• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

শাবিপ্রবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে ৫৩ অভিযোগের শ্বেতপত্র

  শাবিপ্রবি প্রতিনিধি

২২ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ২১:৪৩
শাবিপ্রবি
শাবি উপাচার্যের বিরুদ্ধে বেনামি শ্বেতপত্র (ছবি : সম্পাদিত)

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের ২ বছর অতিবাহিত হবার পর তার বিরুদ্ধে বেনামি একটি শ্বেতপত্র পুস্তিকা প্রকাশিত হয়েছে। এতে আর্থিক অনিয়ম, ক্ষমতার অপব্যবহার, শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতিতে অনিয়ম, স্বৈরাচারী আচরণ, রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়সহ ৫৩টি অভিযোগ তুলে ধরা হয়েছে।

এ দিকে শ্বেতপত্রটির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য একটি মহল ষড়যন্ত্র করছে বলে দাবি জানিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যেও সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপাচার্য এ দাবি জানান।

এ সময় উপাচার্য বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টায় একটি কুচক্রী মহল কাজ করছে। নৈতিকভাবে দুর্বল ও পদ লিপ্সু অসাধু কিছু ব্যক্তি এমন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’, আনিত এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।’

‘শাবিপ্রবির বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের বিভিন্ন অপকর্মের শ্বেতপত্র’ শীর্ষক ২৪ পৃষ্ঠার এ শ্বেতপত্রে কোনো নাম ঠিকানা উল্লেখ করা নেই। তবে এতে প্রচারক হিসেবে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার শাবিপ্রবির শিক্ষক-কর্মকর্তাবৃন্দ’ দাবি করা হয়।

সিন্ডিকেট ও অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সভায় নিজ সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া, সভা পরবর্তী সময়ে প্রয়োজনমতো সিদ্ধান্ত সংযোজন ও বিয়োজন করার অভিযোগ আনা হয়েছে। সিন্ডিকেট সদস্যরা এমন অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বলে উল্লেখ করা হয় শ্বেতপত্রে।

এ বিষয়ে সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক ড মোহাম্মদ মস্তাবুর রহমান বলেন, ‘সিন্ডিকেটে চেয়ার হিসেবে উপাচার্য থাকেন। তবে সিন্ডিকেটে যা পাস হয় তা সর্বসম্মতিক্রমে আলোচনা সাপেক্ষে পাস হয়। আর যদি কারও কোনো বিষয়ে দ্বিমত থাকে তাহলে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিতে পারে। সকল সিন্ডিকেট সদস্যই যথেষ্ট ম্যাচিউরড, এখানে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই।’

এ দিকে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, নিয়োগে শাবি শিক্ষার্থী বিদ্বেষ, শিক্ষক নিয়োগ ও আপগ্রেডেশনে পক্ষপাতিত্ব, অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাতালিকায় না থাকা কুমিল্লা অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের আঞ্চলিক প্রীতির কারণে অনৈতিকভাবে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ এসেছে। এ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘আমি শাবি বিদ্বেষী নয়। আমি আসার পর ৭৮ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে যার মধ্যে ৪৭ জনকেই শাবি থেকে নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া বেশ কিছু বিভাগ নতুন হওয়ায় সেখানে বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভাগীয় প্রধান, ডিন, অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়ে নির্ধারিত বোর্ড থাকে। সেখানে তাদের সিদ্ধান্তের আলোকে নিয়োগ হয়ে থাকে। এখানে অনিয়মের কোনো প্রশ্নই ওঠে না।’

এ দিকে নন-মেজর কোর্স চালু নিয়ে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নন-মেজর কোর্স চালু করার জন্য কোর্সটি বিভাগের আওতায় নিয়ে আসতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের পক্ষ থেকে ১৫ হাজার ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৫ হাজার টাকাসহ মোট ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে অনিয়মের কী অভিযোগ নিয়ে আসা হলো বুঝি না।’

সীমানা প্রাচীর নির্মাণে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে শ্বেতপত্রে। এ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তার কথা ভেবে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হচ্ছে। এর জন্য ৫ কোটি ১১ লক্ষ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। তবে বডার গার্ড বাংলাদেশ সিলেটের সীমানা থাকায় এক কিলোমিটার পথ কম হওয়ায় সম্ভাব্য খরচ ধরা হয়েছে ৪ কোটি ১০ টাকা।’ এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অডিট আপত্তি নেই বলেও উল্লেখ করেন উপাচার্য।’

স্বাস্থ্য বীমার কথা বলে ব্যাপক অর্থ হাতিয়ে নেওয়া অভিযোগও উঠেছে। এ নিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘ওপেন টেন্ডারের মাধ্যমে প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্সের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এটা আসলে ২ বছরের জন্য হলেও আমরা চাইলে তাদের সঙ্গে বা সুবিধার আলোকে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতে পারব। এতে করে সবাই উপকৃত হবে।’

শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ, ছাত্রলীগের একটি পক্ষকে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়া, উপাচার্যের বিমানযোগে যাতায়াত, জোবাইক সেবা ও স্বাস্থ্য বীমা চালুর নামে আর্থিক অনিয়ম, আইসিভিসি সম্মেলন করে ৪০ লক্ষ টাকার অপচয়ের অভিযোগও আনা হয়েছে, যা হাস্যকর বলে মনে করেন উপাচার্য।

এছাড়া তিন বছর আগে পাশ হওয়া দুইশ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অক্ষমতা, রেজিস্ট্রারকে সিন্ডিকেট সভায় দাঁড় করিয়ে অপমান করা, নিয়োগ বোর্ডে পিএইচডি ডিগ্রিধারীদের তাচ্ছিল্য, বিএনপি-জামায়াত তোষণ, জিইবি বিভাগের শিক্ষার্থী প্রতীকের আত্মহত্যায় প্ররোচনা দানকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ এসেছে।

শ্বেতপত্রটির শেষে বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর উপাচার্য নিয়োগ না দিয়ে অভ্যন্তরীণ শিক্ষকদের মধ্য থেকে উপাচার্য নিয়োগ দেয়ার দাবি জানানো হয়। শ্বেতপত্রের শেষের দিকে লেখা আছে, ‘আমাদের দাবি অভ্যন্তরীণ ভিসি, নট টু বিজনেসম্যান, উই ওয়ান্ট অ্যাকাডেমিক ভিসি।’ শ্বেতপত্রের শেষের দিকে অনিয়ম, অভিযোগ নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশের দ্বিতীয় কিস্তি প্রক্রিয়াধীন বলে হুঁশিয়ারি প্রদান করা হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘প্রমোশন ও আপগ্রেডেশন বোর্ডে আমি যোগ্যদের মূল্যায়ন করেছি। আমরা শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সেরা শিক্ষার্থী বাছাই করার চেষ্টা করি। কেননা ভালো শিক্ষক থেকেই ভালো শিক্ষার্থী তৈরি সম্ভব।’

উপাচার্য আরও বলেন, ‘আমি কোনো ধরনের দুর্নীতি অনিয়ম করি নি। আমি সকলের সঙ্গে মিলে মিশে কাজ করি। সবার সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। নিজ স্বার্থ হাসিল করতে না পেরে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করতে চাইছে তারা। এ সময় যারা এটা প্রকাশ করেছে তাদের নৈতিক ভিত দুর্বল বিধায় বেনামে শ্বেতপত্র প্রকাশ করেছে বলেও জানান উপাচার্য।’

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।

ওডি/এমএ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড