• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

প্রতিদিন টিফিনের পর স্কুল ছুটি : ৩ শিক্ষককে শোকজ 

  সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ০৯:৩৬
প্রাথমিক বিদ্যালয়
চর সাপড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (ছবি : দৈনিক অধিকার)

প্রতিদিনই টিফিনের পর পরই ছুটি দিয়ে স্কুল বন্ধ রাখার ঘটনায় সিরাজগঞ্জের স্থায়ী কয়েকটি পত্রিকায় ‘টিফিনের পরই বন্ধ চর সাপড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ায় সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চরসাপড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ তিন শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে।

রবিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তাদেরকে শোকজ করা হয়। একই সঙ্গে তিন কার্য দিবসের মধ্যে ওই তিন শিক্ষককে শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এতে সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হলে তদন্তপূর্বক ওই তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আপেল মাহমুদ।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রধান শিক্ষকসহ ওই তিন শিক্ষক নিয়মিত স্কুলে না এসে দীর্ঘদিন যাবত কর্ম ফাঁকি দিয়ে নিজেদের কাজে ব্যস্ত থাকেন। আবার কোনো কোনোদিন স্কুলে আসলেও কোনো রকম টিফিন পর্যন্ত অবস্থান করে টিফিনের পর পরই ছুটি দিয়ে স্কুল বন্ধ করে চলে যান। এতে ওই স্কুলের অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যহতসহ ভেঙ্গে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। চর এলাকার শিক্ষার্থীদের প্রতি সরকার বিশেষ নজর দেওয়ার নির্দেশ দিলেও সে নির্দেশ এখানে উপেক্ষিত।

স্কুলটি চর এলাকায় হওয়ায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়মিত মনিটরিং না থাকার সুযোগে প্রধান শিক্ষকসহ ওই তিন শিক্ষক প্রতিদিন টিফিনের সময় স্কুল বন্ধ করে বাড়ী চলে যান। এতে একদিকে ব্যক্তিগতভাবে ওই তিন শিক্ষক লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কোলমতি শিক্ষার্থীরা। আর অপচয় হচ্ছে সরকারের অর্থ। শিক্ষকদের স্কুল ফাঁকি দেওয়ার ব্যাপারে চর এলাকার মানুষ প্রতিবাদ করলে তাদেরকে প্রধান শিক্ষক শেখর কুমার ও সহকারী শিক্ষক এস.এম শাহীন প্রকাশ্যে হুমকি ধামকি ও নানা ভয়ভীতি দেখান।

ফলে তাদের ভয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকসহ এলকাবাসী মুখ খুলতে সাহস পায় না। ফলে স্কুলের শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনাসহ প্রধান শিক্ষকসহ ওই তিন শিক্ষক ও দপ্তরী কাম নৈশ প্রহরীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোড় দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

উল্লেখ্য, প্রতিদিন টিফিনের সময় টিফিন না দিয়ে সরাসরি টিফিনের সময় স্কুল ছুটি দিয়ে কৌশলে বিদ্যালয়ের সামনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে বসে থাকেন দপ্তরি কাম নৈশ প্রহরী। অথচ ঐ সব শিক্ষকরা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করে আসছেন।

শনিবার (২ ফেব্রুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের চর সাপড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে এমন চিত্র দেখা যায়। শুধু শনিবারই নয় এমন চিত্র প্রতিদিনের বলে জানিয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।

শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, এ বিদ্যালয়টির বয়স ৪৫ বছর। বর্তমানে এ স্কুলে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত রয়েছে। এক সময় বিদ্যালয়টির সুনাম ছিল, কিন্তু বর্তমান শিক্ষকরা স্কুলের অবস্থা একেবারেই নষ্ট করে ফেলেছেন। তারা নিয়মিত আসেন না। ছুটি দেওয়ার কোনো টাইম টেবিল নাই। এছাড়াও স্কুলের সহকারি শিক্ষক বাচ্চাদের বেধড়ক পেটায়। এ কারণে ভয়েই অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসে না।

স্কুলে শিক্ষক অনুপস্থিতির বিষয়ে প্রধান শিক্ষক শেখর কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি হোম ভিজিটে রয়েছি। ৩ সহকারি শিক্ষকের মধ্যে একজন ডেপুটেশনে ও একজন ছুটিতে রয়েছে। এস এম শাহীন আলম নামে এক শিক্ষকের বিদ্যালয়ে থাকার কথা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুপুর ১২টার পর স্কুল ছুটি দিয়ে শিক্ষক এস.এম শাহীন শহরের কোবদাসপাড়া মহল্লায় নিজ বাড়ীতে অবস্থান করছেন। এ দিকে, স্কুলে সাংবাদিক আসার খবর পেয়ে প্রধান শিক্ষক শেখর কুমার, সহকারি শিক্ষক এস.এম শাহীন দ্রুত বিদ্যালয়ে চলে আসেন। এ সময় তারা দপ্তরি আব্দুল মমিন রিপনকে দিয়ে শিশু শিক্ষার্থীদের এক এক করে ডেকে নিয়ে আসেন।

এ বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সজীব, ৪র্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সোনিয়াসহ অনেকেই বলেন, দুপুরের পর পরই স্কুল ছুটি দেওয়া হয়। শিক্ষকরাও নিয়মিত আসেন না।

স্থানীয় বাসিন্দা কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী আসিফ বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দুপুরের পর কেউ থাকেন না। শিক্ষা কর্মকর্তারাও কোনো সময় এ স্কুল ভিজিট করতে আসেন না।

স্থানীয় ভ্যান চালক রফিকুল ইসলাম জানান, ১০টার দিকে দুই শিক্ষক এসে এক ঘণ্টার পর স্কুল বন্ধ করে চলে যান। এভাবেই চলছে এ স্কুলের কার্যক্রম।

স্থানীয় কৃষক আমজাদ হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকে, কিন্তু শিক্ষকেরা সময়মতো আসে না। ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যহত হচ্ছে।

আরও পড়ুন : শ্রেণিকক্ষে কোচিংয়ের পাঠদান, স্কুল সিলগালা

নৌকার মাঝি রইচ উদ্দিন বলেন, শিক্ষকরা ঠিকমতো স্কুলে আসেন না। আবার আসলেও কিছুক্ষণ থেকে চলে যান। এভাবে ওই স্কুলে কার্যক্রম চলায় দিনদিন ঝড়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আপেল মাহমুদ জানান, আজকে স্কুল বন্ধের কোনো কারণই নেই। অথচ চর সাপড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ কেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, সময়মতো স্কুলে না থেকে শিক্ষকেরা যদি স্কুল বন্ধ করে চলে যায়। আর তা যদি তদন্তে প্রমাণিত হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড