• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসির দুই সেমিস্টার চালুর প্রস্তাব

  শিক্ষা ডেস্ক

১৯ জানুয়ারি ২০২০, ১৪:৩১
ইউজিসি
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ছবি : সংগৃহীত)

দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বছরে দুই সেমিস্টার চালুর প্রস্তাব করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

সদ্য প্রকাশিত ৪৫তম বার্ষিক প্রতিবেদনে ইউজিসি সরকারের কাছে এ প্রস্তাব দেয়। এই প্রস্তাবনার প্রধান লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পড়াশোনার নিবিড় সংযোগ স্থাপন।

গত ২৯ ডিসেম্বর ইউজিসির চেয়ারম্যান ও সদস্যরা রাষ্ট্রপতির কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেন। এতে মোট ২৯টি সুপারিশ করা হয়। এ বছর সুপারিশমালার শীর্ষে রয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তিন সেমিস্টারের পরিবর্তে দুই সেমিস্টার চালু করা।

কেন দুই সেমিস্টার চালু করা হচ্ছে এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ড. ফখরুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে একবার শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। পড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সারা বছর ধরে শিক্ষার্থীকে ভালোভাবে বিষয়গুলো আত্মস্থ ও রপ্ত করার সময় দেওয়া হয়। উন্নত দেশগুলোতে বছরে স্প্রিং ও ফল এ দুটি সেমিস্টার। আর আমাদের দেশে বছরে তিনটি- স্প্রিং, ফল ও উইন্টারে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। প্রতি চার মাসে একটি সেমিস্টার। একটি সেমিস্টারের পাঠ ভালোভাবে রপ্ত করার আগেই আরেকটি চলে আসে। এভাবে শিক্ষার্থীরা জব মার্কেটে গিয়ে পিছিয়ে পড়েন। আবার প্রতি সেমিস্টারে বিপুল অঙ্কের টাকা দিয়ে শিক্ষার্থীকে নতুন করে ভর্তি হতে হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ে ১৬০ থেকে ১৮০ ক্রেডিট পর্যন্ত পড়ানো হয়। বিবিএতে পড়ানো হয় ১৬৪ ক্রেডিট। প্রশ্ন হলো আসলেই এত ক্রেডিট পড়ানো সম্ভব কি না? এ দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ঠিকঠাক পালন করতে পারছে কি না, এ বিষয়টিও আলোচনায় এসেছে। এজন্যই ইউজিসি একটি স্ট্যান্ডার্ড গাইড লাইন অনুসরণ করতে দুই সেমিস্টার চালুর সুপারিশ করেছি।’

শিক্ষাবিদরা বলছেন, বছরে দুই সেমিস্টার পদ্ধতিকে ‘ডুয়েল সেমিস্টার’ ও তিন সেমিস্টার পদ্ধতিকে ‘প্রাইম সেমিস্টার’ বলা হয়। মূলত বাণিজ্যিক কারণেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ দেশে প্রাইম সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করেছে।

তারা বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কেবল বাজার ও বাণিজ্যমুখী বিষয়গুলোকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশেষ করে যে বিষয়গুলো চাকরির বাজারে গুরুত্বপূর্ণ বা চাহিদা সম্পন্ন, সেগুলোই পড়ানো হয়। অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান, অর্থনীতি এমনকি পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিতের মতো বিষয় গুরুত্বহীন। এসব কারণেও সেমিস্টার কমাতে চায় ইউজিসি। কারণ বাণিজ্য নির্ভর বিষয়গুলোর পাঠে কোনো নৈতিক ও আদর্শিক বিষয় থাকে না।

বরেণ্য শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বরাবরই সেমিস্টার পদ্ধতির বিপক্ষে। তিনি জানান, একজন শিক্ষার্থী চার বা ছয় মাসে মাত্র দুটি কোর্স পড়বে, স্বাভাবিক কারণে তারা প্রচুর অবসর সময় পাবে। এতে কেউ কেউ সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকসহ নানা অপতৎপরতায় জড়াবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই পুরো পদ্ধতিরই খোলনলচে পাল্টে ফেলা জরুরি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বছরে তিন সেমিস্টার পদ্ধতির লাগাম টানার উদ্যোগ নিয়েও ইউজিসি অনেকটা ব্যর্থ। কমিশন দুই সেমিস্টার পদ্ধতির নির্দেশনা দিয়ে ইতোমধ্যে সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই দফা চিঠি পাঠিয়েছে। আর নতুন যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পেয়েছে, সেগুলোতে শুরু থেকেই দুই সেমিস্টার পদ্ধতি চালুর নির্দেশ দিয়েছে।

তবে ইউজিসি একই সঙ্গে পূর্ণকালীন প্রোগ্রামে ন্যূনতম চারটি কোর্স সংবলিত বছরে দুই সেমিস্টার পদ্ধতি চালুর কথা বললেও একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চারটি কোর্স পড়ানোর জন্য ইউজিসির প্রস্তাবটি ভুল। ছয় মাস একটি সেমিস্টার হলে প্রতি সেমিস্টারে কমপক্ষে ছয়টি কোর্স পড়াতে হবে। নাহলে চার বছরে গ্র্যাজুয়েশন (অনার্স) শেষ হবে না। পাঁচ বছর লেগে যাবে।

একাধিক সূত্র জানায়, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যারা তাদের কোর্স-কারিকুলাম ইউজিসি থেকে অনুমোদন নিচ্ছে, তাদের সবাইকে বছরে দুই সেমিস্টারের অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে।

ইউজিসির পরিচালক ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ১৫ থেকে ১৮ বছর একই কোর্স পড়িয়ে যাচ্ছে। এটা কেমন কথা? যুগ বদলাচ্ছে। নিত্যনতুন জ্ঞানের সৃষ্টি হচ্ছে। অথচ তারা বছরের পর বছর একই বিষয় পড়িয়ে যাচ্ছে।’

আরও পড়ুন : ছাপাখানার ভুলে পাঠ্যপুস্তক থেকে একটি অধ্যায় বাদ

তিনি আরও বলেন, ‘সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় তিন বছর পর পর নতুন কোর্স-কারিকুলাম অনুমোদন না করিয়ে নিলে মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হয়। বাংলাদেশের আইনে এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা নেই।’

এছাড়াও ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনে কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেহাল চিত্র উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, বেশকিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিতভাবে বোর্ড অব ট্রাস্টিজ, সিন্ডিকেট, অর্থ কমিটি ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভা আহ্বান করা হয় না। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে চ্যান্সেলরের নিয়োগ করা উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নেই। অনেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছর নিয়ম অনুযায়ী তাদের নিরীক্ষিত বার্ষিক হিসাব ইউজিসিতে দাখিল করে না। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনেকাংশে লঙ্ঘন করা হয়, যা কাম্য নয়। বিষয়গুলো নিবিড় পর্যবেক্ষণের মধ্যে আনতে হবে।

ওডি/এমএ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড