• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ফি ইস্যুতে মুখোমুখি অবস্থানে স্কুল কর্তৃপক্ষ-অভিভাবক

  শিক্ষা ডেস্ক

২১ অক্টোবর ২০২০, ১১:১৬
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের লোগো
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের লোগো (ছবি : দৈনিক অধিকার)

টিউশনসহ বিভিন্ন ফি ইস্যুতে প্রায় সব স্তরের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সৃষ্টি হয়েছে এক রকম অস্থিরতা। রীতিমতো মুখোমুখি অবস্থায় দাঁড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবক-শিক্ষার্থীরা।

টিউশন ফি কমানোসহ অন্য খাতের অর্থ মওকুফ চাচ্ছেন অভিভাবকরা। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের সামগ্রিক খরচ বহনে ফি আদায়ের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন প্রতিষ্ঠানপ্রধানরা। এমন পরিস্থিতিতে কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। তবে টানা দু’দিন বিক্ষোভের পর মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়েছে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় (এনএসইউ)। তবে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখনও কিছু জানায়নি।

ফি ইস্যুতে মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের অভিভাবকরা একাধিকবার স্মারকলিপি দিয়েছেন। তারা বলছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে মানবিক হওয়ার জন্য শিক্ষামন্ত্রী একাধিকবার পরামর্শ দিয়েছেন।

বিশেষ করে যেসব খাতে ব্যয় হয়নি সেগুলো পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু টিফিন, পরিচ্ছন্নতা, লাইব্রেরি, আইসিটি, আপ্যায়ন, পানি, বিদ্যুৎ, ম্যাগাজিন, পিকনিকসহ বিভিন্ন খাতের ফিও আদায় করা হচ্ছে। দরিদ্র এবং করোনায় বেকার হয়ে যাওয়া অভিভাবকদের প্রতি সদয় হওয়ার আহ্বান ছিল মন্ত্রণালয়ের। তাতেও কর্ণপাত করছে না বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান।

তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, টিউশন ফি আদায় গড়ে ৭০ শতাংশ কমে গেছে। সামর্থ্য আছে এমন অভিভাবকরাও ফি পরিশোধ করছেন না। এ কারণে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতা অনিয়মিত হয়ে গেছে। যদিও শিক্ষকদের কেউ কেউ বলছেন, যেসব প্রতিষ্ঠানে মোটা অঙ্কের তহবিল আছে সেসব প্রতিষ্ঠানের কোনো কোনোটি ফি আদায় না হওয়ার ধুয়া তুলে বেতন-ভাতা পরিশোধ করছে না। এমন পরিস্থিতিতে সার্বিকভাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনা প্রয়োজন বলে মনে করেন শিক্ষক-অভিভাবকরা।

দেশে প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩ কোটি। এর মধ্যে মাধ্যমিকে আছে ১ কোটি ৫ লাখ। এই স্তর বা প্রাথমিক সংযুক্ত স্কুল ও কলেজে সংকট বেশি বলে জানা গেছে। এসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোমিনুর রশিদ আমিন যুগান্তরকে বলেন, টিউশন ফি ইস্যুতে শিগগিরই মন্ত্রণালয় থেকে একটি নির্দেশনা জারি করা হবে।

এ নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) একটি প্রতিবেদন পাঠাতে বলা হয়েছে। মাউশি এবং শিক্ষা বোর্ড মিলে এটি তৈরি করবে। সেটি পেলেই নির্দেশনাটি দেওয়া হবে।

মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এসএম গোলাম ফারুক বলেন, প্রতিবেদন তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। শিগগির এটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। আশা করছি, এ সপ্তাহের মধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হবে।

ইউজিসি পরিচালক (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) ড. ফখরুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যারা চালাচ্ছেন তারা এ দেশেরই নাগরিক। তাদের বেশির ভাগ আবার কর্মসংস্থানের মালিক।

অপরদিকে এসব প্রতিষ্ঠানের প্রায় সব শিক্ষার্থী এ দেশি। করোনাকালে জনগণের আর্থিক অবস্থা কেমন তা কারও অজানা নয়। তাই বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন ফি মওকুফ করে সেটা সবাই স্বাগত জানাবে।

আইনি কারণে ইউজিসি এ ব্যাপারে নির্দেশনা না দেয়াই সমীচীন। তবে আমরাও এটা প্রত্যাশা করি। আর ফি’র কারণে যদি বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে, এর চেয়ে কম অর্থ সংগ্রহ করার কৌশল গ্রহণ করা হলে বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের লাভই বেশি হতে পারে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফি আদায়ে খুবই কঠোর অবস্থানে আছে। এ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। নামমাত্র অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা নিয়ে দাবি করা হচ্ছে ফি। গোটা অর্থ পরিশোধ না করলে এই পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের যুক্ত করা হচ্ছে না। অবশ্য কিছু প্রতিষ্ঠান ফি পরিশোধে চাপ দিচ্ছে না।

ফি’র জন্য বেশি চাপ দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি রাজধানীর মিরপুরের মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়। অভিভাবকরা টেলিফোনে জানিয়েছেন, টেস্টসহ বিভিন্ন পরীক্ষার নামে প্রতিষ্ঠানটি অর্থ আদায়ে নেমেছে। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত দাবি করা হচ্ছে সব ধরনের ফি। দু-এক মাসের ফি বকেয়া থাকলেও পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেওয়া হচ্ছে না। সবচেয়ে ক্ষোভের বিষয় হচ্ছে, কোনো কোনো শিক্ষক অনলাইনে ক্লাসে যুক্ত হয়ে অভিভাবককে ডেকে নেন। এরপর কঠোর ভাষায় টাকা পরিশোধে বলছেন।

একজন অভিভাবক বলছেন, প্রতিষ্ঠানটিতে পঞ্চম শ্রেণিতে ইংলিশ ভার্সনে টিউশন ফি ২৭শ’ টাকা নেওয়া হয়। এর মধ্যে ৫০ টাকা আইসিটি এবং ১৫০ টাকা রক্ষণাবেক্ষণ ফি। সাত মাস ধরে তার সন্তান স্কুলে যায় না।

আইসিটি সামগ্রী ব্যবহার করছে না। তার প্রশ্ন এই খাতে ফি দিতে হবে কেন। একজন শিক্ষক বলেন, তাদের বাধার মুখে কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠানটি আবেদন করে এমপিও (বেতনের সরকারি অংশ) নেওয়া বন্ধ করেছে।

এর অসৎ উদ্দেশ্য ছিল এই যে, তাহলে সরকারি বিধিবিধান মানতে হবে না। ইচ্ছামতো চালানো যাবে প্রতিষ্ঠান। ওই সিদ্ধান্তের কারণে শিক্ষকরা আজকে ঝুঁকিতে। টিউশন ফি আদায় না হওয়ার দোহাই দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা অনিয়ম করা হয়েছে। অসহায় অভিভাবকদের আবেদনও আমলে নেওয়া হচ্ছে না। অথচ খোদ মন্ত্রী এ ব্যাপারে ইতিবাচক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফি আদায়ের কথা বলা হলেও যে যা দিচ্ছে আমরা নিচ্ছি। ফি না দেওয়ার কারণে কেউ পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়নি। ভবিষ্যতেও হবে না। তিনি বলেন, সরকারি এমপিও আমরা নিচ্ছি না। তাই টিউশন ফি আদায়ের বিকল্প নেই।

আর ফি আদায়ে অভিভাবকের ওপর কোনো চাপ নেই। পরবর্তী শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের রোল নম্বরের ইস্যু নিষ্পত্তির জন্য পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি স্বীকার করেন, করোনায় বেকার হওয়া অভিভাবকদের আবেদন পেয়েও তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননি। তার পক্ষে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া সম্ভব নয়। তবে কমিটির মিটিংয়ে আবেদনগুলো তিনি তুলে ধরবেন।

অভিভাবক ঐক্য ফোরামের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল কবির দুলু বলেন, মহামারী পরিস্থিতিতে বর্তমানে অনেক অভিভাবক আর্থিক সংকটে। কেউ চাকরিচ্যুত বা কম বেতন পাচ্ছেন। আবার কেউ ব্যবসা-বাণিজ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে অভিভাবকদের পক্ষে টিউশন ফি ও অন্যান্য চার্জ পরিশোধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সদয় আচরণ করছে না। আমরা ৬ মাসের টিউশন ফি মওকুফের আদেশ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেও প্রতিকার পাইনি। এটা খুবই হতাশাজনক।

উল্লেখ্য, করোনা পরিস্থিতির কারণে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা আছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড