শিক্ষা ডেস্ক
নিম্নমানের ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম, নিয়মিত ক্লাস না হওয়াসহ নানা সমস্যার কারণে মাল্টিমিডিয়া শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গাইবান্ধার মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীরা। ফলে অন্যান্য জেলার শিক্ষার্থীদের থেকে পিছিয়ে পড়ছে তারা।
জানা যায়, সরকারিভাবে গাইবান্ধার সাতটি উপজেলার ৪৩০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদরাসায় মাল্টিমিডিয়া সরঞ্জাম দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৪৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজেদের উদ্যোগ ও অর্থায়নে ডিজিটাল সরঞ্জাম কিনে শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করেছে।
এর মধ্যে সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় সরকারি উদ্যোগে ৮৮টি এবং নিজ উদ্যোগে আটটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া শিক্ষাব্যবস্থা চালু রয়েছে। গোবিন্দগঞ্জে ১০০টি, গাইবান্ধা সদরে ৭২টি, সাদুল্যাপুরে ৮২টি ও সাঘাটায় ৫৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।
এ ছাড়া সরকারি উদ্যোগে পলাশবাড়ীতে ৪৯টি এবং ফুলছড়িতে ১৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষে বিশেষ পদ্ধতিতে শিক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে জেলার বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম পর্যবেক্ষণ করে বিভিন্ন সমস্যা ও সংকটের বিষয়টি উঠে আসে। প্রথমত, ডিজিটাল এই শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন করতে প্রতিটি বিদ্যালয়ে ইন্টারনেট সংযোগ একান্ত জরুরি হলেও জেলার মাত্র ৫০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। ল্যাপটপ, প্রজেক্টর উন্নতমানের না হওয়ায় ঘন ঘন তা নষ্ট হচ্ছে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুই-তিন মাস পর পর ল্যাপটপের উইন্ডোজ নষ্ট হয়। ডিজিটাল মাল্টিমিডিয়াও দ্রুত অকেজো হয়ে পড়ে, যা মেরামত করতে হয় প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অর্থায়নে।
মাল্টিমিডিয়া ও ল্যাপটপ সরকারিভাবে মেরামতের ব্যবস্থা রয়েছে শুধু রংপুর বিভাগের জন্য রংপুর টিচার ট্রেনিং কলেজের কম্পিউটার সেলে। রংপুর গিয়ে মেরামত করে নিয়ে আসা সময়সাপেক্ষ। এতে ক্লাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্লাস রুটিনে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নির্ধারিত থাকলেও নিয়মিত ক্লাস হয় না।
এ ছাড়া দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অনীহার কারণে বিষয়ভিত্তিক নতুন নতুন আকর্ষণীয় ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি না করে দায়সারাভাবে একই কনটেন্ট দিয়েই ক্লাস সারা হয়, যা শিক্ষার্থীদের আকর্ষণ সৃষ্টি করতে পারছে না। এতে ব্যাহত হচ্ছে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতির শিক্ষাব্যবস্থা। তা ছাড়া বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে, বিশেষ করে মাদরাসাগুলোতে মাল্টিমিডিয়ার ক্লাসরুমগুলো পাঠদানের উপযোগী নয়।
এ ব্যাপারে গাইবান্ধা ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এহসানুল কবীর বলেন, ‘প্রথম অবস্থায় যে সরঞ্জামগুলো দেওয়া হয়েছিল তা কয়েক মাসের মধ্যেই অকেজো হয়ে পড়েছে। পরে স্কুল কর্তৃপক্ষ নিজেদের টাকায় নতুন করে কিছু সরঞ্জাম কিনে ক্লাস শুরু করে। তবে আর্থিক সংকটের কারণে সব ক্লাসের জন্য আলাদা আলাদা মাল্টিমিডিয়া সামগ্রী কেনা সম্ভব হচ্ছে না। তাই পুরো সপ্তাহ ভাগ করে ক্লাস অনুযায়ী দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।’
সহকারী শিক্ষক ও মাস্টার ট্রেইনার শের আলী বলেন, ‘ক্লাসের সংখ্যা বাড়াতে হলে মানসম্মত সরঞ্জাম প্রয়োজন। কিন্তু তা নেই। তা ছাড়া এ বিষয়ে দক্ষ শিক্ষকদেরও অভাব রয়েছে। ফলে প্রয়োজনের তুলনায় কম ক্লাস নেওয়া হচ্ছে।’
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এনায়েত হোসেন জানান, গাইবান্ধায় ৪৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ল্যাপটপ দোয়েল, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, স্ক্রিন ও মডেম দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঁচজন শিক্ষককে মাল্টিমিডিয়া পদ্ধতিতে ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরি করে বিশেষ শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদানের জন্য প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।
ওডি/জেআই
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড