• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কঠিন শর্তে গবেষণায় বিমুখ জবি শিক্ষার্থীরা

  জয়নুল হক, জবি প্রতিনিধি

২৩ অক্টোবর ২০১৯, ১৫:২৩
জবি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (ছবি : দৈনিক অধিকার)

বিশ্ববিদ্যালয় হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের গবেষণার কাজ করা হয়। গবেষণার ওপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের মানদণ্ড নির্ভর করে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজই হলো নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করা। কিন্তু এ গুরুত্বপূর্ণ কাজ থেকে অনেকটাই পিছিয়ে আছে রাজধানীর অন্যতম বিদ্যাপীঠ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)।

এক দিকে মান নিশ্চিতে ভর্তিতে কঠিন শর্ত অন্য দিকে গবেষণাকর্মে সুপারভাইজারের অভাব। যার ফলে প্রতিবছর গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দ থাকলেও কোনো উচ্চতর নতুন গবেষণা ও গবেষক তৈরি হচ্ছে না। এমনকি নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের গবেষক তৈরিতে উৎসাহিত করতেও পারছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বরং এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ধীরে ধীরে গবেষণা কাজে অনীহা প্রকাশ করছে।

বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর গবেষণায় শিক্ষার্থীদের সংখ্যা অনেকাংশেই হ্রাস পেয়েছে। এক দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ ও ইনস্টিটিউটে এমফিল ও পিএইচডি ভর্তিতে কঠিন শর্ত আরোপ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অন্য দিকে গবেষণার উচ্চমান নিশ্চিত করতে কঠিন শর্তের কোনো বিকল্প দেখছেন না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতেই সঙ্কুচিত হচ্ছে উচ্চতর গবেষণার পথ। অন্য দিকে গবেষণায় আগ্রহী পিএইচডি শিক্ষার্থীরা গবেষণাকর্ম সুপারভাইজ করার জন্য অধ্যাপক পাচ্ছে না। আবার পিএইচডি গবেষণায় আবেদন করার জন্য অতিরিক্ত শর্তারোপের ফলে গবেষণায় আগ্রহ হারাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

গবেষণাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অর্জন বলা হলেও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষকের সংখ্যা খুবই নগণ্য। পিএইচডি শিক্ষার্থীকে গবেষণার জন্য আবেদন করতে হলে তিন বছরের শিক্ষকতা, শিক্ষাজীবনে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ নাম্বার থাকতে হবে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গবেষকের জন্য ডেস্ক, ক্লাস নেওয়ার সুযোগ এবং সম্মানীর ব্যবস্থা না থাকাও অনীহার অন্যতম কারণ। আবার শিক্ষকের সুপারভাইজের অভাবের ফলেও জবিতে গবেষণা করতে আগ্রহ হারাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে গবেষণায় নেমে এসেছে ভাটা। তবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেছেন, গবেষণার উচ্চমান ধরে রাখতে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামের স্বার্থেই শর্তারোপ করা হয়েছে। এখন আমরা সে মানের শিক্ষার্থী পাচ্ছি না।

গেল বছরের ২০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর থেকে প্রকাশিত ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বার্তা’য়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে পিএইচডি প্রোগ্রাম চালু হয়। ওই শিক্ষাবর্ষে ১০ জন গবেষক পিএইচডি প্রোগ্রামে যোগ দেন। এরপর ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে ৯ জন, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ৯ জন, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ১৪ জন, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ৫ জন ও ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ১২ জন গবেষক যোগ দেন। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে গবেষণা খাতে বরাদ্দ ছিল ৬০ লাখ টাকা ও ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে বরাদ্দ ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মোট বাজেটের মাত্র ১ দশমিক ৩ শতাংশ। যা গেল অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ৪০ লাখ টাকা বাড়িয়ে ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সঙ্কটের মধ্যেও ২০১৩ সালে প্রথম ও উচ্চতর গবেষণা করতে সক্ষম হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। সারা পৃথিবীতে প্রথম বন্য মুরগির ক্যাপটিভ ব্রিডিংয়ে সফল গবেষণা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের একদল গবেষক।

গবেষক দলের সমন্বয়ক প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, গবেষণার জন্য রাঙ্গামাটির বরকল থেকে Gallus gallus murghi প্রজাতির বনমোরগ আনা হয়। দীর্ঘ তিন বছরের এ গবেষণায় এর জিনগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনে সফলতা পেয়েছিলেন তারা। তিনি জানান, বিশ্বে আমরাই প্রথম বনমোরগের ক্যাপটিভ ব্রিডিংয়ে সফলতা অর্জন করেছি। আর এ সফলতা আমাদের এক অনন্য অর্জন। মোরগের জিনগত পরিবর্তন করে বাণিজ্যিকভাবে যেন উৎপাদন করা যায় সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন ভালো মানের গবেষক পাচ্ছে না এবং গবেষণার নাজুক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দীন বলেন, একজন গবেষককে যেভাবে সুযোগ-সুবিধা দেওয়া দরকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে তার যথাযথ ব্যবস্থা নেই। গবেষকদের সুপারভাইজ করার মতো সেই মানের শিক্ষকেরও সঙ্কট আছে এখানে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের তেমন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয় না। তাই শিক্ষার্থীরা এখানে গবেষণায় আগ্রহ প্রকাশ করে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অধ্যাপক বলেন, ‘গবেষণা হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সর্বোচ্চ সফলতা ও অ্যাকাডেমিক উন্নয়নের জন্য মানদণ্ড স্বরূপ। কিন্তু আমরা একজন গবেষককে কোনো সুবিধাই দিতে পারছি না। কারণ পিএইচডি গবেষণা হলো এক ধরনের চাকরি, যেখানে গবেষকের নিজস্ব ডেস্ক থাকবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানী পাবেন। আবার তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসও নেবেন। কিন্তু আমরা এ ধরনের কোনো সুবিধা দিতে পারছি না। ফলে আমাদের এখানে গবেষকের সংখ্যা কমছে এবং গবেষণায় ভাটা পড়েছে।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘শিক্ষা ও গবেষণার মান বৃদ্ধি করাকেই আমি প্রথমে লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করেছিলাম। যা ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। নতুন যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে এর কোনো কোনোটায় উপাচার্য ছাড়া আর কোনো অধ্যাপক নেই। আবার কোনো কোনোটিতে দুই/তিনজন অধ্যাপক আছেন। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এই মুহূর্তে ১০০ জন অধ্যাপক রয়েছেন। যাদের মধ্যে ৯৮ জনের পিএইচডি ডিগ্রি আছে। বর্তমানে ১৫০ জন শিক্ষক আছেন যারা বিদেশে উচ্চ-শিক্ষারত। এই শিক্ষকরা যখন ফিরে আসবেন তখন এই বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি জ্ঞানভিত্তিক গবেষণা কেন্দ্রে পরিণত হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার ভালো লাগাটা এখানেই যে, আমি দেশের মেধাবী শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের এখানে আকর্ষণ করতে পেরেছি। মানুষ একসময় মনে করত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় মানে তো জগন্নাথ কলেজই। গত ছয় বছরের চেষ্টায় সেই ধারণাটা ভাঙতে সক্ষম হয়েছি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে দেশের শিক্ষাঙ্গনে ‘‘নতুন ব্র্যান্ড’’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এছাড়া শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট চালু করা হয়েছে।’

ওডি/আরএআর/এমএ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড