ইবি প্রতিনিধি
তিন দফা দাবি আদায়ে কর্মবিরতি আন্দোলন অব্যাহত রেখেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) কর্মকর্তা সমিতির একাংশ। এদিকে তাদের কর্মবিরতি আন্দোলনে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ। তাদের এই আন্দোলনকে বিলাসিতার আন্দোলন বলে উল্লেখ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
ইবি কর্মকর্তাদের আন্দোলন নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন সংবাদের লিংক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার হলে কমেন্টে ক্ষুব্ধ, হাস্যরসাত্মক ও তীব্র সমালোচনা মূলক মন্তব্য করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সাধারণ শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, ও শিক্ষকরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বেতন ভাতা বাড়ানো ও চাকরির বয়স সীমা বাড়ানোর দাবি দুটি ইতোমধ্যে মেনে নেওয়া হয়েছে, এবং এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের জন্য ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের ৩ দফা দাবির দুইটি মেনে নেওয়ার পরও তৃতীয় দাবিতে প্রশাসনকে আলোচনা করার সুযোগ না দিয়ে সরাসরি বাস্তবায়নে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়ায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষা বান্ধব বিরোধী তৃতীয় কর্ম ঘণ্টা কমিয়ে ৬ ঘণ্টা দাবির প্রতিবাদে গত দুইদিন যাবত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নানাভাবে প্রতিবাদী ঝড় তুলছেন ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
দৈনিক অধিকার পাঠকদের জন্য কিছু বাছাইকৃত মন্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো :
তাজনুর আহমেদ অন্তু নামে একজন ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করে বলেন: ‘ইবির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কথা বিবেচনা করে সপ্তাহে একদিন ক্যাম্পাস খোলা রাখা হোক! সেদিন তারা এসে তাদের পায়ের ধূলি দিয়ে যাবেন! ব্যাপারটা ভালো হবে না??’
এম ডি জহিরুল ইসলাম নামের একজন মন্তব্য করেন: ‘স্যার তাদের ২ টি দাবি মেনে নিয়েছে। এখন তারা চাচ্ছে ভার্সিটিকে স্কুল বানাতে। মানে ৮-২ করতে। দুপুরের মধ্যে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে এটা ভাবা যায়? একজন শিক্ষার্থী হয়েও আমি চাই ক্যাম্পাস ৪.৩০ পর্যন্তই চলুক।’
শিক্ষার্থীদের মন্তব্য (ছবি : সংগৃহীত)
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা তুলনা করে আশিক চন্দ্র দাস কিছুটা ক্ষোভ ও কিছুটা অনুনয় করেই মন্তব্য করেন: ‘আর কতো কি দেখবো। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে রাতেও ক্লাস হয় আর আমরা কি করছি। নিজেদের কথা চিন্তা করার আগে আমাদের কথা ভাবুন। আপনারা কিন্তু আমাদের জন্যই এই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরি করছেন। তাই কোন কিছু ভাবতে হলে আমাদের কথা আগে ভাবতে হবে আপনাদের।’
আবু শোহান নামে এক ইবির শিক্ষার্থী মন্তব্য করেন: ‘আহা!! স্যালারিটা যদি তারা এমনি এমনি পাইতো, তাহলে কতইনা ভাল হত!’
সাজ্জাদ হোসাইন নামের একজন মন্তব্য করবে: ‘ইবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সব নবাব, এই আলসে গুলার জন্যে ইবির দুর্নাম হয়।’
নীল আকাশ তার মন্তব্যে বলেন: ‘ওদের ফ্রি খাবার আর জল দেওয়া হোক, অমানুষ বেশির ভাগই।’
তাবরিস খান মন্তব্য করেন : ‘ইবি কর্মকর্তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি করার দরকার নেই। ওরা বাসায় গিয়ে গরু-ছাগলের দালালি করুক। বেতন বাড়াতে চায় আবার কর্ম ঘণ্টাও কমাতে চায় যেন মামা বাড়ির আবদার।’
শিহাব উদ্দীন নামে একজন বলেন, ‘তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা চাই আমাদের ক্যাম্পাস রাত আটটা পর্যন্ত ওপেন থাক...এটা সময়ের দাবি। কিছু স্বার্থান্বেষী কুচক্রী মহল আমাদের ক্যাম্পাস, কে ১০০ বছর পিছিয়ে দেয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করছে....’
শেখ রাসেল নামে ইবির এক কর্মকর্তা নিউজের মন্তব্যে লেখেন: ‘তাদের অফিসে আসার দরকার নাই। এমনিতেই মাসের শেষে বেতন-ভাতা দিয়ে দেবেন।’
এম এইচ রাব্বি বলেন: ‘সুখে থাকলে ভুতে কিলায়।’
আল্লারাখা আইদিদ নামে ফলিত রসায়ন অ্যান্ড কেমিক্যাল প্রকৌশল বিভাগের এক শিক্ষার্থী মন্তব্য করেন: ‘দুই একটারে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন সব ঠিক হয়ে যাবে।’
শোভন নামে একজন মন্তব্য করেন: ‘পাছায় চর্বি জমলে যা হয় আর কি!! চর্বি কমানোর একটি পথ হচ্ছে নতুন গাড়ির মতো নতুন কিছু সংযোজন। এগুলো ফিটনেস বিহীন ইঞ্জিন। ফিটনেস বিহীন ইঞ্জিন ইবি হতে দূরে রাখুন নাহলে অ্যাক্সিডেন্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে কারণ আমাদের তো যেতে হবে আন্তর্জাতিকের পথে। জীবনে বড় পুণ্য করে ইবিতে এসে এসব প্রেসিডেন্ট দেখে আমি ধন্য। বিঃদ্রঃ সত্যি কথা বলার জন্য দুঃখিত।’
তাদের আন্দোলনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে নূর আলম নামে ইবির এক শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগ নেতা মন্তব্য করেন: ‘দুইটা পর্যন্ত কেনো, ক্যাম্পাসে এসে হাজিরা দিয়ে চলে গেলেই তো হয়। এই সব অযৌক্তিক দাবির তীব্র বিরোধিতা করছি।’
আরিফুজ্জামান আরিফ বলেন: ‘বিশ্ববিদ্যালয় চাকরির পাশাপাশি তাদের ব্যবসার সমস্যা করায় নিন্দা জানাই তবে তাদের বলবো চাকরি ছেড়ে ব্যবসা আর অন্য আয়ের উৎসে মনোনিবেশ করতে।’
সুমন বিশ্বাস কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে তাদের নিয়মিত দায়িত্ব পালনের দাবি জানায়ে বলেন: অনেক কর্মকর্তা দুইটার পর থাকেন না, এ জন্য ভোগান্তিতে পড়েতে হয় আমাদের। তাদেরকে কঠোর ভাবে রুলস অ্যান্ড রেগুলেশনের মধ্যে নিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছি।’
স্বপ্নিল তওহিদ তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনে বলেন: এরা (কর্মকর্তারা) যে কত খারাপ প্রশাসন ভবনে কোন কাজে গেলেই বুঝতে পারা যায়।’
এ ব্যাপারে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের মতামতের চুম্বক অংশ দৈনিক অধিকার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল:
জাকির ওয়াহিদ নামে ইবির সাবেক এক শিক্ষার্থী তীব্র সমালোচনা করে মন্তব্য করেন: ‘লোকালিজম পরিহার জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়টি বাপ দাদার সম্পত্তি বানিয়েছে। এমন অফিস টাইম, অযৌক্তিক দাবি বাংলার কোন ভার্সিটিতে আছে? ঝাটিয়ে বিদায় করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি, কর্ম পাগল মানুষগুলোর পাশে দাড়াতে। নয়তো শিক্ষার্থীদের উচিত এই অযৌক্তিক দাবির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। কারণ কার্যত শিক্ষার্থীদের অধিকারই এরা ধ্বংস করতে চাইছে। আমি একজন প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে এমন অযৌক্তিক দাবির তীব্র নিন্দা জানাই।’
বর্তমানে রুপালি ব্যাংকে কর্মরত কালাম আজাদ নামে ইবির সাবেক এক শিক্ষার্থী মন্তব্য করেন: ‘কর্মকর্তারা শিক্ষকের সমমান পাওয়া শিক্ষকতার অপমান, চাকুরি ৬২ বছর কেন হবে? এটা স্পেশালাইজড কোন জব না, অন্যান্য সরকারি চাকরিতে যে বিধিমালা থাকবে শিক্ষকতা বাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য চাকরি একইরকম হওয়া উচিত। তবে এসবের পিছনে অনেক কথা অনেক ইতিহাস আছে। সময়সূচির ব্যাপারে ছাত্রছাত্রী একপক্ষ শিক্ষক, কর্মকর্তারা আরেক পক্ষ।’
জোবায়ের হোসাইন মন্তব্যে লেখেন: আমি তাদের বিনা ডিউটিতে বেতনের দাবি জানাচ্ছি। তাদের যে কায়িক পরিশ্রম করা সত্যি দেখা যায়, তাদের স্থায়ী অফিস আম বাগানে করা উচিৎ। তাদের সেবা শুশ্রূষার জন্য কিছু কাজের লোক নিয়োগ দিক। তাদের সময় কাটানোর জন্য একটা ভিআইপি পার্ক করে দিক। তাদের প্রত্যেককে একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি দেওয়া হোক। তাদের জন্য একটা নাইট ক্লাবের ব্যবস্থা করা হোক। প্রত্যেককে একটা পাজেরো গাড়ি দেওয়া হোক। প্রতি মাসে সপরিবারে তাদের ভ্রমণের ব্যবস্থা করা হোক।’
সাব্বির মাহমুদ ক্ষুব্ধ হয়ে মন্তব্য করেন: ‘সময়সূচি ১-২ টা করা হোক, তাও সেটা লাঞ্চ আওয়ার হয় যেনো।’
শফিক শোভন তীব্র ক্ষোভ নিয়ে মন্তব্য করেন: ‘মামাবাড়ির আবদার,, ঠিকমতন দায়িত্ব পালন করেনা তেমন কেউই,, আর আমরা কাজের জন্য গেলেতো মনে হয় ভিক্ষা চাইতে গেছি তাদের কাছে, মূল কথা হচ্ছে, যাদের পোষাচ্ছে না, তারা চাকরি ছেড়ে যে কাজে পোষায় সেই কাজে যোগ দিক..’
আবু সোহান নামের একজন মন্তব্য করেন, ‘৮ টা থেকে ২ টা এই দাবিটা ছাত্রদের জন্য ক্ষতিকর।। এবং আমার জানা মতে তারা দুই দিন ছুটির বদলে শুধু মাত্র শুক্রবার ছুটি চায়, এটাও তিন নম্বর দাবির অন্তর্ভুক্ত।। এইটাও ক্ষতিকর ছাত্রদের জন্য। সকাল ৯ টা থেকে ৪ টা এবং সপ্তাহে দুই দিন ছুটি ছাত্রদের সেশনজট কমাতে সাহায্য করেছে।
আল মামুন: ‘সপ্তাহে ১ দিন করা হোক এবং তাও ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত কারণ বাড়িতে যেয়ে বউয়ের হতে দুপুরে খাওয়া লাগবে।’
উল্লেখ্য, কর্মকর্তাদের এই আন্দোলনের পক্ষে কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি, তবে কয়েকজন আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের ব্যাপারে মন্তব্য করেছেন।
ওডি/এমএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড