ইবি প্রতিনিধি
৫৩৭ কোটির টাকার টেন্ডারকে জিম্মি করাকে কেন্দ্র করে শোকের মাসে রাতভর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে বিদ্রোহী ও পদ বঞ্চিত গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
রবিবার (২৫ আগস্ট) দিবাগত সাড়ে ১০ টা থেকে শিক্ষার্থীদের সকল আবাসিক হলে থেমে থেমে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ‘বিদ্রোহী গ্রুপের এক কর্মী বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকের ভয়ে কুষ্টিয়া থাকেন এমন ধরনের স্ট্যাটাস দেয়। ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী যেন বর্তমান কমিটিতে যোগদান না করেন সেই বিষয়ে বিভিন্ন আবাসিক হলে হলে কর্মীদের হুমকি ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন বিদ্রোহী গ্রুপের কর্মীরা। এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবসহ প্রায় ৩০/৩৫ জন নেতাকর্মীসহ সাদ্দাম হোসেন আবাসিক হলের ২০৫ নং কক্ষে গিয়ে বিদ্রোহী গ্রুপের কর্মী মোশাররফ হোসেন নীলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ সময় সাধারণ সম্পাদক রাকিবসহ বেশ কিছু নেতাকর্মীরা বিদ্রোহী গ্রুপের কর্মীদের শাসিয়ে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সকল সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড কেন্দ্রের নিয়ম অনুযায়ী আমাদের সিদ্ধান্তক্রমে পরিচালিত হবে। অন্যকোনো বহিরাগত ও বিদ্রোহীদের ইশারায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কার্যক্রম পরিচালিত হতে পারেন। বিদ্রোহী মোশাররফ হোসেন নীল তাদের কথায় সায় না দিলে একপর্যায়ে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। মূহুর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু আবাসিক হল থেকে বিদ্রোহী গ্রুপের নেতাকর্মীরা দেশীয় অস্ত্র লাঠিসোটা নিয়ে সাধারণ সম্পাদকের গ্রুপে হামলা চালালে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
সংঘর্ষ চলাকালে উভয় গ্রুপের নেতাকর্মীদের হাতে লোহার রড, রামদা, জিআই পাইপ, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নেয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে ও ককটেল বিস্ফোরিত হয়। থেমে থেমে রাতভর সংঘর্ষের পর রাত প্রায় ২টার সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এতে ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ৫৩৭ কোটি টাকার টেন্ডারকে কেন্দ্র করেই মূলত হঠাৎ একটি গ্রুপ বেশ কয়েক দিন ধরে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির পাঁয়তারা করছেন বলে প্রগতিশীল শিক্ষকরা অভিযোগ করে।
এ ঘটনায় দুই গ্রুপের বেশ কয়েকজন কর্মী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুই জনকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। বাকিদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে ক্যাম্পাসে দুই গ্রুপের মাঝে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। ওই ঘটনায় পুরো ক্যাম্পাসে আতঙ্ক বিরাজ করছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের গ্রুপের কর্মীরা দলীয় টেন্টে অবস্থান করছেন।
পরিস্থিতি সাপেক্ষে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের গ্রুপের নেতা-কর্মীদের মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করে এবং নিজদের বিভিন্ন সেভ জোনে লুকিয়ে রাখে।
এ দিকে আজ সকালেও বিভিন্ন হলের সামনে তারা অবস্থান নেওয়াতে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কর্মীদের ভেতর আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পরে সকাল ১০টার দিকে লালন শাহ ও সাদ্দাম হোসেন হল থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা দলীয় ট্রেন্টে এসে অবস্থান নেয়।
রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. পরেশ চন্দ্র বর্মণ ও সহকারী প্রক্টর এস. এম নাসিমুজ্জামান ঘটনাস্থলে গিয়ে ছাত্রলীগের বিদ্রোহী ও পদ বঞ্চিত গ্রুপের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে পরিবেশ কিছুটা স্বাভাবিক করে দেয়।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত ও বহিরাগতদের নিয়ে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করতে বিদ্রোহীরা বার বার হামলার পরিকল্পনা করে যাচ্ছে। আমি বিদ্রোহী গ্রুপের কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কার্যক্রমে অছাত্র ও বহিরাগতদের নিয়ে কথা বললে হঠাতই অতর্কিত হামলা শুরু হয়।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি এস. এম রবিউল ইসলাম পলাশ বলেন, শোকের মাসে তারা যে এইভাবে হামলা চালিয়েছে সেটা খুবই দুঃখজনক। তারা ছাত্রলীগ দাবি করছে তাদের মধ্য অনেকে বহিরাগত, মাদকাসক্ত রয়েছে। আমরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে এই ঘটনার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ওডি/আরএআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড