শাবিপ্রবি প্রতিনিধি
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের (পিএসএস) এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। এ সময় তার রুম থেকে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে বলে জানা যায়। তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদ।
নিহত শিক্ষার্থীর নাম বকুল দাস। সে পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের ২য় বর্ষ ২য় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। বকুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহপরান হলের বি ব্লকের ১২০ নম্বর রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন। গত ১ বছর ধরে হলের এ কক্ষে সে থাকে বলে জানা যায়। এর আগে সে মেসে থাকত। বকুলের গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার লাখাই উপজেলায় এবং তার পিতার নাম রামু দাস বলে তার বন্ধুরা জানান।
প্রক্টর অধ্যাপক জহীর উদ্দিন জানান, ‘বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) আনুমানিক সকাল ৭টার দিকে সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করে। কর্তব্যরত ডাক্তাররা প্রথমে তাকে ফুড পয়জনিং মনে করে চিকিৎসা দিতে থাকে। পরে তার লালা থেকে বিষ পাওয়া গেলে বকুল স্বীকার করে যে সে বিষ খেয়েছে।’
এ দিকে মৃত্যুর আগে ‘র্যাট কিলার’ নামে এক ধরনের বিষ ট্যাবলেট খেয়েছিল বলে স্বীকার করে বলে জানিয়েছেন তাকে হাসপাতালে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তৌফিকুর রহমান চৌধুরী টুটুল।
তৌফিক জানান, ‘বুধবার দিবাগত রাত ২টার দিকে নিজ কক্ষে বমি করতে থাকলে রুমমেটরা তাকে সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে। সকাল ৭টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।’
কী কারণে বা কেন হঠাৎ এই আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় বকুল তা এখনো জানা যায়নি। তবে দীর্ঘদিন ধরে মানসিক বিষণ্ণতায় ভুগছিল বলে তার বন্ধুরা জানান।
ঘটনা তুলে বকুল দাসের রুমমেট নাবিল বলেন, ‘আমরা প্রতিদিনের মতো গল্প-গুজব খাওয়া দাওয়া করে ঘুমাচ্ছিলাম হঠাৎ করে সে বমি করতে থাকে তখন আমরা তাকে দ্রুত মেডিকেলে নিয়ে আসি। সে বেশ কিছুদিন ধরে আমাদের বলে আসছিল আমি (বকুল দাস) আপনাদের মাঝে আর বেশি দিন থাকব না। কিন্তু সে আমাদের কিছু শেয়ার করেনি। তবে আমরা এ বিষয়ে ভাবতে পারিনি সে মারা যাবে।’
শাহপরান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান খান বলেন, ‘আমরা বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি। তার ফুড পয়জনিং সমস্যা হয়েছে মনে করে হাসপাতালে রাতেই নেওয়া হয়। পরে জানা যায় সে বিষ খেয়েছে। সকালে চিকিৎসারত অবস্থায় সে মারা গেছে।’
বকুলের রুম থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় সহকারী হল প্রভোস্ট মেহেদী হাসান নাহিদ ও মাসুম তালুকদারসহ পুলিশের ওসি (তদন্ত) শাহ আলম তল্লাশি করে এ নোট উদ্ধার করেন বলে জানান তিনি।
সহকারী হল প্রভোস্ট মেহেদী হাসান নাহিদ এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা হলে তল্লাশি করে তার টেবিল থেকে একটি সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছি। এছাড়া তার রুম থেকে কিছু টাকা, সুইসাইড নোটের সাথে হাতের লেখা মেলানোর জন্য একটি খাতা ও কিছু ঔষধ উদ্ধার করেছি। তবে সেখানে কোনো বিষ বা বিষ জাতীয় কিছু পায়নি। তবে আলামতগুলো তদন্তের জন্য পুলিশ নিয়ে গেছে বলে জানান তিনি।’
এ দিকে পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. হাসান জাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় ও তার অকাল মৃত্যুতে আমরা মর্মাহত। আমরা ভাবিওনি এমন ঘটনা ঘটে যাবে। তার আত্মার শান্তি ও মঙ্গল কামনা করি।’ এদিকে পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে শোকের ছায়া বিরাজ করছে।’
সার্বিক বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক জহির উদ্দিন আহমেদ বলেন ‘গতকাল রাতে আমাকে শাহপরান হল থেকে একজন ফোন দিয়ে বললো তার রুমমেটের ফুড পয়জনিং হয়েছে। তখন তার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে ফোন দিয়ে দ্রুত মেডিকেলে নিয়ে যেতে বলি। এখানে আসার পর ডাক্তাররা তার লালা থেকে পরীক্ষা করে র্যাট কিলার নামে এক ধরনের বিষ শনাক্ত করতে পেরেছেন। ততক্ষণ যা শেষ হওয়ার তা হয়ে গেছে। এ দিকে ময়না তদন্ত শেষে সব তথ্য জানা যাবে বলেও জানান তিনি।’
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি জানান, ‘সে রাত ১২টার আগে রাতের খাবারের সঙ্গে বিষ খেয়েছে। কিন্তু তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে রাত ২টার দিকে। এর প্রেক্ষিতে ২ ঘণ্টার ব্যবধানে তার শরীরের অনেক অংশ নষ্ট হতে শুরু করে। এছাড়া আসার পরপরই বিষ খাওয়ার বিষয় স্বীকার করেনি। প্রথমে তাকে ফুড পয়জনিং হয়েছে মনে করে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরে তার লালা পরীক্ষা করে থেকে বিষের নমুনা পাওয়া যায়। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে।’
এ বিষয়ে জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অকিল উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি নিয়ে কাজ করছি। এ নিয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। আর মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে, তদন্ত শেষে বিষয়টি বিস্তারিত জানা যাবে।’
পোস্ট মর্টেম শেষে বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় বকুলের লাশ তার গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জে নিয়ে যায় বকুলের পরিবার।
উল্লেখ্য, বিগত কয়েকমাসে শাবিতে ৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। তার মধ্যে বকুল চিরতরে সকলকে ছেড়ে চলে গেল।
ওডি/এমএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড