ক্যাম্পাস ডেস্ক
বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর গণমাধ্যমে উঠে আসতে থাকে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে ওঠা টর্চার সেলের ভয়ঙ্কর তথ্য। এবার এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও (বশেমুরবিপ্রবি)।
অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের নির্দেশেই শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করতে শিবির অপবাদে চালানো হতো অমানুষিক নির্যাতন। নির্যাতনকারীর তালিকায় উঠে এসেছে সাবেক উপাচার্য নাসিরের ঘনিষ্ঠ চার শিক্ষার্থী- আরিফুল ইসলাম সাকিব, শেখ রাফিজ, নুরুদ্দীন নাহিদ এবং রাফিন রাসাসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর নাম।
অভিযোগের সত্যতা খুঁজতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ পর্যন্ত ১৭ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন সময়ে উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ এসব শিক্ষার্থীদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন। শিবির অপবাদে এই নির্যাতনের তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের শিক্ষার্থী সালমান রহমান।
সিএসই বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের দুর্নীতির প্রতিবাদ করায় ১ সেপ্টেম্বর রাত ১০টায় ম্যানেজমেন্ট চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শেখ রাফিজ এবং নুরুদ্দীন নাহিদের নেতৃত্বে হল থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় সালমান রহমানকে। পরবর্তীতে শিবির অপবাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় তিন ঘণ্টার নির্যাতন শেষে তাকে তুলে দেয়া হয় পুলিশের হাতে। আর এই সমগ্র ঘটনাটিতে সহায়তাকারীর ভূমিকা পালন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সালমানের প্রতি নির্যাতন শেষে রাত ২টায় সালমানসহ আইন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফাতেমা-তুজ-জিনিয়া ও বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে শিবির কর্মী উল্লেখ করে ফেসবুকে পোস্ট দেয় আরিফুল ইসলাম সাকিব।
পোস্টে উল্লেখিত বাকি দুজনেরও অপরাধ ছিলো উপাচার্যের দুর্নীতির প্রতিবাদ করা। পরবর্তীতে আরিফুল ইসলাম সাকিবের নেতৃত্বে, নুরুদ্দীন নাহিদ, রাফিন রাসাসহ বেশ কয়েকজন ফাতেমা তুজ জিনিয়ার মেসে হামলা চালানোর চেষ্টা করে। যেখানে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও কিছু ব্যক্তি সহায়তা করে। কিন্তু স্থানীয়দের কারণে তাদের এই হামলা চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমের (এআইএস) শিক্ষার্থী রাকিবুল রণি জানান, ২০১৮ সালে শিবির অপবাদে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনিও। খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ায় শিবির অপবাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় দিবস হলের একটি কক্ষে তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। এক্ষেত্রে তিনি নির্যাতনকারী হিসেবে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের ফয়সাল সাজিদ এবং শেখ লিখনের নাম উল্লেখ করেন। রণি জানান তাকে স্ট্যাম্প, ক্রিকেট ব্যাট এবং হাতুড়ি দিয়ে প্রায় ২ ঘণ্টা নির্যাতন করা হয়। নির্যাতন শেষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় রণিকে শিবির কর্মী অপবাদে তুলে দেয়া হয় পুলিশের হাতে।
এ বিষয়ে অভিযুক্তদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ফয়সাল সাজিদ জানান, রণিকে রুমে ডাকা হয়েছিলো এটা ঠিক তবে তিনি পুরোটা সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন না এবং নির্যাতনও করেন নি। আর শেখ লিখন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
শুধু সালমান কিংবা রণিতে শেষ নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও ১৫ জন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা বিভিন্ন সময় আরিফ, রাফিজ, নাহিদ, রাসাদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কেউ কোনো বিষয়ে প্রতিবাদ করলেই তাকে শিবির সন্দেহে নির্যাতন এবং পুলিশে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হতো। এমনকি গত ১৯ সেপ্টেম্বর স্বৈরাচারী আচরণসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হলে আন্দোলনকারীদের শিবির কর্মী প্রমাণের চেষ্টা করে উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিরা।
সাবেক উপাচার্যপন্থি শিক্ষকদের একটি গ্রুপ কনভারসেশনের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যেখানে আন্দোলনকে নিয়ে ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়া ২১ সেপ্টেম্বর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর যে হামলার ঘটনা ঘটে সেখানেও হামলাকারী হিসেবে উঠে এসেছে উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ এ সকল শিক্ষার্থীদের নাম।
এ সকল বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর আশিকুজ্জামান ভুঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রশাসনের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করেন এবং বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সন্তান তুল্য, তাদের নির্যাতনের কথা তো আমরা চিন্তাও করতে পারিনা।’
ওডি/এমএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড