ ১০ হাজার, সেমিস্টার ফিস বাবদ ২০ হাজার টাকা এবং পরীক্ষার ফিস বাবদ ৫ হাজারসহ প্রায় ৪০ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়। নিয়মিত ক্লাসও নেওয়া হয়। অথচ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক দপ্তরে কোনো টাকা জমা দেয়া হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় তাদের নামে কোনো প্রবেশপত্রও ইস্যু করেনি রাবি কর্তৃপক্ষ।

ভুক্তভোগী ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শামিউল ইসলাম বলেন, আমরা ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন এবং পরীক্ষা ফিস বাবদ প্রায় ৪০ হাজার করে টাকা দিয়েছি। নিয়মিত ক্লাসও করেছি। এখন শুনছি আমাদের রেজিস্ট্রেশন হয়নি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের কোনো নামও নেই। ফলে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগও নেই।

তিনি আরও বলেন, বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর আমরা ইনস্টিটিউটে গিয়ে টাকা ফেরত চেয়েছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ভর্তির সময়ে নেওয়া আমদের এইচএসসির সার্টিফিকেট ও মার্কসশিট ফেরত দিয়েছেন। কোনো টাকা ফেরত দেয়নি। ইনস্টিটিউটের এমডি দেশেও নেই বলে জানিয়েছে।

কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মো. তায়েব ফারাজি ও সিভিল ইঞ্জিনিয়রিং বিভাগে মারুফ হাসানও একই অভিযোগ করেন।

তারা জানান, ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন ও পরীক্ষার ফিস বাবদ জমা দেওয়া টাকা ফেরত চাইলে কর্তৃপক্ষ শুধু আশ্বাস দিচ্ছে। তবে আদৌ তারা টাকা ফেরত পাবেন কি না তা বুঝতে পারছেন না তারা।

এ বিষয়ে জানতে গত ১০ জুলাই পবা উপজেলা পরিষদের দক্ষিণে অবস্থিত ওই ইনস্টিটিউটে গিয়েও মহাব্যবস্থাপক মেহেদী হাসানের দেখা মেলেনি। পরে তার মোবাইলে একাধিকাবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

শনিবার (১৩ জুলাই) দুপুরে ওই ইনস্টিটিউটের রিসিপশনিস্ট নিপা নামে একজন মোবাইলে জানান, ইনস্টিটিউটের এমডি মেহেদী হাসান দেশে নেই। কবে আসবেন তাও তিনি বলতে পারেন না।

শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন না হওয়া এবং টাকা ফেরত দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আসলে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ হওয়া প্রতি বছর নবায়ন করতে হয়। টাকার অভাবে নবায়ন করা সম্ভব হয়নি। শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় ভর্তি হতে পারছে না। তবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের টাকা এমডি ফেরত দিতে চেয়েছেন বলে জানান তিনি।

জানতে চাইলে রাবির কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক এম. মজিবুর রহমান বলেন, ওই ইনস্টিটিউট গত তিন বছর বিএসসি শাখার কোনো নবায়ন ফিস জমা দেয়নি। তারা শিক্ষার্থী ভর্তি করালেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন হয়নি। ফলে তাদের পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। আমরা ওই ইউনাইটেড ইনস্টিটিউটের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তাদের অনুমোদন বাতিল করা হবে।

ওডি/এমবি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড