শিক্ষা ডেস্ক
ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড স্কুলের স্ট্যান্ডার্ড ফাইভের শিক্ষার্থী আহনাফ অন্তিক। পরিবারের সঙ্গে লকডাউনের দিন পার করছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মুখে গত ১৬ মার্চ থেকে ছুটি হয়ে যায় স্কুল। বাড়িতেই পড়াশোনা ও হোমওয়ার্ক করছে তার পর থেকে।
এরই মধ্যে ইংরেজি, ম্যাথ ও সায়েন্স খাতা শেষ হয়ে গেছে। তার মা ডলফিন গলিতে খাতা কিনতে গিয়ে ফিরে আসেন। মুদি দোকান খোলা থাকলেও কোনো স্টেশনারি দোকান খোলা পাননি তিনি। এ গলিতে কোনো বইয়ের লাইব্রেরিও নেই।
অন্তিকের মা অ্যাডভোকেট আমিনা খাতুন বলেন, ‘ছেলের খাতা কিনতে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিয়েই নীলক্ষেত মার্কেট পর্যন্ত গিয়েছিলাম। সব দোকান বন্ধ পেয়েছি। এদিকে স্কুলের ছুটিও প্রলম্বিত হচ্ছে। সব মিলিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় পড়েছি।’
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সায়েন্স বিভাগের নবম শ্রেণির ছাত্র রফিকুল ইসলাম মীর্জার ব্যবহারিক (প্র্যাকটিক্যাল) খাতা শেষ হয়ে গেছে এক সপ্তাহ আগে। সাত দিনে বেইলি রোডে বেশ কয়েকবার গিয়েও কোনো স্টেশনারি ও লাইব্রেরি খোলা পায়নি সে।
তার বাবা শফিকুল ইসলাম মীর্জা বলেন, ‘সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান খোলা রাখতে বলেছে। তার মধ্যে লাইব্রেরি বা বইয়ের দোকান পড়ে না। এ কারণে সব দোকানই বন্ধ। অন্যদিকে, সরকার এখন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ঘরে বসে চালিয়ে নিতে বলেছে। এটা করতে হলে তো শিক্ষা উপকরণ লাগবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মফস্বল এলাকাগুলোতে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা। গ্রামাঞ্চলে বইয়ের লাইব্রেরি উপজেলা সদরে বা বড় বাজারগুলোতে। দূরবর্তী স্থানে দোকান হওয়ায় ও করোনার কারণে তা বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছে তারা।
রাজধানীর নীলক্ষেতের সৌরভ বুক বিতানের স্বত্বাধিকারী আনোয়ার হোসেন আনু বলেন, ‘সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ২৫ মার্চ থেকে সারাদেশের সব বইয়ের দোকান (লাইব্রেরি) বন্ধ রেখেছি। আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এখন সরকার ছুটি ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানোর কারণে পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী হবে, তা এখনও সমিতি থেকে জানানো হয়নি।’
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির (বাপুস) সূত্র জানায়, দেশে প্রায় ২৮ হাজার লাইব্রেরি রয়েছে। রাজধানীতে লাইব্রেরির সংখ্যা পাঁচ হাজারের মতো। ছোট-বড় মিলিয়ে প্রতিটি দোকানে গড়ে ছয়জন করে লোক কাজ করেন। সব মিলিয়ে এক লাখ ৬৮ হাজার মানুষ এখন হাত গুটিয়ে বসে আছে।
আরও পড়ুন : ইউআইটিএসএর অনলাইন ক্লাস শুরু ৪ এপ্রিল
একাধিক অভিভাবক ও শিক্ষার্থী জানান, লাইব্রেরিগুলো বন্ধ থাকায় তারা খাতা, কলম, পেনসিল, বোর্ড, ক্যালকুলেটর, প্র্যাকটিক্যাল খাতা, চক-শ্লেট, বিভিন্ন ধরনের গ্রামার ও সহায়ক বই, অনুশীলন বইসহ প্রয়োজনীয় বই কিনতে পারছেন না। উচ্চশিক্ষায় পাঠগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ের সম্মান শ্রেণির রেফারেন্স বুকও কিনতে পারছেন না। সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরা। তাদের বইপত্র ও শিক্ষা উপকরণ বড় লাইব্রেরি ও নির্দিষ্ট কিছু মার্কেট ছাড়া পাওয়া দুষ্কর।
এসব বিষয়ে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির (বাপুস) সহসভাপতি শ্যামল পাল মঙ্গলবার বলেন, ‘যে কোনো পরিস্থিতিতেই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটানো যাবে না। তাই স্বাস্থ্যগত সতর্কতা বজায় রেখে বইয়ের দোকান খোলা রাখার ব্যবস্থা করতে সরকারকে আহ্বান জানাই।’
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড