শিমুল হাসান, নড়াইল প্রতিনিধি
নড়াইলের ২৪টি আনন্দ স্কুলের প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর ৪১৬ জন পরীক্ষার্থীর বেশিরভাগই ভুয়া! ওই ভুয়া পরীক্ষার্থীরা প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশও নিচ্ছে। গত দুই দিনে ভুয়া পরীক্ষার্থী শনাক্ত হয়েছে অন্তত ২৫ জন। যারা অবশেষে কর্তৃপক্ষের কঠোরতায় পরীক্ষা ছেড়ে কেন্দ্র থেকে পালিয়ে গেছে। সপ্তম-অষ্টম শ্রেণির অনেক শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়েছিলেন আনন্দ স্কুলে। তারাই এখন পরীক্ষা দিচ্ছে!
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভর্তির সময়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে সপ্তম-অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও ভর্তি করা হয়েছিল। আবার কর্মকর্তারা যখন বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন তখন বরাদ্দের অর্ধেক বা তার বেশি টাকা কর্মকর্তাকে দিতে হয়েছে। সঠিক পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকায় ভুয়া পরীক্ষার্থীও পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। পরীক্ষার্থীদের জন্য সরবরাহ করা প্রবেশপত্রের নামের সঙ্গে অনেক পরীক্ষার্থীর নাম-চেহারা মিলছে না।
লোহাগড়া উপজেলা শিক্ষা অফিস জানায়, লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর এসি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে চারটি আনন্দ স্কুলের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছে। স্কুলগুলো হলো- ঈশানগাতী পূর্বপাড়া আনন্দ স্কুল, রামেশ্বরপুর আনন্দ স্কুল, ঈশানগাতী আনন্দ স্কুল, বসুপটি আনন্দ স্কুল। ওই চারটি স্কুলে পরীক্ষার্থী সংখ্যা ৭০ হলেও সোমবারে (১৮ নভেম্বর) বাংলা বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে মাত্র ২৬ জন। দিঘলিয়া ইউনিয়নের কে.ডি.আর.কে মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে তিনটি আনন্দ স্কুল। সেগুলো- হলো মাটিয়াডাঙ্গা আনন্দ স্কুল, চরকোটাকোল আনন্দ স্কুল, করগাতি আনন্দ স্কুল। ওই তিন স্কুলের পরীক্ষার্থী সংখ্যা ৪৫ হলেও সোমবারে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ৩৩ জন।
অভিযোগ রয়েছে, আনন্দ স্কুলের লোহাগড়ার কো-অর্ডিনেটর ভুয়া শিক্ষার্থী দিয়ে স্কুল চালাতে ওই স্কুলের শিক্ষকদের সহযোগিতা করেছেন। উপবৃত্তির টাকাসহ যে কোনো খাতের টাকা আসলে ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর নিতেন বড় অংশ। কে.ডি.আর.কে মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের হল সুপার মো. হান্নান বিশ্বাস বলেন, ভুয়া পরীক্ষার্থী হওয়ায় সোমবার ৫ জন পরীক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
কাশিপুর ইউনিয়নের এসি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন জানান, গত রবিবার পরীক্ষা দিতে আসা ১৫ জনের বেশি ভুয়া পরীক্ষার্থীকে ধরলে তারা পালিয়ে যায়। ঈশানগাতী পূর্বপাড়া আনন্দ স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আরজান আলী বলেন, এসব শিক্ষার্থী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ে তা আমি জানতাম না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আনন্দ স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থীর উপবৃত্তির টাকাসহ উন্নয়নের কোনো টাকা আসলে ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর স্যার বেশিরভাগ টাকা নিয়ে নেন। আগের শাহজালাল স্যার যে পরিমাণ টাকা নিতেন বর্তমান স্যার তার চেয়ে বেশি নেন।
আনন্দ স্কুলের লোহাগড়ার ট্রেনিং কো-অর্ডিনেটর মো. সোহেল টাকা ভাগাভাগি করে নেবার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ভুয়া পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. সাইফুজ্জামান খান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করব।
ওডি/আরএআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড