• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ঝালকাঠি সরকারি কলেজ

বৃষ্টি হলেই ফ্লোরে পানি; বাড়ছে সাপের উপদ্রব

  হাসান আরেফিন, ঝালকাঠি প্রতিনিধি

২৭ আগস্ট ২০১৯, ১১:৫৬
কলেজ
ঝালকাঠি সরকারি কলেজ (ছবি : দৈনিক অধিকার)

ব্যবহারের অনুপযোগী ও ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ঝালকাঠি সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে অধ্যক্ষের বাসভবন এবং বিজ্ঞান ভবন। এ নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষাপ্রকৌশল অধিদপ্তরে বার বার চিঠি দিলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না তারা। অথচ বাসভবন বাবদ অধ্যক্ষের বেতন থেকে প্রতিমাসে প্রায় ২৫ হাজার টাকা ভাড়া কেটে নেওয়া হচ্ছে।

এ দিকে ২০ বছর পূর্বে নির্মিত কলেজের দুইটি বিজ্ঞান ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় একটির ব্যবহার অনেক আগ থেকেই বাদ দেওয়া হয়েছে। অপরটিতে ঝুঁকি আতঙ্ক নিয়ে পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

কলেজ সূত্রে জানা গেছে, সুগন্ধা নদীর তীরে ১৯৬৪ সালে জমিদারের পুরনো পরিত্যক্ত ভবনে ঝালকাঠি কলেজ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডা. এ জামানসহ কয়েকজনে মিলে প্রতিষ্ঠা করেন। সুগন্ধার ভাঙনের ফলে ১৯৭২ সালে কলেজটি স্থানান্তর করে তৎকালীন শহরের উত্তর দিকে বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের চাঁদকাঠিতে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৩ দশমিক ৫ একর জমিতে কলেজ ক্যাম্পাস নির্মাণ করা হয়।

১৯৮০ সালের ১ মার্চ কলেজটি জাতীয়করণ হয়ে ঝালকাঠি সরকারি কলেজ নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৮১ সালে জমিদারের পুরনো ভবন ছেড়ে নতুন ক্যাম্পাসে শিখন-শিখনীয় কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে কলেজটি ২০ দশমিক ৪৫ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। ১৯৯৩ সালে কলেজ অধ্যক্ষের বসবাসের জন্য নির্মাণ করা হয় ডরমিটরি। ১৯৯৬ সালে কলেজের প্রশাসনিক মূল ভবনের উত্তর পাশে নির্মাণ করা হয় দ্বিতল বিজ্ঞান ভবন ও দ্বিতল অ্যাকাডেমিক ভবন।

১৯৯৩ সালে কলেজ অধ্যক্ষের জন্য নির্মিত ডরমিটরি ভবনের কক্ষগুলো অত্যন্ত সরু এবং পাশের চলাচলের রাস্তার চেয়ে নিচু হওয়ায় তা শুরু থেকেই ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে। এক অধ্যক্ষ (অধ্যাপক রুস্তম আলী) দুই বছর ছিলেন, তবে শিক্ষাপ্রকৌশল অধিদপ্তরের সঙ্গে সংস্কার করা না হলে বাড়ি ভাড়া কাটতে পারবে না বলে তিনি চিঠি দিয়েছিলেন। এ কারণে ওই অধ্যক্ষের কাছ থেকে ডরমিটরিতে বসবাসের জন্য বাড়ি ভাড়া কর্তন করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রত্যেক অধ্যক্ষের বেতন থেকে ডরমিটরি ভাড়া বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা কেটে নেওয়া হয়। অধ্যক্ষের বাসভবন ব্যবহারের এতোটাই অনুপযোগী যে, নির্মাণের পর থেকে সঠিকভাবে কোনো অধ্যক্ষই ওই ডরমিটরিতে বসবাস করতে পারেননি। বর্তমানে ওই ডরমিটরি ভবনের ফ্লোর নিচু হওয়ায় একটু বৃষ্টি হলেই ফ্লোর তলিয়ে যায়। ভবনের পাশেই পুকুর থাকায় দিনের পর দিন ভবনটিতে বাড়ছে সাপের উপদ্রব। সেখানে অনুপযোগী পরিবেশের কারণে কোনো কর্মচারীও থাকতে না চাওয়ায় অব্যবহৃত এবং পরিত্যক্ত অবস্থায়ই রয়েছে। কিন্তু কলেজের বর্তমান অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আনছার উদ্দিনের মাসিক বেতন থেকে প্রায় ২৫ হাজার টাকা ডরমিটরি ভাড়া বাবদ কেটে নেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে শিক্ষাপ্রকৌশল অধিদপ্তরে একাধিক চিঠি দেওয়া হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি অধিদপ্তর।

১৯৯৬ সালে দ্বিতল অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের ২০ বছর পরেই তার আস্তর খসে পড়তে থাকে। মরিচাধরা রড বের হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে পাঠদান ও পাঠ গ্রহণ কার্যক্রম পরিচালিত হয়। একপর্যায়ে জীবনহানির শঙ্কা দেখা দিলে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভবনটিতে সকল কার্যক্রম স্থগিত করে দেন। একই সময় নির্মিত বিজ্ঞান ভবনও বর্তমানে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। জোড়াতালি দিয়ে সংস্কার করা হলেও আস্তর আবার খসে খসে পড়তে শুরু করেছে।

সোমবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের পেছনে পুকুর থাকায় ভবনটি কিছুটা পেছনের দিকে হেলে পড়ছে। এমতাবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পাঠ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ছাদ থেকে পানি চুষে চুষে নিচে পড়ে কলেজের আসবাবপত্র, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ও মূল্যবান কাগজপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আনছার উদ্দিন জানান, একইসময়ে নির্মিত দ্বিতল বিজ্ঞান ও দ্বিতল অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মান করা হলেও অ্যাকাডেমিক ভবন অনেক আগেই ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেটি ব্যবহার বন্ধ রাখা হয়েছে। বিজ্ঞান ভবনের অবস্থাও বর্তমানে অনেক নাজুক। সেখানে ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা পাঠদান ও পাঠগ্রহণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শিক্ষাপ্রকৌশল অধিদপ্তরকে একাধিকবার চিঠি দিয়ে অধ্যক্ষ ডরমিটরি ভবন এবং অ্যাকাডেমিক ও বিজ্ঞান ভবন সম্পর্কে অবহিত করা হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

ওডি/আরএআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড