শিক্ষা ডেস্ক
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে এবং আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় যেহেতু এখনো কোন ঔষধ আবিষ্কার হয়নি সেহেতু ব্যক্তিগত, পারিবারিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই।
একজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী থেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন অনেক সুস্থ মানুষ এবং তাদের থেকে আক্রান্ত হচ্ছেন আরও অনেক অনেক সুস্থ মানুষ। এভাবেই অতি জ্যামিতিক হারে ভয়াবহ আকারে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস।
বাংলাদেশে জনসংখ্যা অত্যধিক বেশি থাকায় করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকানো অন্য অনেক দেশের তুলনায় খুবই কঠিন। অপরদিকে চিকিৎসা সুবিধা কম থাকায় করোনা ভাইরাসে অধিক হারে আক্রান্ত হলে সহায়ক চিকিৎসা দেওয়াও সম্ভব হবে না সবাইকে। প্রাণ হারাবার সম্ভাবনা থাকবে অগণিত মানুষের। এমতাবস্থায় অবশ্যই কার্যকর করতে হবে সমন্বিত ও কার্যকর প্রতিরোধ ব্যবস্থা।
আমরা যারা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছি সারাদেশে, আমরাও এক্ষেত্রে রাখতে পারি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। সচেতন করতে পারি আমাদের শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও পাড়া-প্রতিবেশীদের। না, এজন্য এখন কোনো জমায়েত করা যাবে না এলাকায়। মেনে চলতে হবে সরকারি নিষেধ। যাওয়া যাবে না মানুষের ঘরে ঘরে। আলোচনা বসানো যাবে না মহল্লার টি স্টলে। বরং অন্যদেরও নিষেধ করতে হবে এসব যেন কেউ না করে। কেউ যেনো ঘর থেকে এখন বাইরে না আসে।
প্রশ্ন হচ্ছে, তা হলে এখন শিক্ষকগণ কীভাবে করবেন এসব কাজ? হ্যাঁ, পারবেন। এলাকার মসজিদের ইমাম সাহেবদের সঙ্গে নিয়ে মসজিদের মাইক ব্যবহার করে শিক্ষকগণ উপদেশ দিতে পারেন এলাকার সবাইকে। এখন অনলাইন পত্রিকা সবচাইতে জনপ্রিয় সেখানেও লিখতে পারেন। ফেসবুকেও দিতে পারেন সঠিক তথ্য। যা অবশ্যই নিতে হবে সরকারিভাবে স্বীকৃতি ও নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে। বিজ্ঞান ভিত্তিক সঠিক ব্যাখ্যা দিয়ে করতে পারেন সচেতন। রোধ করতে পারেন গুজব ও অপপ্রচার। সেইসাথে প্রচার করতে পারেন সরকারি আদেশ।
মানুষকে শ্রদ্ধাশীল করতে পারেন সরকারি আদেশ নিষেধ মেনে চলার জন্য। বিশেষকরে ফেসবুকে বা কানেকানে কোন গুজব অথবা অপপ্রচার এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে এর ক্ষতি ও কুফল থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য সঠিক ও নির্ভরযোগ্য তথ্য দিয়ে তার সত্য মিথ্যা তুলে ধরতে পারেন সবার কাছে। নিশ্চয়ই দেশের প্রতিটি এলাকায় এমন অনেক উদার ধর্মপ্রাণ ও বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষক আছেন যারা প্রায় সকলেরই প্রিয় ও শ্রদ্ধাভাজন। তাঁদের কথা সবাই মান্য করে। এক্ষেত্রে অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে নিজেকে নিরাপদ রাখার ধর্মীয় ও বিজ্ঞানসম্মত কৌশল এবং অন্যকেও করতে বলতে হবে তা। অত্যন্ত সীমিত রাখতে হবে মাইকের ব্যবহার। শব্দ দূষণে মানুষ অতিষ্ঠ হলে পরে কেউ আর শুনতে চাইবে না অতি মূল্যবান কথাটিও। মানুষের ঘুমের সময়, ইবাদতের সময়, লেখাপড়ার সময় অবশ্যই বন্ধ রাখতে হবে লাউডস্পিকার। অত্যন্ত সচেতন ভাবে খেয়াল রাখতে হবে আমাদের চারপাশে কোন করোনা রোগী বা সম্ভাব্য রোগী আছে কি না। এক্ষেত্রে না দেখি, না জানি ভান করে থাকলে চলবে না। তার হয়েছে বা হতে পারে তাতে আমার কী, এরকম ভাবলে আমরা মুক্তি পাবো না কেউ।
ব্যক্তিগত, পারিবারিক, প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা ও সম্ভাব্য রোগীর কোয়ারেন্টিন। নিজের পরিবারের, প্রতিষ্ঠানের ও এলাকার কেউ করোনা রোগী হলে বা কারো করোনা রোগের লক্ষণ উপসর্গ (অস্বাভাবিক সর্দি, কাশি, জ্বর, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট) দেখা দিলে অথবা সম্প্রতি কেউ অন্য দেশ থেকে এসে থাকলে তাকে কমপক্ষে ১৪ দিন আলাদা থাকার ব্যাপারে করতে হবে উৎসাহিত, করতে হবে সহযোগিতা, চালাতে হবে চেষ্টা। প্রয়োজনে ফোন করতে হবে ৩৩৩ বা ৯৯৯ অথবা ১৬২৬৩ নম্বরে এবং নিতে হবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ও যথাযথ চিকিৎসা।
সেই সঙ্গে এও মনে রাখতে হবে যে, যিনি রোগাক্রান্ত হয়েছেন তিনি আমাদের শত্রু নয়, তার শরীরে অবস্থিত জীবাণু আমাদের শত্রু। তিনি নিজে এর জন্য দায়ী নন। তিনি পরিস্থিতির শিকার। তার কোনো অপরাধ নেই। তার সঙ্গে এমন আচরণ করা যাবে না যাতে তিনি মনে কষ্ট পান। তাকে প্রয়োজনীয় সেবা দিতে হবে নিরাপদ দূরত্বে থেকে। রাখতে হবে ও থাকতে হবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। মুক্ত রাখতে হবে সব ধরনের অপচিকিৎসা থেকে। অনুসরণ করতে হবে সরকারি নির্দেশনা।
রোগীকে বোঝাতে হবে, মহান স্রষ্টার ইচ্ছায় তিনি হয়তো কিছুদিন পরেই সুস্থ হয়ে উঠবেন এবং সবার সাথে মিশবেন। এখন কষ্ট হলেও তার নিকট জনের জীবন বাঁচানোর জন্য তাকে কিছুদিন কোয়ারেন্টিনে থাকা উচিত। কেননা, তার অনিয়ন্ত্রিত চলাফেরার কারণে তার দ্বারা আক্রান্ত এই মহামারি রোগে মারা যেতে পারে অগণিত মানুষ। যাদের অধিকাংশই হবে তার অতি নিকট জন। যা রোগীর বা আমাদের কারোরই কাম্য নয়।
আরও পড়ুন : টিভিতে পাঠদানে শিক্ষার্থীরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন
কেউ মারা গেলে তার লাশ সৎকার করার জন্য অবশ্যই নিতে হবে ধর্মীয় ও সরকারি নিয়ম মাফিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। মনে রাখতে হবে, মৃত ব্যক্তির সৎকার জীবিত ব্যক্তির ধর্মীয় ও সামাজিক দায়িত্ব। এটি জীবিতদের পরিবেশ ভালোর জন্য এবং রোগ সংক্রমণ রোধ করার জন্য যথা শীঘ্র সম্ভব করা জরুরি। এক্ষেত্রে সবাইকে থাকতে হবে ও রাখতে হবে অত্যন্ত ধর্মপ্রাণ, মানবিক ও সামাজিক।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড