• বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ক্যানসারে আক্রান্ত তিতুমীরের সাদিয়া; প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চাইলো পরিবার

  মামুন সোহাগ, জিটিসি প্রতিনিধি

১৮ আগস্ট ২০১৯, ১১:৫৫
তিতুমীর কলেজ
হাসপাতালের বিছানায় ক্যানসারে আক্রান্ত সাদিয়া (ছবি : দৈনিক অধিকার)

সাদিয়া স্বর্ণা। রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের রসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বিভাগের অন্য আট দশ জন মেয়ের মতো তার জীবনেও ছিল হাসিমাখা অহরহ গল্প, ছিল ‘বাঁধনে’ কাজ করে অসংখ্য মানুষের রক্ত জোগাড় করে বেঁচে ফেরানোর সুখশান্তি, ছিল পরিবার পরিজনের সঙ্গে কাটাতে পারা সুখকর মুহূর্ত, ছিল বন্ধুদের সঙ্গে খুনসুটিরত সময়কাল। এর বাইরেও মানুষের একটা দুঃখ থাকে, রোগাক্রান্তও হয় অনেকেই, তবে সেটা বেশিরভাগই ক্ষণস্থায়ী। কিন্তু এই জীবন সাদিয়ার অনুকূলে থাকেনি। জীবন তাকে আপন করে নিতে ভ্রুক্ষেপ করেছে।

সাদিয়া অসহনীয় ব্যথা ও দুইটি ক্যানসারে যন্ত্রণায় কিছুক্ষণ পরপর ছটফট করছে। সাদিয়ার বাঁচার আকুতি ও বাবা মায়ের বুকফাটা আর্তচিৎকারে ভারী হচ্ছে রাজধানীর মিরপুরের আলোক হেলথ কেয়ারের পরিবেশ। চিকিৎসক বলছেন, কোলন ও ওভারি ক্যানসারে দুইটির চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এই মুহূর্তে অর্থ যোগানের বিকল্প নেই। শিগগিরই তিনটি কেমো থেরাপি বিদেশ থেকে আনতে হবে। যার একেকটির ব্যয় পড়বে ছয় লাখ টাকা।

কিছুদিন আগেও বন্ধুদের নিয়ে মরণব্যাধি ‘ক্যানসার সচেতনতা ও স্বেচ্ছায় রক্তদান’ কর্মসূচি করেছিলেন তিনি। নিজেও একাধিকবার মুমূর্ষু রোগীকে রক্ত দিয়েছেন। ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত ছিল স্বেচ্ছায় রক্তদাতের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাঁধনের কার্যক্রমে। কিন্তু সেই শিক্ষার্থী সাদিয়া সুলতানাই আজ মরণব্যাধি ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে।

গেল ২০১৮ সালে মে মাসে পরীক্ষার কেন্দ্রে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে উত্তরা মহিলা মেডিকেল ও পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘদিন সেখানে চিকিৎসা নেওয়া হয়। পরে অবস্থার আরও অবনতি হলে উত্তরার আর এম সি হাসপাতালে জরুরি অপারেশন করা হয়। অপারেশনে কোলন ক্যানসার ধরা পড়ে। মাঝে কিছুদিন ভালোও ছিল সাদিয়া। নিয়মিত নিজের ক্লাস ও টিউশনিও করেছে। কিন্তু ফের রমজানের আগে আবার ব্যথা শুরু হলে তাকে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আছাদুজ্জামান বিদ্যুতের তত্ত্বাবধানে এখন আলোক হাসপাতালে সাদিয়ার চিকিৎসা চলছে।

সাদিয়ার মা কামরুন নাহার জানান, আটটি কেমোথেরাপির পর আরও একটি অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পর ডাক্তার বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখে ক্যানসার সমস্ত পেটে ও জরায়ুতে ছড়িয়ে পড়ছে। এর মাঝে আমরা কোলকাতার টাটা মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাই। কিন্তু চিকিৎসা ব্যয় অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় আবার দেশে চলে আসি। এখন মেয়ের পা ফুলে মোটা হয়ে গেছে। পেটও ফুলে গেছে। ব্যথায় অস্থির হয়ে গেছে। পানি ছাড়া কিছুই খেতে পারছে না। আমার মেয়েটা সবসময় মানুষের সেবায় কাজ করেছে। মানা করলেও অন্যকে রক্ত দিত।

শুক্রবার হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে ফুপিয়ে কাঁদছেন সাদিয়া বাবা মঈন উদ্দিন হেলালী। বাসা রাজধানীর বিমানবন্দরের কাওলা এলাকায়। সেকানেই একটি দোকান আছে তার। তিনি বলেন, আল্লাহ্ যাতে কোনো মেয়েকে এমন রোগ না দেয়। মেয়ের কষ্ট দেখে আর থাকতে পারছি না। কয়েকদিন আগে আবারও দুইটি টেস্ট করিয়েছি। প্রায় এক লাখ টাকা লেগেছে। এ পর্যন্ত মেয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিজের ভিটে মাটিটাও বিক্রি করে দিয়েছি। আর কোলাতে পারছি না। বাধ্য মেয়ের জীবনের জন্য সবার দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। ডাক্তাররা আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু এত ব্যয়বহুল চিকিৎসার ভারে অসহায় হয়ে পড়ছি। এখন হাসপাতালে প্রতিদিনের চিকিৎসা ব্যয় ও সিট ভাড়াসহ যাবতীয় খরচ কোনোভাবেই মেটাতে পারছি না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছেও বিনিত আবেদন, উনি যদি আমার মেয়েটার দিকে তাকাতেন!

আক্রান্ত সাদিয়া সুলতানার সহপাঠী মারজিয়া আফরোজ মিলি জানান, তারা কলেজের বন্ধুবান্ধব মিলে প্রায় লাখখানেক টাকা ইতোমধ্যে জোগাড় করেছে। যা দিয়ে চিকিৎসার খরচ চলছে। সহপাঠীরা সাধ্য মতো চেষ্টা করছে।

কলেজ শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ সাদিয়াকে হসপিটালে দেখতে এসে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, সাদিয়া যখন বলে, সাব্বির ভাইয়া আমি চলে গেলে আপনারা আমার আব্বুকে দেখে রাইখেন! তখন তার বাবা বুক ফাটা আর্তনাদ করে। আমিও আর সইতে পারিনি। ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। কী যে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে আমাদের বোন সাদিয়া।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিছুর রহমান নাঈম। তার ওয়ার্ডেই দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছে সাদিয়ার পরিবার। কাউন্সিলর নিজেও আর্থিক সহায়তার জন্য সকলের কাছে আর্জি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সবার আন্তরিক সহযোগিতায় মেধাবী এই শিক্ষার্থীর চিকিৎসা ব্যয় মেটানো সম্ভব। আমাদের একটু সহযোগিতায় ক্যানসারকে জয় করে আবারও প্রাণোচ্ছ্বল হয়ে উঠতে পারে সাদিয়া।

ক্যানসারে আক্রান্ত সাদিয়া সুলতানাকে আর্থিক সহায়তায় (০১৯৭৭১০৮৩৮৩) বিকাশ (এজেন্ট)। ব্যাংক হিসাব কামরুন নাহার (সাদিয়ার মা)-আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক (খিলক্ষেত শাখা) (৯৯০১১৮০৫৯৯৫৬৭)। মোবাইল: (০১৬৮৮৫১৮৩৪৫)।

ওডি/আরএআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড