মো. তামজীদুল হক ফাহিম
২৩ জানুয়ারি ২০১৬। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম দিন। সেই থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, অনার্স (সম্মান) জীবনের শেষ দিন। হাঁটি হাঁটি পা পা করে পেরিয়ে এসেছি দীর্ঘ ১৩৪৫ দিন। অথচ মনে হচ্ছে এইতো সেদিন ভর্তি হলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ক্যাম্পাসে প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরই দেখলাম বিভাগের বড় ভাই বোনদের গায়ে রঙ মেখে আনন্দ-উল্লাস, হৈ-হুল্লোড় করতে। সাথে বাদ্যযন্ত্র বাজছিল, আর একজন আরেক জনের সাদা টি শার্টে মার্কার দিয়ে কিছু লিখে দিচ্ছিল। কেউ লিখছিল আবেগের কথা, কেউবা দুষ্টুমির ছলে কোনো কথা, কেউবা বন্ধুর জীবনে ভালো কিছু কামনা করে কিছু কথা। বাইরে থেকে তাদের দেখে হাস্যোজ্জ্বল মনে হলেও সে হাসি, নাচ, গানের আড়ালে ভেতরের তীব্র ব্যথাটা সেদিন বুঝতে পারিনি।
এবার আমাদের পালা। আমরাও আবির মেখেছি, অনেক হৈ চৈ, আনন্দ ফুর্তি করেছি। র্যালির আগে আগে ব্যান্ড পার্টির বাজনা। কত হাসি কত আনন্দ কত উল্লাস। এমন করে আর হয়তো সবাই মিলে হাসা হবে না। ইয়ার্কি আড্ডা গানে আর হয়তো হারিয়ে যাওয়া হবে না চিন্তামুক্ত ভুবনে।
সহপাঠীদের সঙ্গে (ছবি : দৈনিক অধিকার)
মনে হচ্ছে এইতো সেদিন ভর্তি হলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। অপরিচিত ক্যাম্পাস, অপরিচিত সহপাঠী, অপরিচিত শিক্ষক, এ যেন এক নতুন জগত। ধীরে ধীরে পরিচিত হলাম প্রত্যেক সহপাঠীর সাথে। প্রথম দিকে অনেক বন্ধুদের নিয়ে বড় একটা গ্রুপ ছিল। প্রায় ষোল জন ছিলাম আমরা গ্রুপে। ধীরে ধীরে সংখ্যাটা কমে এল। শেষ পর্যন্ত আমরা পাঁচজন টিকে থাকলাম। বাকিরাও নিজেদের মতো গ্রুপ করে নিল। এটাও যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সব বিষয়গুলোর মতো চির সত্য।
আমরা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রায় শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। প্রতিটি ইট, কাঠ, পাথর, গাছপালার সাথে জড়িয়ে আছে অনেক অনেক স্মৃতি। এতগুলো দিন, এতগুলো ঘণ্টা, এতগুলো মুহূর্ত যেন চোখের পলকেই শেষ হয়ে গেল। কত হাসি, কত আনন্দ, কত মজার ঘটনা, কত সুখ দুঃখের স্মৃতি, কত আড্ডা, গান এ সব এখন শুধুই স্মৃতি।
বলা হয়ে থাকে আনন্দের সময় নাকি তাড়াতাড়ি যায়। কথাটা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের ক্ষেত্রে পুরোপুরি সত্য। আর কখনোই ফিরে পাব না জীবনের এই স্মৃতিময় মুহূর্তগুলো। আর কখনোই হয়তো চিরযৌবনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ডায়না চত্বরে বসে আড্ডা দেওয়া হবে না। টিএসসিসির সিঁড়িতে বসে আর হয়তো গলা ছেড়ে হেড়ে গলায় গান গাওয়া হবে না। সবাই মিলে মফিজ লেকের হাতিরঝিলের মতো ব্রিজটায় আর যাওয়া হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে প্রতিদিন আটচল্লিশ কিলোমিটার ভ্রমণে প্রকৃতি দেখতে দেখতে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাওয়া আর হবে না। ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট, টিউটোরিয়ালের প্যারা আর থাকবে না। সকাল সাতটায় ঘুম থেকে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ধরার টেনশন থাকবে না। ভাবতেই বুকের ভেতরটা হাত থেকে পড়ে যাওয়া শখের ফুলদানির মতো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে। নদীর জোয়ারে মতো বাঁধভেঙে কান্না আসলেও মুখে রাখতে হচ্ছে মেকি হাসি।
র্যাগ ডে উদযাপন (ছবি : সংগৃহীত)
অনেকে বলেন, স্কুল লাইফটাই নাকি জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর কাটানোর পর এ কথা আমার কাছে ভুল প্রমাণিত হয়েছে। আমার মতে, জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় অতিবাহিত করা জীবন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি জায়গা থেকে শেখার আছে অনেক কিছু। এ জীবনের পরতে পরতে অভিজ্ঞতার হাতছানি। অভিজ্ঞতাহীন বিশ্ববিদ্যালয় জীবন যেন লবণবিহীন তরকারির মতো। সাংবাদিকতা, সাহিত্য সংগঠন, বিএনসিসি ইত্যাদির সাথে যুক্ত থেকে আমি চেষ্টা করেছি কিছু অভিজ্ঞতা অর্জনের। আমার কাছে জ্ঞানের চেয়ে অভিজ্ঞতার মূল্য বেশি। আমার কাছে বিশ্ববিদ্যালয় মানে শিক্ষার পূর্ণাঙ্গতা। আমার কাছে বিশ্ববিদ্যালয় মানে জীবনের পূর্ণাঙ্গতা।
আজ মনের গহীনের কত অব্যক্ত কথাই না বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। না থাক, কিছু কথা না হয় অব্যক্তই থাক। ভালো থেক প্রিয়তমা চিরযৌবনা ইবি। তোমার ভেতর আগলে রাখা সবাইকে ভালো রেখ। বিদায়।
ওডি/আরএআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড