জাবি প্রতিনিধি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আলোচনা কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়েছে। তাই পয়লা অক্টোবরের মধ্যে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি এবং আসন্ন ভর্তি পরীক্ষায় উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকাল সাড়ে ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনে আলোচনা শুরু হয়। দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা শেষে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত ছাড়াই সন্ধ্যা ৭টায় এ আলোচনা শেষ হয়। আলোচনা শেষে আন্দোলনকারীরা সংবাদ সম্মেলন করে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, তিন দফা দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনের দুটি দাবি এর আগে মেনে নিলেও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের দাবিটি মেনে নিতে উপাচার্য গড়িমসি করছেন। তারা বলছেন- এ বিষয়ে আরও সময় চাইছেন উপাচার্য।
আন্দোলনকারীরা সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘উপাচার্যের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ওঠার পরে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার নৈতিক অধিকার তার নেই। আগামী ১ অক্টোবরের মধ্যে তাকে সম্মানের সহিত পদত্যাগ করতে হবে। নতুবা কঠোর কর্মসূচিতে যাওয়া হবে। এর মধ্যে নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি চলবে।’
অপরদিকে আসন্ন ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে সকল পরীক্ষা কেন্দ্রে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। যতক্ষণ পর্যন্ত উপাচার্য পদত্যাগ করবেন না ততক্ষণ পর্যন্ত উপাচার্যকে সর্বাত্মক প্রত্যাখ্যান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন তারা।
এ দিকে আগামীকাল ১৯ তারিখ ‘দুর্নীতির’ তদন্তের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
এ প্রসঙ্গে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম অনিক বলেন, ‘উপাচার্যের সঙ্গে আজকের আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি। তিনি তদন্তের বিষয়ে গড়িমসি করছেন। আরও সময় চাইছেন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে কথা হয়েছে তবে আলোচনা থেকে কোনো সিদ্ধান্তে আসা যায়নি।’
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির ও অপরিকল্পনার অভিযোগ এনে তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন চলা অবস্থায় চাপের মুখে গত ১২ সেপ্টেম্বর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বাধ্য হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আলোচনায় তোপের মুখে দুটি দাবি মেনে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে দুর্নীতির বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিটি অমীমাংসিত রেখেই শেষ হয় সেদিনের আলোচনা সভা। এছাড়া দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিতে বুধবার পর্যন্ত (তিন কার্য দিবস) সময় নেয় প্রশাসন। সে অনুযায়ী পূর্ব নির্ধারিত সময়ে আজ এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোচনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শেখ মো. মনজুরুল হক, রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ, প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন এবং নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) আহসান হাবিব অংশ নিয়েছিলেন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে মোবাইল ফোনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার অভিযোগ এনে সভা বর্জন করেছেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. আমির হোসেন।
আন্দোলনকারীদের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলন করা শিক্ষক পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক খবির উদ্দিন, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, রায়হান রাইন, এ এস এম আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, তারেক রেজা প্রমুখ।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম পাপ্পু, ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি নজির আমিন চৌধুরী জয়, কার্যকরী সদস্য রাকিবুল রনি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ দিদার, সাংগঠনিক সম্পাদক শোভন রহমান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) সভাপতি মাহাথির মোহাম্মদ, সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত দে এবং বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ জাবি শাখার মুখপাত্র খান মুনতাসির আরমান, আহ্বায়ক শাকিল উজ্জামান।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দকৃত টাকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে এক কোটি এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে এক কোটিসহ মোট ‘দুই কোটি টাকা দেওয়ার’ অভিযোগ উঠে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ অধিকতর উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা পুনর্বিন্যাস ও আবাসিক হল নির্মাণের স্থান পুনর্নির্ধারণে দাবি জানিয়ে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
ওডি/এমএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড