শিহাব জাহিদ
যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও অবৈধভাবে নিয়োগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার সদ্য সরকারিকৃত বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ মো. আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে। নিয়োগ জালিয়াতি, আর্থিক কেলেঙ্কারিসহ নানা অভিযোগ থাকলেও ১০ বছর যাবত অধ্যক্ষ পদে বহাল রয়েছেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, অধ্যক্ষ নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় ৯ জন প্রার্থীর মধ্যে ৭ম স্থান অর্জন করেন তিনি। এরপর মৌখিক পরীক্ষায় অবৈধভাবে তাকে সর্বোচ্চ নম্বর প্রদান করা হলেও প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় অবস্থানে আসতে পারেননি তিনি।
তথ্য সূত্রে জানা যায়, অধ্যক্ষ নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জনকারীর বৈধ প্রাপ্ত নম্বর ৩৩ থেকে ৪ কমিয়ে ২৯ করা হয়। এরপর মো. আব্দুর রহিমের লিখিত পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর ১৭ এর সঙ্গে ১০ যোগ করে প্রথম স্থান দেখিয়ে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
একাধিক শিক্ষকের অভিযোগ, অবৈধভাবে এই অধ্যক্ষ নিয়োগে সার্বিক সহযোগিতা করেছেন বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজের (সাবেক বাঞ্ছারামপুর ডিগ্রি কলেজ) সাবেক পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম। এছাড়াও এ বিষয়ে কলেজ গভর্নিং বডির একাংশের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে জানা যায়।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজের এক অধ্যাপক জানান, বর্তমান অধ্যক্ষ মো. আব্দুর রহিমের নিয়োগ বৈধ নয়। নিয়োগ জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি এ কলেজে যোগদান করেছেন। শুধু তাই নয়, এর আগে ২০০৫ সালে যে প্রতিষ্ঠানে তিনি কর্মরত ছিলেন সেখানে শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডের দায়ে তাকে বরখাস্ত করা হয়। ওই সমস্ত তথ্য গোপন করে তিনি এখানে যোগ দেন।
তিনি আরও জানান, যোগদানের সময় তার অভিজ্ঞতা ও ছাড়পত্র ছিল না। ওই সময় তার বিরুদ্ধে মামলাও ছিল। সেই মামলা ২০১৬ সাল পর্যন্ত চালিয়ে উইথড্র করেন আব্দুর রহিম। কলেজ গভর্নিং বডির কতিপয় প্রভাবশালীকে হাত করে তিনি নিয়োগ লাভ করেন। ওই সময় গভর্নিং বডির সভাপতি ছিলেন ক্যাপ্টেন এ বি তাজুল ইসলাম। তবে তাকে ঘুমে রেখে এই কাজ করেন গভর্নিং বডির প্রভাবশালী কয়েকজন।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ মো. আব্দুর রহিমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ‘এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যে কথা। লম্বা সময় ধরে একটি মহল আমার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করে আসছে।’
জানা যায়, আব্দুর রহিম ২০১০ সালের ৩ আগস্ট বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। এর আগে তিনি মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার এম এ রউফ ডিগ্রি কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক ছিলেন। কর্মরত অবস্থায় ২০০৫ সালের ৬ জুন আর্থিক কেলেঙ্কারি, শ্রেণিকক্ষে তাস খেলাসহ নয়টি অভিযোগে ওই কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে। কিন্তু এ তথ্য গোপন রেখে জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করেন।
২০১০ সালের ২৫ আগস্ট পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে এম এ রউফ ডিগ্রি কলেজের বিভাগীয় তদন্ত চলমান ছিল। সে ক্ষেত্রে বাঞ্ছারামপুর ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ পদে যোগদানের কোনো সুযোগ থাকার কথা নয় বা সেটি বৈধ নয়। পরবর্তী সময়ে বাঞ্ছারামপুরের তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) মামুন সরদার অধ্যক্ষ আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে ১৪টি অভিযোগের তদন্ত করে সবগুলোর সত্যতা পান।
এছাড়া তথ্য গোপন, বিধি লঙ্ঘন ও শিক্ষার্থীদের থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের কারণে ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই তাকে শোকজ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। তবে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের হাত করে তিনি অদ্যাবধি অধ্যক্ষ পদে বহাল রয়েছেন।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, অধ্যক্ষ আব্দুর রহিমের স্ত্রী রত্না খানম ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর বাংলা বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা দেন। তবে এ পরীক্ষায় তিনি চতুর্থ হলেও ৯ মাস পর তাকেই নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর স্বামী অধ্যক্ষ আব্দুর রহিমের সহযোগিতায় তথ্য জালিয়াতি করে এমপিওভুক্তও হন।
এরপর জাতীয়করণ করা হলে ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট শিক্ষা অধিদপ্তর কুমিল্লা অঞ্চল থেকে পরিদর্শন টিম বাঞ্ছারামপুর ডিগ্রি কলেজ ভিজিট করে। সে সময় অধ্যক্ষ আব্দুর রহিম নিজের এবং স্ত্রী রত্না খানমের চাকরির নিয়োগ সংক্রান্ত প্রকৃত তথ্য গোপন করে চাকরি জাতীয়করণের লক্ষ্যে জালিয়াতি করে তৈরি করা কাগজ প্রদর্শন করেন।
অধ্যক্ষ পদে যোগদানের পর আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মেরও অভিযোগ ওঠে। কলেজের দুটি অভ্যন্তরীণ হিসাব নিরীক্ষা কমিটি তার বিরুদ্ধে ৫৬ হাজার ৯৪৫ টাকা ও ২ লাখ ৭১ হাজার ৮৬৯ টাকার আর্থিক অনিয়ম পান। পরবর্তী সময়ে ইউএনও এবং দুদকের তদন্তেও জালিয়াতির সত্যতা পাওয়া যায়। তবে প্রভাব খাটিয়ে এ বিষয়টিকেও ধামাচাপা দিয়ে দেন অধ্যক্ষ।
ওডি/জেআই
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড